রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ ২৯ টি ডাক্তারের পদের স্থলে মাত্র ৪ জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন। ২৫ টি পদ শুন্য থাকায় খুঁড়ে খুঁড়ে চলছে সিকিৎসা সেবা। উপজেলায় ২ লাখ ২০ হাজার জনসাধারণের জন্য মাত্র ৪ জন ডাক্তার কর্মরত থাকলেও ডাঃ বিজয় কুমার রায় বর্তমানে ২ মাসের প্রশিক্ষণে থাকায় রয়েছেন মাত্র ৩ জন ডাক্তার। চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা। রোগীদের চরম দুর্দশা ও দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলছে।
বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ, জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, এনেসথেসিয়া, পেডিয়াট্রিক্স, অর্থপেডিক্স, কার্ডিওঃ, চক্ষু, ইএনটি, চর্ম ও যৌন এবং সহকারী সার্জন ইনডোর, ইমার্জেন্সী, এ্যনেসথেসিয়া, প্যাথলজিস্ট, ইউনানী ও ডেন্টাল সার্জনসহ ২১ টি পদ রয়েছে। তার মধ্যে সদ্য স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডাঃ জাহিদ নজরুল চৌধুরী সম্প্রতি প্রমোশন জনিত কারনে বদলী হওয়ায় গুরুত্বপূর্ন পদটিও এখন শুন্য। বর্তমানে নিষ্ঠারসাথে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী সার্জন (ইমার্জেন্সী) ডাঃ রুহুল আমিন, মেডিকেল অফিসার ডাঃ আ. হ. ম. আহসানুজ্জামান, সহকারী সার্জন (পাথলজিস্ট) ডাঃ আরিফুজ্জামান, ডাঃ বিজয় কুমার রায় বর্তমানে ২ মাসের প্রশিক্ষণে থাকায় মাত্র ৩ জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন।
অপরদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাদের কর্মরত তালিকা অনুযায়ি দেখা যায় আরও ৩ জন ডাক্তার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পোস্টিং ও যোগদান রয়েছে। তাদের মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) ডাঃ রতন কুমার সিংহ ২০১৩ সালের অক্টোবরের ১০ তারিখে যোগদান করলেও তখন থেকে তিনি নওগাঁ সদর হাসপাতালে কর্মরত আছেন। উজেলায় পেডিয়াট্রিক্স সার্জন ডাক্তার একটি গুরুত্বপূর্ন পদ, ওই পদে ডাক্তার থেকে ও অত্র উপজেলার জনসাধারণ তাদের শিশুদের সিকিৎসার জন্য নওগাঁ ওই ডাক্তারসহ অন্যান্য শিশু ডাক্তারদের নিকট মোটা অংকের ফিসহ ধর্না দিতে হয়। অথচ এমন একজন ডাক্তার বদলগাছীতেই যোগদান রয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আর একটি সুত্র জানান, বদলগাছীতে প্রাইভেট চিকিৎসায় তেমন অর্থ উপার্জন না হওয়ায় ওই ডাক্তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে দীর্ঘ প্রায় ৩ বৎসর ধরে নওগাঁতে ডেপুটিশনে রয়েছেন। সরকারি বিধি অনুয়ায়ী ৩ বছরের বেশি একই কর্মস্থলে থাকা যাবে না। কিন্তু ডাঃ রতন কুমার সিংহ তার যোগদানের তারিখ হতে ৩ বৎসর অতিক্রান্ত করলেও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারনে নিরব রয়েছে।
অপর একজন মেডিকেল অফিসার ডাঃ শামিমা সুলতানা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ছিলেন, তার ছুটিও শেষ। কিন্তু ছুটিতে থাকা অবস্থায় তার নিয়ামতপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি হয়েছে। সে এখন নিয়ামতপুরে যোগদান করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপর একজন ডেন্টাল সার্জন ডাঃ ফেরদৌস আমিন ২০১০ সালের ডিসেম্বরের ১ তারিখে অত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করে এবং ২৬/৪/২০১৪ ইং তারিখ থেকে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে রয়েছে।
এভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ টি পদের স্থলে মাত্র ৪ জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন। আর বর্তমান ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের মধ্যে ১ জন মেডিকেল অফিসার ও ২ জন সাব- এ্যাসিট্রেন্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার কর্মরত আছেন। এ ছাড়া উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলিতে ১ টি করে মোট ৮ টি মেডিকেল অফিসার ও ১ টি করে সাব-আসিট্রেন্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদ রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলিতে ৮ টি মেডিকেল অফিসার পদের স্থলে মাত্র ১ টিতে মেডিকেল অফিসার রয়েছে বাকি ৭টিতে নেই। তার মধ্যে মাত্র চাকরাইল স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে ১জন মেডিকেল অফিসার তাহসিনা বিনতে আবেদ ও ১ জন সাব- এ্যাসিট্রেন্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রয়েছে। কিন্তু ভান্ডারপুর স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে সাব- এ্যাসিট্রেন্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হিসেবে শাহিদা নামে একজনের যোগদান রয়েছে। কিন্তু তিনি রাজশাহী ডাইরেক্টর অফিসের অর্ডার বলে নওগাঁ সদর হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। বাকি স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলিতে ফার্মাসিস্ট দিয়ে চিকিৎসা সেবা ও ঔষুধ বিতরণ চলছে।
এ ছাড়া ডাক্তারদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ক্যাম্পাসে অবস্থান করার নিয়ম থাকলেও কোন ডাক্তার ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন না। এ কারনেও স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন উপজেলা বাসী।
এ বিষয়ে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা এবং আর, এমও ডাঃ রুহুল আমিন এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বর্তমানে আমিসহ যে ৪ জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন তাদের দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এ ছাড়া কোন উপায় নেই। তিনি বলেন বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও কয়েকজন ডাক্তারের যোগদান রয়েছে অথচ ডেপুটিশানে অন্যত্র আবার কেউ নিরুদ্দেশ রয়েছেন। তাদের মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) ডাঃ রতন কুমার সিংহ সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি ২০১৩ সালে অত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করে ডেপুটিশানে নওগাঁ সদর হাসপাতালে চাকরি করছেন। ডেন্টাল সার্জন ডাঃ ফেরদৌস আমিন দীর্ঘ দিন থেকে কর্মস্থলে নেই। সম্পূর্ন নিরুদ্দেশের কারনে উপজেলাবাসী যেমন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি উক্ত পদ দখল করে থাকায় কর্তৃপক্ষ ওই পদে কাউকে বদলিও করতে পারছে না।
কারন সরকারী নিয়মানুযায়ী কেউ কোন পদে নিরুদ্দেশ থাকলে ৫ বৎসর অতিবাহিত না হলে কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তিনি আরও বলেন উপজেলার জনসাধারণের বিষয় বিবেচনা করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ডাক্তারের শুন্য পদগুলি দ্রæত পুরুণ করলে উপজেলায় স্বাস্থ্য সেবার মান শতভাগ সফল করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া যে কয়জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন তাদের দিয়ে কোন রকমে স্বাস্থ্য সেবা চালিয়ে যেতে হবে।
অপর দিকে উপজেলার প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে মাত্র ৪ জন ডাক্তার হিমসিম খাচ্ছে তার উপর দির্ঘ্য দিন থেকে এক্স-রে মেশিন ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন ও ইসিজি মেশিন নষ্ট এ যেন মরার উপর খারার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে নওগাঁ সিভিল সার্জন ডাঃ রওশন আরা খানম এর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, প্রতি বৎসর ডাক্তার নিয়োগ না হলে ডাক্তার সংকট যাবে না। আর যে সব জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেই সেই সব জেলায় উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তার থাকতে চায় না। কর্তৃপক্ষ পোস্টিং দিলেও তারা তদবির করে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান। জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) ডাঃ রতন কুমার সিংহ বদলগাছীতে যোগদান থাকলেও ডেপুটিশনে ৩ বৎসরের অধিক সময় নওগাঁ সদর হাসপাতালে কিভাবে থাকে বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন এটাতে তার কিছু করার নেই। কারন ডাক্তারদের ডেপুটিশনে বদলি করেন বিভাগীয় ডাইরেক্টর। তিনি ডাঃ রতন কুমার সিংহ কে কেন ৩ বৎসরের অধিক সময় ডেপুটিপশনে রেখেছেন তা বলতে পারবো না। আর বদলগাছী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি মেশিন নষ্ট সম্পর্কে বলেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা হবে।
এলাকাবাসীর দাবি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ দ্রæত অত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শুন্য পদে ডাক্তার যোগদান ও ডাক্তারদের ক্যাম্পাসে অবস্থান নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে। যেন চিকিৎসার অভাবে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবর্তে নওগাঁ সদরে যাওয়ার পথে অকালে প্রাণ ঝড়ে না যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।