Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকার বানভাসিদের নিয়ে উপহাস করছে-রিজভী

| প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে তাদের সাথে উপহাস করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, দেশের মানুষ যখন বন্যায় চরম দূর্ভোগে দিনাতিপাত করছে। বানভাসিরা আশ্রয় পাচ্ছেন না, ত্রাণ পাচ্ছেন না। তখন এই বন্যা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে তারা (আওয়ামী লীগ) সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় পরিবর্তন নিয়ে ব্যস্ত। গতকাল (মঙ্গলবার) নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, ‘বন্যায় ভাসছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে ডুবে যাচ্ছে একের পর এক এলাকা। যমুনার পানি বৃদ্ধি সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ২৭টি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দিনাজপুরে রেলপথ ও মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সারা দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ এবং ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রামের টগরাই হাট এলাকার বড় পুলের পাড় সংলগ্ন রেলসেতু ধ্বসে যাওয়ায় সারাদেশের সঙ্গে কুড়িগ্রামের রেল যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া লালমনিরহাট, দিনাজপুর, নওগাঁ, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জে ব্যাহত হয়েছে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ। কয়েকটি জেলায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় হু-হু করে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। বন্যায় তিন দিনে নারী শিশুসহ ৫৮ জনের প্রাণহানি ঘটল। গণমাধমের খবর-দু’দিনের মধ্যে ১শ’ বছরের রেকর্ড ভাঙতে পারে যমুনার পানি বৃদ্ধি। বানের পানি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ধেয়ে আসছে ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলের দিকে। এতে বন্যার প্রভাব পড়তে পারে রাজধানী ঢাকাতেও। শুধু তাই নয় হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, নেত্রকোণাসহ আরও কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বানের পানিতে হাজার হাজার নারী শিশু ও সাধারণ মানুষ ডুবে যাচ্ছে, লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা, আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নেই, খাবার নেই, আবার কোথাও কোথাও আশ্রয়ও ডুবে যাচ্ছে, অনেক মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে অথচ আওয়ামী লীগের নেতারা বন্যাদূর্গতদের পাশে না দাঁড়িয়ে গণভবন-বঙ্গভবনে দৌড়ঝাঁপ করছেন। দায়সারা একটি প্রেস রিলিজ দিয়ে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নিজেদের দায়িত্ব শেষ করছেন।
গত (সোমবার) ত্রাণমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তিনি বলেছেন দেশে খাদ্যের কোন অভাব নেই। অথচ সরকারের খাদ্যের গোডাউন শূন্য। বানভাসীরা না পাচ্ছে আশ্রয়, না পাচ্ছে ত্রাণ। চারিদিকে খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাবে বানভাসীরা হাহাকার করছে। দেশের অধিকাংশ জেলা বন্যায় ডুবছে আর আওয়ামী নেতারা সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে অশ্রাব্য ধারাবর্ষণ করছেন। পানিবন্দী লাখ লাখ অসহায় মানুষের সঙ্গে যেন আওয়ামী লীগ উপহাস করছে। মূলত: এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিক থেকে দেশবাসীর দেশবাসীর দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে দেয়ার জন্যই তারা মূল সমস্যার বাইরে কথা বলছেন। বানবাসী মানুষের জন্য যেন সরকারের কিছুই করণীয় নেই। কারণ তারা তা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। তাই জনগণের প্রতি তাদের দরদ থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। রিজভী বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় নেতা-কর্মীসহ দেশের সকল বিত্তবানদের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানান। তিনি বলেন, আপনারা ডুবন্ত অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ান, তাদেরকে বাঁচান।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অলিম্পিক প্রতিযোগিতার ন্যায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি’র এই নেতা। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের বৈঠক শুধু উদ্বেগের নয়, ন্যায়বিচারের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করার অশুভ অপচেষ্টারই অংশ। আওয়ামী লীগ যেভাবে জোর করে রায় পাল্টিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তা বিচারবিভাগের স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপের সামিল। আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে ম্যানুফ্যাকচার্ড জনমত তৈরীর চেষ্টা চালাচ্ছে। মহামান্য প্রেসিডেন্ট দলীয় এমপি’দের দ্বারা নির্বাচিত হলেও নির্বাচিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট প্রতিষ্ঠানটি একটা স্বতন্ত্র মর্যাদা লাভ করে এবং তিনি তখন রাষ্ট্রের অভিভাবকে পরিণত হন, আওয়ামী লীগের নন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বৈঠক হতেই পারে, কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক কিভাবে সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন? তাহলে আওয়ামী লীগ সরকার কী তাদের ক্ষোভ প্রশমিত করার জন্য প্রেসিডেন্টকে ব্যবহার করছেন? রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাদের দলের সিদ্ধান্ত তাঁকে জানাতে যাওয়া ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করা, এটি রায়ে পরিবর্তন আনতে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে জনগণের মনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর নির্বাহী বিভাগের নগ্ন হস্তক্ষেপ। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর আওয়ামী লীগের নেতারা যেভাবে বিচারপতিদের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন, আবার বৈঠক করছেন, এটাকে দেশবাসী স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করেন না। তারা বিচার ভিাগকে বিতর্কিত করতে নিজেদের ঘুম হারাম করে ফেলেছেন। এটি শুভ লক্ষণ নয়। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশের পর রায় সংশোধন করতে আওয়ামী লীগের বলপ্রয়োগের দৃশ্য জনগণ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করবে না। একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জন্য স্বাধীনভাবে জনগণের ভোটের মাধ্যমে পার্লামেন্ট গঠন সম্ভব হয়নি। এদেশে আর একক কর্তৃত্ববাদী শাসন, গণতন্ত্র হরণ আর বিরোধী দল ও মত নিধন চলতে দেয়া হবে না। আর ভোটারবিহীন বর্তমান পার্লামেন্ট ও সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের উচ্চারণ কখনোই থামবে না। এসময় তিনি সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর হামলা এবং গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দাবি করেন।
এদিকে বন্যার কারণে কেক কাটার আনুষ্ঠানিকতা বাতিল করে শুধুমাত্র দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন করেছে বিএনপি। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে দলটি। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন শাখা কার্যালয়ে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। এই জন্মদিন স্পর্শ করার মাধ্যমে ৭৩ বছরে পা রাখলেন বেগম খালেদা জিয়া। তার জন্ম ১৯৪৬ সালে।
দোয়া মাহফিলে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৭৩তম জন্মদিন। একই সময়ে দেশের প্রবল আকারে বন্যা দেখা দিয়েছে, সারা দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। এই অবস্থায় দেশনেত্রী নির্দেশে জন্মদিনের সকল ধরনের আনন্দ কর্মসূচি নিষেধ করে দিয়েছেন। আমরা এজন্য আজকের অনুষ্ঠানটা শুধুমাত্র দোয়া মাহফিল ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছি। দেশের এই অবস্থায় কোনো ধরনের আনন্দ অনুষ্ঠান করা যায় না, করা উচিৎও নয়। এসময় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, মীর সরফত আলী সপু, এম এ মালেক, আবদুস সালাম আজাদ, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, কাজী আবুল বাশার, অ্যালবার্ট পি কস্টাসহ শতাধিক নেতাকর্মী।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ