Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি

নেত্রকোনা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৭, ৪:০৯ পিএম

অবিরাম ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢল অব্যাহত থাকায় নেত্রকোনার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। নেত্রকোনার প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। একে একে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলী জমি, মৎস্য খামার, বসত ভিটা ও রাস্তাঘাট।

গত কয়েকদিন ধরে অবিরাম ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নেত্রকোনার সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নদীর দু কুল চাপিয়ে ঢলের পানি বিস্তীর্ণ ফসলী জমিতে প্রবেশ করে হাজার হাজার হেক্টর রোপা আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে। নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা, বারহাট্টা ও নেত্রকোনা সদরের ২৬টি ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক গ্রামের প্রায় ৫ লক্ষ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার ফলে গ্রামের অতি সাধারণ ও হত দরিদ্র লোকজনের কোন কাজ না থাকায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাড়ী ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় অসংখ্য পরিবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু তাহের জানান, সোমেশ্বরই নদীর পানি দূর্গাপুরে ডেঞ্জার লেবেলে প্রবাহিত হচ্ছে, কংশ নদীর পানি জারিয়া পয়েন্টে ১৮০ সেঃ মিটার, উব্দাখালী নদী কলমাকান্দা পয়েন্টে ১০৬ সেঃ মিটার, ধনু নদী খালিয়াজুরী পয়েন্টে ২৫ সেঃ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও জারিয়া এলাকা বেরি বাধঁটি হুমকির মুখে রয়েছে।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যায় ৫টি উপজেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে।

নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার জানান, বন্যায় নেত্রকোনা-কলমাকান্দা সড়কের বাবনীকোনা, নিশ্চিন্তপুর, বাহাদুরকান্দা এলাকায় প্রায় চার শত মিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। শ্যামগঞ্জ-দূর্গাপুর সড়কের শুকনাকুড়ি ব্রীজের এপ্রোচ সড়ক ভেঙ্গে গেছে। কৃষ্ণেরচর এলাকায় সড়কটি এক ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। বিরিশিরি-বিজয়পুর সড়কের বিজিবি ক্যাম্পের দেড়শ মিটার সড়কের সি সি ব্লক ভেঙ্গে প্রবল পানির তোড়ে সড়কটি ভাসিয়ে নিচ্ছে।

নেত্রকোনা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম ইসমত কিবরিয়া জানান, বন্যায় দূর্গাপুর-কলমাকান্দা সড়কের চান্দুয়াইল ও রামপুর এলাকার রাস্তার কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে। নাজিরপুর- পাঁচগাও সড়কের নলুয়া ব্রীজের এপ্রোচ সড়ক ভেঙ্গে গেছে।

জেলা সৎস্য কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন আহমেদ জানান, বন্যায় বিভিন্ন ফিসারীর প্রায় ৬ শত পুকুর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫০ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা।

সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার মোতাহার হোসেন জানান, বন্যার পানি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করায় নেত্রকোনায় ১৯টি উচ্চ বিদ্যালয় ও অতিরিক্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ উবায়দুল্লাহ জানান, দূর্গাপুরে ২৩টি ও নেত্রকোনা সদরে ১৯টি বিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক ড. মো: মুশফিকুর রহমান জানান, আমি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার হোসেন আকন্দ, পূর্বধলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন, ধলামূলগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল আমিন খানসহ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি। বন্যায় এ পর্যন্ত ৫টি উপজেলার ২৬টি ইউনিয়ন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে কলমাকান্দা উপজেলায় ৩টি, দূর্গাপুর উপজেলায় ২টি ও পূর্বধলা উপজেলায় ১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মোট ৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৪ শতাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছে। ইতিমধ্যে বন্যা দূর্গত লোকজনের মধ্যে চিড়া, মুড়ি, গুড়, মোমবাতি ও ম্যাচ এবং নগদ ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বিতরণ করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ