Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ

| প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারত থেকে আসা পানির ঢল অব্যাহত থাকায় দেশের চারটি অববাহিকার মধ্যে প্রধান তিনটি অববাহিকায় একযোগে পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় নিকট অতীতের ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৭ সালের বন্যার ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। সেই সাথে ঢাকাসহ আশপাশ এলাকার নদ-নদীগুলোতেও বাড়ছে বানের পানি। দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বিপদসীমার ওপরদিয়ে বইছে। বানভাসি মানুষের হাহাকার, দুর্দশা ও দুর্ভোগের বাস্তব চিত্র নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন-
ফুলবাড়ীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
মোঃ আবু শহীদ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে তিলাই খাল ও শাখা যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার প্লাবিত হয়েছে এলাকার নি¤œাঞ্চল। বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে কৃষকের সবজি ক্ষেত ও রোপা আমনের চারা। যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে কয়েকটি এলাকার মানুষ। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও তীব্র খাবার সঙ্কটে পড়েছেন ওই এলাকার পানিবন্দি মানুষগুলো। অনেকেই বাড়ি-ঘর ছেড়ে গবাদি পশুসহ ঠাঁই নিয়েছে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ভবনগুলোতে। পানিতে ডুবে গেছে উপজেলার ৩০ শতাংশ রোপা আমন ক্ষেত। মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া পরিবারগুলো। তবে আশ্রয়গ্রহণকারীদের জন্য সরকারিভাবে শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করে উপজেলার বন্যা মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উপজেলার কোথাও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে দ্রæত কন্ট্রোলরুমের (০১৭১৫১৭০৮১৪) মোবাইল নম্বরে জানাতে বলা হয়েছে।
ধরলার পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপরে
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কুলাঘাট পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নি¤œাঞ্চল ও নদী নিকটবর্তী এলাকা গুলো এখনও নিমজ্জিত রয়েছে। চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন এসকল গ্রামের মানুষ। বন্যার পানির প্রবল ¯্রােতে অনেক জায়গায় পাকা রাস্তা, বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ।
যমুনার আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে পানি, ৪ উপজেলা প্লাবিত
আরিচা সংবাদদাতা জানান, উজানের ঢল নেমে আসায় যমুনায় গতকাল বিপদসীমার ৪৪ সে,মি উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পদ্মা - যমুনার তীরবর্তী ৪টি উপজেলার অভ্যন্তরে খাল-নদী-নালা বেয়ে দ্রæত পানি প্রবেশ করছে। দৌলতপুর, ঘিওর, শিবালয়, হরিরামপুর উপজেলা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এ ৪ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যমুনার শাখা নদী পুরাতন ধলেশ্বরী,কালীগঙ্গা,ইছামতি, কান্তাবতীতে প্রবাহিত পানি কূলছাপিয়ে দ্রæত মাঠ-ঘাট প্লাবিত করছে। ভেসে বাণিজ্যিকভাবে নির্মিত মৎস খামার। দেখা দিচ্ছে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্য চরকাটারী হাইস্কুল, স্কুল সংলগ্ন বাজারের অর্ধেক অংশ,মসজিদ সম্পূর্ণ রুপে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি
নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ্ জানান, নেত্রকোনায় কংশ নদীর পানি জারিয়া পয়েন্টে ১৮০ সেঃ মিটার, উব্দাখালী নদী কলমাকান্দা পয়েন্টে ১০৬ সেঃ মিটার, ধনু নদী খালিয়াজুরী পয়েন্টে ২৫ সেঃ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নদীর দু‘কুল চাপিয়ে একে একে তলিয়ে গেসে ১০ হাজার ফসলী জমি, মৎস্য খামার, বসত ভিটা ও রাস্তাঘাট। নেত্রকোনা জেলার নেত্রকোনা সদরের ২৬টি ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক গ্রামের প্রায় ৫ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার ফলে গ্রামের অতি সাধারণ ও হত দরিদ্র লোকজনের কোন কাজ না থাকায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্ধ রয়েছে ৫০টি বিদ্যালয়।
পদ্মার ভাঙনে ২২ বসতভিটা বিলীন
ফরিদপুর থেকে নাজিম বকাউল জানান, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়নের ফাজেলখার ডাঙ্গী গ্রামে পদ্মা নদীর পাড় ঘেষে গত দু’দিনে ২২ বসতভিটে তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো বসতঘর নিয়ে পার্শ্ববতী এম.পি. ডাঙ্গী গ্রামের রেড়িবাঁধের ওপর ও ফসলী মাঠের আনাচে কানাচে আশ্রয় নিয়েছেন। গত ক’দিন ধরে উপজেলা পদ্মা নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পানি বৃদ্ধির সাথে কড়াল স্রোতের কোপে বসত ভিটেগুলো বিলীন হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছেন।
রানীশংকৈলে ৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) থেকে আশরাফুল আলম জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে প্লাবিত বন্যায় প্রায় ৫ হাজার লোক বাড়িঘড় ছেড়ে গবাদীপুশু নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর কৃষকের ফসল। উপজেলার পৌরসভাসহ ৯ ইউনিয়ন ঘরে দেখা গেছে, কুলিক নদী এবং নাগর নদী ফ্লাট হয়ে ঘড়বাড়িতে পানি প্রবেশ করে কাচাঁঘড়, আধাপাকা ঘড় ভেঙে গেছে। রাস্তা-ঘাট ডুবেগিয়ে যান যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। ৬হাজার হেক্টর ধান বানের পানিতে তলিয়ে গেছে।
বেড়ি বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
বাগমারা (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের বীরকয়া এলাকায় বেড়ী বাঁধ ভেঙে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে । এতে হাজার হাজার হেক্টর জমির আবাদী ফসল পানির নীচে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ভেসে গেছে মৎষ্য চাষিদেও কোটি কোটি টাকার মাছ। বন্যার পানির গতিবেগ দেখে এলাকার সাধারন লোকজন বাড়ি-ঘর নিয়ে চিহ্নিত হয়ে পড়েছে।
কসবার ৪৮ গ্রাম তলিয়ে গেছে : দেড়শ’ কোটি টাকার ক্ষতি
কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে শেখ মো.কামাল উদ্দিন জানান, পাহাড়ী ঢলে কসবা উপজেলার বায়েক, কায়েমপুর ও গোপিনাথপুরইউনিয়নের ৪৮টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পুকুরের মাছ, হ্যাচারি, মৎস খামার ও কৃষিজমি ঢলের পানিতে একাকার হয়ে ১৫০ কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষডু হয়েছে। ঢলের পানি প্রবেশ করায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে গেছে।ছোট-বড় ১০টি কালভার্ট পানির স্রোতে ভেসে গেছে।সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছে বায়েক ইউনিয়নের প্রায় ৩৩টি গ্রামের মানুষ। অর্ধাহারে অনাহারে তাদের দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ