Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুটির একটি বিকল, আরেকটি লক্কড়ঝক্কড়

রূপগঞ্জে ফেরিতে যাত্রীদের দুর্ভোগ : ৮ কি.মি. যানজট

| প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৪৫ এএম


রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা ঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ফেরি যোগে চলাচলরত যানবাহন ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার দিনব্যপী ফেরির উভয় পাশের সড়কে দীর্ঘ আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ফেরি দিয়েই পারাপার হচ্ছে ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন। দুটি ফেরির মধ্যে একটি পুরোই বিকল ও আরেকটি লক্করঝক্কর অবস্থায় চলছে মাসের পর মাস। প্রায়ই সময়ই চলাচলরত ফেরিটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ছে। এসময় ঘন্টার পর ঘন্টা আটকা পড়ে থাকতে হয় যাত্রী সাধারনের। প্রতিদিন দেশের পুর্বাঞ্চলের প্রায় ১৭টি জেলা থেকে আগত যাত্রীরা শীতলক্ষ্যা নদীর এ ফেরি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা। যাত্রী ও স্থানীয় সুত্র জানায়, সকাল ৮টায় ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। দুটি ফেরির মধ্যে একটি ফেরি বিকল থাকায় ফেরির দুই পাশে যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করে। দিন ব্যপী প্রায় আট কিলোমিচার এলাকাজুড়ে যানজট লেগে যায়। এছাড়া দুই পারের রাস্তা ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওইসব গর্তে পড়ে যানবাহন গুলো আটকা পড়ে যাচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তেমন কোন ভুমিকা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন যানবাহন চালক ও স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্রগ্রাম সড়ক যোগে আসা প্রায় ১৭টি জেলার সাধারন যাত্রীরা মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ফেরি যোগে পারাপার হয়ে এয়ারপোর্টসহ রাজধানীতে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে কুমিল্লা, দাউদকান্দি, চাঁদপুর, মতলব, নোয়াখালী, ফেনি, চট্রগাম, হবিগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, মৌলভিবাজার, আশুগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ ১৭ জেলার যাত্রীরা এ পথ ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া ভুলতা ফ্লাইওভারের কাজ চলাচলের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে না গিয়ে ফেরি পথ ব্যবহার করছে অনেক যানবাহন। অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীতে প্রবেশ পথ হিসেবে যাত্রীসাধারন শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ফেরি যোগে চলাচল করে থাকেন। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে এ পথ দিয়ে। এ কারনেই সড়ক ও জনপদ বিভাগ মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ওই ফেরি প্রতি বছর ইজারা দিয়ে থাকেন বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। ফেরি দুটির রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে থাকেন সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এ বছর ৫৭ লাখ ৭২ হাজার ৫’শ টাকায় ইজারা নিয়েছেন সুমন এন্টার প্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ইজারা নিয়েও বিপাকে পড়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। বার বার সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বিকল হওয়া ফেরির ব্যপারে বার বার অবহিত করলেও লোক দেখানো মেরামত করে দিচ্ছেন কিন্তু এক দিন পর আবারও সেই আগের অবস্থাই। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পারের রাস্তাটি প্রসস্থ্য অনেকটা কম। প্রসস্থ্য কম থাকায় রাস্তাটি দিয়ে বড় ধরনের যানবাহন আসতে পারেনা।
ফেরি দিয়ে এসব যানবাহন সময় মতো পারাপার করতে না পারায় বেশির ভাগ সময়ই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। নদীর দুই পারের ফেরি লাগানো গ্যাংঅয়ে ও পল্টুনের বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ষ্টীলের সিট গুলো খসে খসে পড়ছে। পল্টুনের তলায় পানি প্রবেশ করে ডুবে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সেলু মেশিন দিয়ে সেচেও পানি কমাতে পারছেননা। এছাড়া বর্ষার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তার সঙ্গে লাগানো গ্যাংঅয়ে বেশির ভাগ অংশ টুকু ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া অংশ ও ভাঙ্গা স্থান দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহন গুলোর। ফেরির উপরের পিচ উঠে গিয়ে স্টীলের সিট বের হয়ে গেছে। এতে যানবাহন গুলো ¯িøপ করে। দুটি ফেরির মধ্যে একটি ফেরি প্রায় ২৮ বছর আগের, অপরটিও একই সময়ের। ইঞ্জিন ও ফেরির বডি মেরামত করে এখন পর্যন্ত চালানো হচ্ছে ওই দুটি ফেরি। দুটি ফেরির মধ্যে একটি ফেরি সব সময় নষ্ট বা বিকল অবস্থায় থাকে। ওই ফেরিতে ইঞ্জিন পাল্টানো হলেও কোন কাজে আসছেনা। যানবাহন নিয়ে ফেরি ছাড়লে সময় মতো ওই পার না পৌছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রবল ¯্রােতে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। পড়ে অপর ফেরির সহযোগিতা নিয়ে টেনে আনতে হয়।
অপর যেই ফেরিটি রয়েছে, সেটির তলার অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। বেশ কয়েক স্থান দিয়ে পানি ঢুকে পড়ে। অতিরিক্ত পানি ঢুকে ফেরি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা হয়ে যায়। যাত্রীরা সব সময় আতঙ্কে থাকেন। এসব বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্তৃপক্ষ গড়িমশি করছে বলে অভিযোগ যানবাহন চালকদের। ভোগান্তির শিকার বেশ কয়েকজন যানবাহন চালক বলেন, সরকারী নিয়মানুযায়ী ফেরির ভাড়া দিচ্ছি, আমরা ভোগান্তির শিকার হবো কেন ? লেখক, কলামিস্ট ও সাংবাদিক লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, শিল্পখ্যাত এলাকার গুরুত্বপূর্ণ এ ফেরিঘাটের এ অবস্থা মোটেও কাম্য নয়। জনগণের দূর্ভোগের চিন্তা করে দ্রæত সমস্যা সমাধান করা প্রয়োজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, ফেরির সমস্যার বিষয়ে আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছেন শীগ্রই একটি নতুন ফেরি দেয়া হবে। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদের ম্যাকানিকেল বিভাগের (ফেরি) নির্বাহী প্রকৌশলী সুভাস বাবু বলেন, সমস্যা গুলোর ব্যপারে কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। অনেকটা সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। এছাড়া নতুন ফেরি দেয়ার ব্যপারে কার্যক্রম চলছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ