Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দামুড়হুদায় বাজারে উঠছে নতুন পাট ফলন ও বাজারদর কম হওয়ায় লোকসান আতঙ্কে চাষি

| প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে ঃ দামুড়হুদায় চলতি মৌসুমের পাট কাটা শুরু হয়েছে। পাট কাটা ও জাগ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার পাট চাষীরা। হাট-বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে নুতন পাট। গতবারের তুলনায় এবার ফলন ও বাজারদর উভয়ই কম। মহাজন ফড়িয়ারা আনন্দে থাকলেও লোকসান অতঙ্কে রয়েছে উপজেলার পাটচাষীরা।
জানা যায়, বেশ ক’বছর ধরে দামুড়হুদার কৃষকরা প্রতিকুল আবহাওয়াসহ কাঙ্খিত বাজারদর না পেয়ে লোকসানগ্রস্ত হয়ে পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে বিগত কয়েক বছর ধরে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় কৃষি বিভাগ। সম্প্রতি সরকার পাটের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিন, সিনথেটিক এর পরিবর্তে দেশে উৎপাদিত ও বিদেশ থেকে আমদানিকৃত বিভিন্ন পণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাত করতে পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহারের ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ প্রনয়ন করে। প্রশাসনিকভাবে এ আইনের প্রয়োগ শুরু হলে মানুষ পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত হতে শুরু করে। ফলে দেশে কাঁচা পাটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এর বাজারদরও বেড়ে যায়। তারই ফলশ্রæতিতে বেশ ক’বছর পর গত মৌসুমে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দেড়গুণ জমিতে পাটের আবাদ করে এলাকার কৃষক। কিন্তু আগের তুলনায় লাঙ্গল, বীজ, সার, কীটনাশকের মূল্য ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির তুলনায় কাঙ্খিত মূল্য না পেয়ে এ বছর আবারও পাট আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় অনেকে। ফলে উপজেলায় পাট আবাদে নামে ধস। চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আড়াই হাজার হেক্টর কম জমিতে পাটের আবাদ করেছে কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১০হাজার ৪শ’ ৫০হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। সেক্ষেত্রে অর্জিত হয়েছে ৭হাজার ৮শ’ ৯০হেক্টর জমি। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২হাজার ৫শ’ ৬০ হেক্টর কম।
এবার পাটের বাজারদর কম হওয়ায় অনেকেই পাট কেটে ওই জমিতে ধান লাগানের জন্য পাট কাটা শুরু করেছেন। উপজেলার পাটচাষী গোপালপুর গ্রামের শরিফ উদ্দীন বলেন, জমির ভূট্টা তুলে ২ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এবার রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমন কম, তাই পাটের গাছও ভাল রয়েছে। ফলনও ভাল হবে আশা করছি। তবে বাজারদর যদি না বাড়ে তবে লোকসান গুনতে হবে। নাস্তিপুর গ্রামের জাকির চৌধুরি বলেন, এবছর ৪ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। বপন থেকে শুরু করে পাট কাটা ও পঁচানোর পর আঁশ ছাড়িয়ে শুকিয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ৬০/৬২ হাজার টাকা খরচ হবে। এবারে পাটের যা অবস্থা তাতে বিঘাপ্রতি ৭/৮মন করে ফলন হতে পারে। পাট ওঠা পর্যন্ত বর্তমানের বাজারদর থাকলে পাট বিক্রি করে লাভ তো দুরের কথা আবাদের খরচই উঠবে না।
এদিকে পাটচাষীদের অনেকেই অভিযোগের সুরে বলেন, পাট ওঠার মৌসুমে এক শ্রেনির ফড়িয়া ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পাটের দাম কমিয়ে রাখে। কৃষকের ঘর থেকে কৌশলে কমদামে পাট কিনে মহাজনদের ঘরে তুলে নিয়ে পাটের বাজারদর বাড়িয়ে দেয়। ফলে কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পাট উৎপাদন করে পাটের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লোকসানগ্রস্ত হলেও অল্প সময়ে স্বল্প পূঁজি খাটিয়ে মোটা অংকের লাভ করে ব্যাবসায়ীরা।
উপজেলার দর্শনা মোকামের পাট ব্যাবসায়ী হাজী আঃ রহমান জানান, কয়েকদিন থেকে ২/৪ মন করে নুতন পাট উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে বাজারে কোয়ালিটি অনুযায়ী প্রতিমন নতুন পাট সাড়ে ১২শ’ থেকে সাড়ে ১৩শ’ টাকায় কেনা বেচা হচ্ছে। তবে বাজারদর না বাড়লে লোকসান হলে আগামীতে পাটের আবাদ থেকে চাষী মুখ ফিরিয়ে নেবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ