Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করতে দৌড়ঝাঁপ করছে আওয়ামী লীগ -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করতে আওয়ামী লীগ দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা আজকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে ছুটোছুটি করছেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে কিনা সেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল (বুধবার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার ৭৩তম জন্মদিন উপলক্ষে মহিলা দল আয়োজিত দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, আমরা বুঝতে পারছি, তারা এমনভাবে চেষ্টা করছেন যে, যখন এই ভয়ঙ্কর দুঃশাসনের মধ্যে প্রধান বিচারপতি মানুষের চিন্তা-চেতনা, আশা-আকাক্সক্ষায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়েছেন। তার মধ্য দিয়ে গোটা জাতির মধ্যে যে আশাবাদ ফুটে উঠেছে, একে ঠেকাবার জন্য ওবায়দুল কাদেররা প্রধান বিচারপতিকে কী পদত্যাগ করতে বাধ্য করছেন, না অন্য কিছু করতে বাধ্য করাচ্ছেন? তার (ওবায়দুল কাদের) দৌঁড়-ঝাঁপ, তার লাফালাফি, ডিগবাজি দেখে মানুষের মধ্যে এই ধারণাই হচ্ছে।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হকের সমালোচনা করে তাকে ‘আত্মাবিক্রিকারী মানুষ’ আখ্যায়িত করেন বিএনপির এই নেতা। রিজভী বলেন, এই ধরনের লোকরা সমাজে থাকলে ন্যায় বিচার থাকবে না, মানুষের নাগরিক অধিকার থাকবে না, মানুষের চলাচল নির্বিঘœ হবে না, নারী নির্যাতন হতেই থাকবে। কারণ ওরা তো শেখ হাসিনার কথায় রায় দেন, ওরা বিবেক দিয়ে রায় দেন না। খায়রুল হক শেখ হাসিনার নির্দেশ পালন করেছেন। তিনি বলেন, দেশে এখন তিনটি দুযোর্গ চলছে। একটি শেখ হাসিনা, দ্বিতীয়টি বিচারপতি খায়রুল হক এবং তৃতীয়টি বন্যার প্রাকৃতিক দুযোর্গ। বন্যা কবলিত এলাকার দুর্গত মানুষের জন্য সরকারের ত্রাণ তৎপরতা নেই উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, সারা দেশের বন্যার্তদের জন্য সরকারের ত্রাণ তৎপরতা নেই। উপদ্রুত এলাকা থেকে মানুষকে যে উঁচু জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে, সেটাও কোথাও দৃশমান নেই। এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যে থাকা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘জরুরি বার্তা’ তুলে ধরে দলের নেতাকর্মীদের উপদ্রুত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান রিজভী। তিনি বলেন, অসংখ্য মানুষ এখনো পানিবন্দি। তারা যে রান্না করে খাবে, চাল-ডাল দিলেও কোনো কিছু করতে পারছে না। কোথায় রান্না করে নিয়ে যাবে- সেই উপায় নেই। রেল লাইন ভেসে গেছে, রাস্তা-ঘাট ভেসে গেছে। দেশের গুদামে চাল নেই, গম নেই। মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। অথচ তারা (সরকার) মুখে তুবড়ি ছুটাচ্ছে, মুখে তুবড়ি ছুটিয়ে এই যে লিপ সার্ভিস আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বিবৃতিতে বলেছেন, তারা আসল কোনো সার্ভিস দিচ্ছে না, লিপ সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে।
শোক দিবসের নামে চাঁদাবাজির সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসে ক্ষমতাসীনরা ‘চাঁদাবাজি’র মাধ্যমের উৎসব পালন করেছেন। যে মর্মান্তিক হত্যাকান্ড হয়েছে পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট, সেটার জন্য আমরাও দুঃখ প্রকাশ করি, বলি। কিন্তু শোকাবহ ঘটনা গোটা জাতির ওপর শোকের যে অনুভূতি, তা তো আপনারাই নষ্ট করে দিচ্ছেন। পানের দোকানদারের কাছ থেকে ৫০০ টাকা, সাইকেলের মিস্ত্রির কাছ থেকে ৩০০ টাকা, মুদির দোকানদারের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা- এভাবে পকেট কাটতে কাটতে গোটা জাতিকে কাঁদাচ্ছেন। এভাবে জোর করে সহানুভূতি আদায় করা যায় না। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে হুমকি-ধামকি দিয়ে আগ্রাসন চালিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সহানূভূতি আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ আনেন রিজভী। তিনি বলেন, আপনারা সরকারি কলেজগুলো, স্কুলগুলোয় নির্দেশনা দিয়েছেন এটার সময় উপস্থিত থাকতে হবে, না হলে চাকরি থাকবে না। হুমকি দিয়ে, ধামকি দিয়ে আগ্রাসন চালিয়ে আক্রমণ করে নেতার প্রতি সহানুভূতি চাইবেন। আর পিঠের মধ্যে হায় হোসেন হায় হোসেনের মতো হায় মুজিব হায় মুজিব করে তামাশা করবেন। এটা মানুষ গুমরে গুমরে ক্ষোভ প্রকাশ করছে, হাসছে। একটা তামাশা সৃষ্টি হচ্ছে। বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ এনে রিজভী বলেন, অন্যের কর্মসূচিতে আক্রমণ করে নিজের নেতার মৃত্যুবার্ষিকীতে আপনারা সহানুভুতি আদায় করবেন- এটা হয় না। সারা দেশ বন্যায় ভেসে যাচ্ছে, মানুষ খাদ্য পাচ্ছে না, ওষুধ পাচ্ছে না- আর আপনারা চাঁদা তুলে, মানুষের পকেট কেটে পাড়ামহল্লায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খিচুড়ি রেঁধে শোক পালনের নামে উৎসব করছেন। এই উত্তেজিত উল্লাস দিয়ে আপনারা মানুষের সহানুভূতি অর্জন করতে পারবেন না।
মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় দোয়া মাহফিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেত্রী পেয়ারা মোস্তফা ও শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বক্তব্য রাখেন।



 

Show all comments
  • তুরিন ১৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:২১ পিএম says : 0
    অবস্থা দেখে তো সেরকমই মনে হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ