পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্ক্র্যাচ কার্ড আনন্দ অফার। কার্ড ঘষলেই নিশ্চিত আকর্ষণীয় উপহার অথবা পুরোটাই ফ্রি!! বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ রকম অফার দিয়ে ফ্রিজের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড। অথচ ক্রেতা আকৃষ্টে ও পণ্য বিক্রি বাড়াতে অফারের নামে বিভিন্ন উপহারের প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করা দেশের প্রচলিত আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনে জেল-জরিমানার বিধানও রয়েছে। তা সত্তে¡ও, ক্রেতা আকৃষ্টে আইন লঙ্ঘন করে ঈদ অফারের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ও বিক্রেতা। এর মধ্যে রয়েছে লিন্যাক্স ইলেকট্রনিক্স, ইউনিটেক, র্যাংগস, এক্যুয়ার ইলেকট্রনিক্সসহ বেশকয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
দন্ডবিধি আইন-১৮৬০ এর ২৯৪ (বি) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি কিংবা কোনো পণ্য বিক্রির জন্য উপহার বা অন্য যে নামেই ডাকা হোক, কোনো কুপন টিকিট সংখ্যা বা ফিগারের মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার দন্ডনীয় অপরাধ। এ ধরণের অপরাধে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে এই ধারায় সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভর দন্ডে দন্ডীত করার বিধানও রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট ফয়সল আহম্মদ রিয়াজ। আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, ক্রেতা আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন উপহারের প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করা প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ। কেননা, ফ্রি অথবা বিদেশ ভ্রমণসহ অসংখ্য উপহার পাওয়ার আশাতেই সাধারণ অনেক ক্রেতা সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের পণ্যটি কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। কোনো উপহারের প্রলোভন না থাকলে তারা হয়ত পণ্যটি কিনতেন না। তাই কৌশলে পণ্য বিক্রয়ের একটি সহায়ক মাধ্যম হচ্ছে উপহারের প্রলোভন দেখানো। যা প্রকৃত অর্থে সাধারণ ক্রেতার সাথে এক ধরণের প্রতারণা। তাই, দন্ডবিধি আইন-১৮৬০ এর ধারা ২৪৯ (বি) ধারায় এ ধরণের বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারা আরো বলেন, অনেক ক্রেতাই এই বিষয়ে সচেতন নয়। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন উপহারের প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে ইলেকট্রনিক্সসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, আসন্ন কোরবানী ঈদকে ঘিরে দেশজুড়ে এখন ফ্রিজ বিক্রির মৌসুম চলছে। মূলত, কোরবানির গোসত সংরক্ষণের জন্য ঈদের আগে প্রতিবছরই ফ্রিজের চাহিদা ও বিক্রি বেড়ে যায়। বরাবরের মতো এবারও কোরবানীর আগে ফ্রিজের চাহিদা বেড়েছে। আর ঈদে ফ্রিজের এই বাড়তি চাহিদার সুযোগে নিজেদের পণ্য বিক্রি বাড়াতে কতিপয় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড বিভিন্ন অফার সম্বলিত বিজ্ঞাপন প্রচার করছে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। অভিযোগ রয়েছে- এসব অফারের নামে প্রলোভন দেখিয়ে পুরনো এবং নিম্নমানের পণ্য ক্রেতাদের গছিয়ে দেয়া হচ্ছে।
কোম্পানিগুলো সাধারণ ক্রেতাদের ঈদ অফার বা বিশেষ উপহারের নামে স্ক্র্যাচ কার্ড ঘষলেই নিশ্চিত পুরস্কার, নগদ ছাড়, বিশেষ ছাড়, বিদেশ ভ্রমন, ফ্রিজ কিনলে কসাই ফ্রি, একটি কিনলে আরেকটি ফ্রিসহ বিভিন্ন ধরণের প্রলোভন দেখাচ্ছে। যা কিনা দন্ডবিধি আইনের ২৪৯ এর (বি) ধারা মোতাবেক আইনবিরোধী অপরাধ। এই আইনটি সম্পর্কে বেশিরভাগ ক্রেতারই ধারণা না থাকার সুযোগে আইন লঙ্ঘন করে এসব বিজ্ঞাপন প্রচার করছে ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এ ধরণের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারন ক্রেতা।
সম্প্রতি প্রকাশিত লিনেক্স ইলেকট্রনিক্স এর টিভি ও ফ্রিজের বিজ্ঞাপনে লেখা রয়েছে ‘হাউ কাউ অফার’। স্ক্র্যাচ করলেই নিশ্চিত উপহারের ঘোষণাও রয়েছে বিজ্ঞাপনে। যা কিনা শুধুমাত্র লিনেক্স ব্র্যান্ডের রেফ্রিজারেটর ও টিভি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বিজ্ঞাপনটিতে আরো লেখা রয়েছে ১ম পুরস্কার এয়ার টিকেট, ২য় পুরস্কার রেফ্রিজারেটর এবং ৩য় পুরস্কার এলইডি টিভি। এ ছাড়া সকল পণ্যে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ছাড় লেখা রয়েছে। অফারটি ১লা আগস্ট থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত দেশজুড়ে লিনেক্স এর ১০০ শো-রুমে মিলবে বলেও জানানো হয়েছে বিজ্ঞাপনটিতে। এসব প্রলোভন দেখালেও সকল ক্রেতা উপহার বা ছাড় পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। মূলত: সুকৌশলে হাউ কাউ অফারের নামে প্রলোভন দেখিয়ে কোম্পানিটি ফ্রিজ ও টিভির বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে ইউনিটেক একটু ব্যতিক্রমী অফার দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। পত্রিকায় প্রকাশিত ইউনিটেক এর ফ্রিজ, এসি ও টিভির বিজ্ঞাপনে ‘ফ্রিজ কিনলেই কসাই হাজির’ অফারের কথা লেখা রয়েছে। অফারটির ঠিক নিচেই লেখা রয়েছে- “এই ঈদে ইউনিটেকের ফ্রিজ কিনে স্ক্র্যাচ কার্ড ঘষে আপনিও পেতে পারেন ফ্রি কসাই। এছাড়া প্রত্যেক ফ্রিজে থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার।” অফারটি ১ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে বলেও জানানো হয়।
রাজধানীর ইলেকট্রনিক্স পণ্য কেনা-বেচার সর্ববৃহৎ বাজার স্টেডিয়াম মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকার ইলেকট্রনিক্স শোরুমগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশতেই ঝোলানো রয়েছে ব্যতিক্রমী ধরনের ঈদ অফারের বড় বড় পোষ্টার ও ব্যানার। এসব অফারে আকৃষ্ট হয়ে শো-রুমে ঢুকতেই ক্রেতাদের গছিয়ে দেয়া হচ্ছে ফ্রিজ, টিভিসহ বিভিন্ন পণ্য। কিছু বিক্রেতা আবার নিশ্চিত আকর্ষণীয় পুরস্কারের মিথ্যা আশ্বাসও দিচ্ছেন ক্রেতাদের। কেউ কেউ পণ্যের গায়ে আগের চেয়ে বেশি দামের মূল্য তালিকা লাগিয়ে তার উপর নগদ ছাড়ের অফার দিয়ে ক্রেতাদের বিভ্রান্ত করছে।
ফ্রিজ ও টিভিতে কোরবানী উপলক্ষ্যে বিশেষ ছাড় নিয়ে শো-রুমের বিক্রয়কর্মীরা জানান, পণ্য কিনে স্ক্র্যাচ কার্ড ঘষলেই পুরো টাকা ক্যাশব্যাকের সম্ভাবনার রয়েছে এমন অফার দেয়া থাকলেও, এখন পর্যন্ত কোনো ক্রেতাই বড় কোনো পুরস্কার জিতেনি। মিলেছে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকার ক্যাশ ব্যাক। তবে কয়েকগুণ বেড়েছে ফ্রিজ ও টিভি।
স্টেডিয়াম মার্কেটের একটি শো-রুমে আসা ক্রেতা মনিরা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পণ্য কিনলে বিশাল অঙ্কের ক্যাশব্যাকসহ মিলবে বিভিন্ন নিশ্চিত আকর্ষণীয় পুরস্কার-বিক্রয়কর্মীর কাছ থেকে এ ধরণের আশ্বাস পেয়ে মাঝারি সাইজের একটি ফ্রিজ ও ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি কিনলাম। কিন্তু, স্ক্র্যাচ কার্ড ঘষে দুটি পণ্যে সর্বসাকুল্যে ২ হাজার টাকা ক্যাশব্যাক পেলাম। এতেও খুশি ছিলাম। কিন্তু, এখান থেকে বের হতেই পাশের দোকানে একই পণ্যের গায়ে আরো কম দাম লেখা দেখলাম। নেই কোনো অফার। তখনই বুঝলাম- অফারের ফাঁদে পড়ে বেশিদামে পণ্য কিনে ঠকেছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।