Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাটহাজারীতে পশুর শোরুম-অস্থায়ী দোকান

| প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) থেকে আসলাম পারভেজ: হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কোরবানির পশুর শোরুম ও দোকার করার হিড়িক পড়েছে। আসন্ন পবিত্র কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এই ব্যবসায় নেমেছে একটি চক্র। এতে করে সরকারের তালিকাভুক্ত সাপ্তাহিক গবাদি পশুর বাজারে মন্দাভাব দেখা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, এই উপজেলায় হাটহাজারী পৌরসভা হাটহাজারী বাজার ও কাটিরহাট বাজার সরকারি তালিকাভূক্ত পশুর বাজার ছিল এক সময়। গবাদি পশুর বাজার বসানোর জন্য হাটহাজারী বাজারে বিশাল জায়গাও ছিল। এ জায়গায় আশির দশকে উপজেলা মার্কেট নির্মিত হলে বাজারটি অন্যত্র সড়িয়ে নেয়া হয়। নব্বই এর দশকে সরানো এই বাজারে জায়গা ও সরকার একটি প্রতিষ্ঠানকে স্থায়ীভাবে ইজারা দিয়ে দেয়। এ প্রতিষ্ঠান সরকার থেকে জায়গা ইজারা নিয়ে সেখানে বহুতল ভবন নির্মান করলে গবাদি পশুর বাজার বসাতে সমস্যা দেখা দেয়। সেই থেকে হাটহাজারীর বৃহৎ গবাদি পশুর বাজারে ভাটা দেখা দেয়। পরে স্টেশন সড়ক ও রেল কর্তৃপক্ষের খালি জায়গায় গবাদি পশুর বাজার বসানো হলে তার পরিসর ও জৌলস অনেকটা কমে যায়। তাছাড়া উপজেলার অন্য গবাদি পশুর তালিকাভূক্ত বাজার কাটিরহাট বাজারের পরিসরও ক্রমে ছোট হয়ে আসে। তখন পাশবর্তী উপজেলার নাজিরহাটের পশুর বাজার জমে উঠে। উপজেলার আওতাধীন সরকারি তালিকাভূক্ত দুইটি গবাদি পশুর বাজারের বার্ষিক ইজারা ফি ছিল অন্যান্য বাজার থেকে অনেক বেশী। পরে এই দুইটি গবাদি পশুর বাজারের পরিসর ছোট হয়ে যাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পবিত্র কুরবানির ঈদ উপলক্ষে কোন বিশেষ ব্যাক্তি অথবা সংগঠন কুরবানির পশু ক্রয় বিক্রয়ের সুবিধার্থে মৌসুমী গবাদি পশুর বাজারের আয়োজন করেন। এসব মৌসুমী বাজারের সংবাদ প্রশাসন জ্ঞাত হয়ে বাজারের বার্ষিক ইজারা ফি বৃদ্ধি করে দেয়। এতে সরকারের রাজস্ব কিছুটা বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে গবাদি পশুর ব্যবসা লাভজনক দেখে উপজেলা বিভিন্ন স্থানে অনেকে এই ব্যবসার দিকে ঝুকে পড়ে। উত্তর বঙ্গ থেকে ট্রাকে করে গবাদি পশু এনে কুরবানির সময় বিভিন্ন মৌসুমী বাজারে গবাদি পশু বিক্রি করতে থাকে। দেশের অন্যান্য স্থানের মত এই উপজেলায় ও গরুর মাংসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদা পূরনের জন্য অনেকে বিভিন্ন হাট বাজারে গরুর মাংসের দোকান খুলে বসে। মাংসের দোকানে এক সময় গবাদি পশু এলাকা থেকে সরবরাহ করা হত। তখন গ্রামের প্রত্যেক গৃহস্থ বাড়িতে গবাদি পশু পালনের ব্যাপক প্রবনতা ছিল। গৃহস্থ পরিবার গুলো গবাদি পশু পালন করে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করত। যা পরিবারের বিভিন্ন প্রয়োজনে কাজে লাগত। কিন্তু এখন এই উপজেলার গৃহস্থ পরিবার গুলো গবাদি পশু পালন এক প্রকার ছেড়ে দিয়েছে। পশু খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি, গো চারন ভূমি বিলুপ্ত ও খড় সংকটের কারনে। তাছাড় গবাদি পশু পালন করা খুবই পরিশ্রমের কাজ ও কষ্ট সাধ্য এবং লোকবলেও প্রয়োজন। তাছাড়া এক সময় গবাদি পশু পালন যাদের একমাত্র পেশা ছিল এদের অনেকেই মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। আর বর্তমান প্রজম্মের বউ ঝিরা গবাদি পশুর কাজ ও পরিচর্যা করতে একেবারে অনাগ্রহী। অনেকে কর্ম তাগিদে আপন বসত বাড়ি ছেড়ে বাসা বাড়িতে অবস্থান করার কারনে ও গবাদি পশু লালন পালন গ্রামে কমে গেছে। গবাদি পশুর চারন ভূমি উপজেলার পশ্চিমের পাহাড়ি অঞ্চল। সংরক্ষিত বনভূমিতে এক সময় গবাদি পশু চড়ানো হত। এখন এই সব সংরক্ষিত বনাঞ্চল কতৃপক্ষের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার জন্য অবৈধ দখলে চলে গেছে। বন বিভাগের দূর্নীতিবাজদের সহযোগীতায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় গো চারনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে কারো কারো আগ্রহ থাকলেও এই সব নানা কারনে গবাদি পশুর পালন অনেকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
একটি সূত্র জানায়, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেনীর লোক গবাদি পশুর ব্যবসার দিকে ঝুকে পড়েছে। তারা সিন্ডিকেট করে দেশের উত্তরবঙ্গ থেকে ট্রাকে করে গবাদি পশু এনে হাটবাজারে বিক্রির পরিবর্তে নিজ নিজ এলাকায় গবাদি পশুর শোরুম ও দোকান করে বসেছে। বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা এই সব গবাদি পশুর দোকার ও শোরুমের কারনে হাটবাজারে গবাদি পশুর বেচা বিক্রি বলতে গেলে বন্ধ হয়ে গেছে। স্থান বিশেষে কোন গৃহস্থ পরিবার শখের বশে গবাদি পশু প্রতিপালন করলেও তা প্রয়োজনের সময় বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়ে গবাদি পশুর দোকানী সিন্ডিকেটের কারনে। এই সব গবাদি পশু বিক্রি চক্রের স্থানে স্থানে দোকান ও শোরুমের কারনে হাটবাজারে সরকারি রাজস্ব আয় আশংকা জনক হারে কমে গেছে। তাছাড়া গবাদি পশু বহনকারী ভারী ট্রাকের কারনে উপজেলার আওতাধীন সড়ক ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতিসাধনও হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ