Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নানা সমস্যায় জর্জরিত অভয়নগরের বেদভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

| প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অভয়নগর (যশোর) উপজেলা সংবাদাতা: যশোরের অভয়নগর উপজেলার চলিশীয়া ইউনিয়নের প্রত্যান্ত একটি গ্রাম বেদভিটা। প্রায় পাঁচ হাজার লোকের বসবাস এ গ্রামে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ পর্যন্ত গ্রামে কোন উন্ননের ছোয়া লাগেনি। চলাচলের জন্য উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। ভবদহের করাল গ্রাসে গ্রামটি প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে পানিবদ্ধতায় ডুবে থাকে। বেদভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে রয়েছে র্দীঘদিন। একটু বৃষ্টি হলেই স্কুলটিতে পানি বেধে যায়।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, স্কুলটি স্থাপিত ১৯৬০ সালে দেশ স্বাধীনের অনেক আগে বেসরকারিভাবে স্কুলটি পরিচালিত হয়। এরপর ১৯৯৪ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশুলি অধিদপ্তর একটি ভবন নির্মান করেন। তারপর ভবন টি অল্প সময়ে ফাটল ও ভাঙন দেখা দেয়। পরে বেদভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালের প্রথম দিকে উপজেলা শিক্ষা অধিদপ্তর কর্মকর্তারা এসে পরিত্যক্ত ভবন ঘোষনা করেন। পরিত্যাক্ত ভবন ঘোষনার পরে আর কোন উন্নয়নে ছোয়া লাগেনি। বিদ্যালয়টি উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার বাইরে অবস্থিত থাকায় উন্নয়ন হয়নি। দেখা যায়, বিদ্যালয় হলেও ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নেই কোন ক্লাসে দরজা- জালানা, নেই প্রয়োজনীয় বসার বেঞ্চ, যা রয়েছে তার অধিকাংশই ভাঙা। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। তীব্র গরমে অতি কষ্টে তাদের পাঠদান করতে হয়ে বলে শিক্ষির্থীরা জানায়। পরিত্যাক্ত ভবন শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ক্লাস করার সময় খোলা আকাশের নিচে বসে পাঠদান করতে হয়। ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে শিশুরা ভয় পেয়ে যায়। না জানি কোন দুঘর্টনা ঘটে বলে জানায় শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বলেন, গত বছর ঝড়ে আমাদের একটি বেড়া ও টিনের তৈরি একটি ঘর উড়িয়ে নিয়ে যায়। এবং বন্যার কারণে তা নষ্ঠ হয়ে যায়। এতে স্কুলের কোমলমতি শিশুদের ক্লাস পরিচালনায় ব্যাহত হয়। শিক্ষিকা লিপিকা মল্লিক জানান, তিনি ৪ বছর ঐ স্কুলে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। ঝড়ের সময় তিনি ভয়ে শিশুদের আগলে রেখে শিক্ষা কার্যক্রম করেছেন। ভবন না থাকায় অনেক সমস্যা হয় বলে তিনি জানান। বর্ষা মৌসুমে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয় বলে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানিয়া সুলতানা (১১) জানায়। ৩য় শ্রেনীর ছাত্রী মাহফুজা খাতুন জানান, ক্লাস রুম না থাকায় প্রতিদিন খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে মন চাই না।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি রায় বলেন, অফিস কক্ষ না থাকায় স্কুলের মূলোবান কাগজ পত্র হারিয়ে ও নষ্ঠ হয়ে যায়। এতে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ঝড়ে গত বছর একটি টিনের চালা ঘর উড়িয়ে নিয়ে গেলে চেয়াম্যানের তহবিল থেকে আবার ছোট একটি টিনের স্কুলঘর নির্মান করা হয়। এতেও আমাদের কক্ষ সংকট। তিনি আরো বলেন, ঝড় এলে ঐ টিনের ঘরে থাকাটা বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। এই কারণে এই স্কুলে ছেলে মেয়েরা আসতে চাই না। অনেক দূরের ভাল স্কুলে যায়। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বসার জন্য কোন স্থান নাই। সেখানে ভালো কোন চেয়ার-টেবিল নেই। গুরুত্বপূর্ণ কাগজ দলিলপত্র রাখার আলমারী নেই। সব রকম বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করেও শিক্ষকরা তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সহকারী শিক্ষকরা জানায়। বর্তমানে ৪ জন শিক্ষক-৫২ জন শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে বিদ্যালয়টি। যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল না থাকায় শিক্ষক শিক্ষিকাদের অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিদ্যালয়ে আসতে হয়।
অভিভাবক ফারুক খান বলেন, আমাদের এই স্কুল টি প্রত্যান্ত এলাকায় হওয়াতে কোন অনুদান পায়না। তাই কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। ভবন টি ২০১৩ সালে পরিত্যক্ত ঘোষনা হলেও নতুন কোন অবকাঠামো বা এ ব্যাপারে কোন সুনজর পড়েনি। যদি নতুন ভবন হত তাহলে অনেক ছেলে মেয়ে পড়াশুনা করতো। আমার মনে হয় ছেলেমেয়েদের দুর্দশার চিত্র দেখে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর আবার একটি নতুন ভবন দিবে বলে তিনি দাবি করেন। স্কুলের সভাপতি তারাপদ বিশ্বাস বলেন, আমি অনেক দিন যাবত এই দ্বায়িত্ব পালন করে আসছি। এবং স্কুলের উন্নয়নের ব্যাপারে শিক্ষা অধিদপ্তরকে ভবন সম্পর্কে অনেক বার জানিয়েছি কিন্তু কোন ফল পায়নি। এ ব্যাপারে শিক্ষা অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, আমি স্কুলটি পরিদশর্ন করেছি। শিক্ষা অধিদপ্তরে বিষয়টি জানিয়েছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ