Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেঘ দেখলেই আতঙ্ক

নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী-অগ্রণী সেচ প্রকল্প

| প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো ঃ খলিল সিকদার , রূপগঞ্জ থেকে ঃ আকাশে মেঘ দেখলেই আতঙ্ক বাসা বাঁধে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দাদের। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ভোগান্তি প্রায় এক লাখ বাসিন্দার। টানা বর্ষণে শিল্পকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে পানি ঢুকে গেছে। অনেক মাছের খামার তলিয়ে গেছে। কয়েক দিনের বর্ষণে বাঁধের ভেতরে অস্থায়ী বন্যায় পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জমেছে হাটু পানি, আবার কোথাও কোমর পানি। আবার কোথাও অথৈই পানি। অনেকে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সরকারী নিয়ম কানুন না মেনে অপরিকল্পিতভাবে বালু ভরাট, ভবন নির্মান ও বাড়ি ঘর নির্মাণ জলাবদ্ধতার প্রধান কারন বলে মনে করেন স্থানীয়রা। পানি নিষ্কাশনে যাত্রামুড়া ও বানিয়াদির পাম্প হাউসগুলো কোন কাজে আসছে না স্থানীয়দের অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৩’শ হেক্টর জমি নিয়ে অগ্রনীর নারায়নগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রনী সেচ প্রকল্প-১ ও পরে ১৯৯৩ সালে ১’শ এক কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্ব পাড়ের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই প্রকল্পের ভিতরে শুরু হয় পানিবদ্ধতা । জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনদুর্ভোগও। এবারের দুভোর্গ যে আগের চেয়ে দ্বিগুণ হবে তা কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই অগ্রনীবাসী খুব ভালো ভাবেই টের পাচ্ছে। পুরো বর্ষা ও টানা বর্ষন শুরু হলে কি হবে- এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে অগ্রণীবাসী।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, অগ্রনীর ভেতরে অপরিকল্পিতভাবে মিল-কারখানা গড়ে উঠলে অগ্রনী এলাকাগুলো পরিনত হয় আবাসিক ও শিল্প এলাকায়। বসতি আর কারখানার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে জলাবদ্ধতাও । শিল্প মালিক ও এক শ্রেনীর ভুমিদস্যুর দখলে চলে যায় ফসলী জমি ও খালগুলো । বিভিন্ন এলাকার খালগুলো বালু দিয়ে ভরাট করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নির্মান করেছেন পাকা স্থাপনা।
বর্তমানে সেচ প্রকল্প দুটিতে কৃষি জমিতে পানি সেচের তেমন ব্যবস্থা নেই। এখন প্রকল্প দুটিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা দ্রæত করা দরকার। অগ্রনী সেচ প্রকল্পের যাত্রামুড়া পাম্প হাউজ থেকে বরপা ব্রীজ হয়ে একটি মুল খাল সেচ প্রকল্পের বানিয়াদী এলাকা দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে সংযুক্ত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ঐ খালটি দখল করে প্রভাবশালীরা বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এছাড়া খালের অনেক স্থানে বালু দিয়ে ভরাট করে ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে। সেচ প্রকল্প দুটির দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে তারা খালটি দখলে নিয়েছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। যার ফলে খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হতে পারছেনা। সৃষ্টি হওয়া পানিবদ্ধতা বন্যায় রূপ নিচ্ছে। কর্মকর্তারা থাকছেন ধরাছোয়ার বাইরে। এ ব্যপারে সেচ প্রকল্প দুটির কার্যালয়ে গিয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের অফিসগুলো অধিকাংশ সময়েই থাকে তালাবদ্ধ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেচ প্রকল্পের মাসাব, বরপা বাগানবাড়ি, শান্তি নগর, সুতালড়া, আড়িয়াবো, তেতলাব, কর্ণগোপ, মৈকুলী, মিয়াবাড়ী, ভায়েলা, পাঁচাইখা, মোগড়াকুল, পবনকুল, বরাব, খাদুন, যাত্রামুড়া, গোলাকান্দাইল, দক্ষিনপাড়া, নাগেরবাগ, ৫নং ক্যানেল, কাহিনা, রূপসী, গন্ধর্বপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, গত কয়েক বছরে সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারা খালগুলো ভরাট করে মার্কেট, ঘর-বাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এতে করে সামান্য বর্ষণ হলেই পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ও পানি সরাসরি ফেলানোর কারনে খাল গুলো ভরাট হয়ে গেছে।
বাগান বাড়ি এলাকার আলী হোসেন বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে কোমর পানি পর্যন্ত জমে যায়। এ এলাকার ছাত্র ছাত্রীদের হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানি ভেঙ্গে স্কুলে যেতে হয়। স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, সরকারীভাবে খালগুলো খননের জন্য যে বরাদ্দ আসে তা ঠিকমতো কাজে লাগালে হয়তো এ সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যেতো। বরাদ্দকৃত টাকা স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিরা ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিয়ে যায়।
এখলাছ উদ্দিন ভুইয়া স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও উপদেষ্টা মোঃ শহিদুল্লাহ ভুইয়া বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তা ঘাট ডুবে যায়। পানির কারনে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে অনেক জায়গাতেই। যার কারনে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারেনা। এখনই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না নিলে বাড়িঘর পর্যন্ত ডুবে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা ইসলাম বলেন,অগ্রনী সেচ প্রকল্প কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে খুব দ্রæত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ