Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনার জব্দ কোকেন চালানে আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট জড়িত

তদন্তভার পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে র‌্যাবের আবেদন

| প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম


খুলনা ব্যুরো : খুলনায় কোকেন বিকিকিনি’র সাথে আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট জড়িত এটা নিশ্চিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ১১ আগস্ট নগরীর ময়লাপোতা মোড় ও রূপসার রাজাপুর এলাকা থেকে সোয়া দুই কেজি কোকেনসহ ওই চক্রের ছয়জন গ্রেফতারের পর তদন্তে এমনি তথ্য উঠে আসছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রথমবারের কোকেনের এতো বড় চালান জব্দের পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। তাই মামলাটি তদন্তভার পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেছে র‌্যাব-৬। এদিকে, পাঁচদিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ শুক্রবার জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে গ্রেফতার হওয়া ৬ জনকে। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি তদন্ত কর্মকর্তার।
র‌্যাব-৬ কমান্ডিং অফিসার (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনায় ডিএডি মোঃ রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে কোকেন চোরাচালানের গ্রেফতারকৃতসহ অজ্ঞাতদের আসামী করে রূপসা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পুলিশ তদন্ত করছে। র‌্যাব-৬ তদন্তভার চেয়ে অভিযানের শেষদিন ১২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে (নিয়ম অনুসারে) লিখিত আবেদন করেছি। র‌্যাবের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে; তদন্তে পুলিশকেও সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তাদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রয়েছে তদন্তের স্বার্থে। ওই চোরাকারবারীদের সাথে আন্তর্জাতিক মাদক সিন্ডিকেটের সম্পর্ক রয়েছে; এটা নিশ্চিত বলে জানান তিনি।
র‌্যাবের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, মামলার পর পাঁচদিন পুলিশী রিমান্ডে নেয়া হলেও তদন্তের অগ্রগতি মন্থর; দুর্বল। আন্তর্জাতিক মাদক সিন্ডিকেটের শিকড় উন্মোচনের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও কৌশলের অভাব রয়েছে তাদের। স্পর্শকাতর এ মামলাটি তদন্তে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। ব্যয়বহুল মাদক কোকেন সেবন ও কেনাবেচায় খুলনাঞ্চলে মার্কেট নেই; তাহলে কি আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে ব্যবহার করা হচ্ছে? ব্যয়বহুল এ কোকেনের চালানের (সাড়ে ২২ কোটি টাকামূল্যের কোকেন জব্দ) সাথে কোন প্রভাবশালী মহল অর্থ লগ্নি করেছে বা জড়িত আছে কি না? তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা ও নিয়ন্ত্রক কারা? কতদিন যাবত খুলনাঞ্চলে কোকেনের চালান আনা-নেয়া হয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে র‌্যাব-৬।
মামলার এজাহারনামীয় ও গ্রেফতারকৃত আসামীরা হল- এই চক্রের মূল হোতা পিরোজপুরের মঠবাড়ীয়া উপজেলার দাউদখালী গ্রামের মৃত এমএ ওয়াহিদেও ছেলে আরিফুর রহমান ছগির (৬০), রূপসা উপজেলার আইচগাতী গ্রামের মোঃ শহীদ মল্লিকের ছেলে সোহেল রানা (৩৫), ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া গ্রামের মৃত কৃষ্ণপদ বিশ্বাসের ছেলে বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাস (৩৫), নগরীর টুটপাড়া কবরখানা মোড়ের ২৫১নং টুটপাড়া মেইন রোডের আকাশ ম্যানশনের বাসিন্দা মৃত শিকদার আইয়ুব আলীর ছেলে এসএম এরশাদ হোসেন (৪৮), দাকোপ উপজেলা সদর চালনার বৌমার বটতলার কৃষ্ণপদ মন্ডলের পুত্র বিকাশ চন্দ্র মন্ডল (৫৫) এবং একই উপজেলার মৌখালী গ্রামের মোঃ ইউনুস আলী ফকিরের ছেলে ফজলুর রহমান ফকির (৩৭) । এজাহারের সংশ্লিপ্ত বর্ণনা- গত ১১ আগস্ট রাত পৌনে ১০টার দিকে গোপন খবরেরভিত্তিতে র‌্যাব-৬ জানতে পারে নগরীর ময়লাপোতার মোড় সংলগ্ন ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রতিকৃতির দক্ষিন পাশে আল আরাফাহ এটিএম বুথের সামনে রাস্তার উপর কতিপয় ব্যক্তি মাদক ক্রয়-বিক্রয় করছে। তাৎক্ষনিকভাবে অভিযান চালালে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে পালানের চেষ্টা করলে মোঃ সোহেল রানা (৩৫) কে ২৩০ গ্রাম কোকেনসহ হাতে-নাতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মোঃ সোহেল রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে একপর্যায়ে সে জানায় মুলহোতা মোঃ আরিফুর রহমান ছগির (৬০) এর কাছ থেকে বিক্রির উদ্দেশ্যে এ কোকেন কিনেছে সে। মোঃ আরিফুর রহমান ছগির এই সিন্ডিকেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানে। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী নগরীর ১৮/২ গগণ বাবু রোডের ভাড়া বাসার ৪র্থ তলায় অভিযান চালিয়ে মোঃ আরিফুর রহমান ছগিরকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। একপর্যায়ে সে জানায় মাদকের চালানের অবশিষ্ট কোকেন বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাস, এসএম এরশাদ হোসেন, বিকাশ চন্দ্র মন্ডল ও মোঃ ফজলুর রহমান ফকিরের কাছে আছে। পরে দাকোপের চালনা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিকাশ মন্ডল ও ফজলুর রহমান ফকিরকে গ্রেফতার করা হয়। কোকেনের চালান সংক্রান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা জানায়- এসএম এরশাদ হোসেন ও বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাসের কাছে আছে। এ তথ্যেরভিত্তিতে রূপসার রাজাপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে এসএম এরশাদ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের কোকেনের অবশিষ্ট চালান বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাসের কাছে আছে বলে জানায়। ওইদিন রাত সোয়া ৩টার দিকে রূপসার রাজাপুর সাকিনস্থ পপুলার জুট মিলের সামনে জনৈক নিত্য বিশ্বাসের বিল্ডিংয়ের নীচতলার ভাড়াটিয়া বাসায় অভিযান চালিয়ে বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়। সে নিজ হাতে ওই কোকেনের তিনটি প্যাকেট বের করে দেয়। যার ওজন দুই কেজি ২০ গ্রাম; আর আগের ২৩০গ্রাম মিলে সর্বমোট ২ কেজি ২৫০ গ্রাম কোকেন জব্দ করা হয় (যার আনুমানিক মূল্য ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা)। গত ১২ আগস্ট দুপুরে র‌্যাব-৬ এর খুলনা সদর দফতরে প্রেসব্রিফিংয়ে র‌্যাব-৬ কমান্ডিং অফিসার (সিও) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। এঘটনায় র‌্যাব-৬ এর ডিএডি মোঃ রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে কোকেন চোরাচালানের গ্রেফতারকৃত ছয়জনসহ অজ্ঞাতদের আসামী করে রূপসা থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রূপসার থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ জিয়াউল হক বলেন, বৃহস্পতিবার রিমান্ড শেষ হচ্ছে, শুক্রবার আসামীদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে। আসামীরা চাইলে আদালতে জবানবন্দী দিতে পারে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে তদন্তে কাজে লাগানো হবে। প্রয়োজনে আবারও তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করা হবে। র‌্যাব-৬ সিও খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, গত দেড় বছর আগে থেকেই এ চক্রটি কোকেন ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত। খুলনা অঞ্চলে কোকেনের চাহিদা না থাকায় তারা অন্যত্র পাচারের চেষ্টা করছিল। র‌্যাবের অভিযানে চক্রটির ছয়জন ধরা পড়েছে। সিন্ডিকেটে জড়িত দেশী-বিদেশী বাকী সদস্যদের সনাত্মক করে আইনের আওতায় আনা হবে। প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহায়তাও নেয়া যেতে পারে বলে তিনি জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কোকেনের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে; এরপরেই আছে ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকা। উন্নত বিশ্বের এক থেকে তিন শতাংশ মানুষ জীবনের নানা পরিস্থিতিতে কোকেন সেবন করে। সংবিধান প্রনয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য খুলনার প্রবীন আইনজীবী শেখ এনায়েত আলী বলেন, “১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ (১) ধারায় হেরোইন, কোকেন ও কোকার শ্রেণির মাদকের কথা বলা হয়েছে। ১৯ (১)-এর ১(ক) ধারায় এসব মাদক দ্রব্য বহন, পাচার ও দখলের (কাছে থাকা) শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। বলা হয়েছে, এসব মাদক দ্রব্যের পরিমাণ ২৫ গ্রাম পর্যন্ত কারো কাছে পাওয়া গেলে বা কারো নিয়ন্ত্রণে বা দখলে পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের সশ্রম কারাদÐ। সর্বনিম্ন দুই বছরের সশ্রম কারাদÐ। ২৫ গ্রামের ওপরে পাওয়া গেলে শাস্তি মৃত্যুদÐ অথবা যাবজ্জীবন কারাদÐ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ