রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
বাড়তি ভাড়া, শব্দ দূষণ, নিয়ন্ত্রণহীন চলাচল
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে: ভাড়া নিয়ে দর কষাকষির সুযোগ নেই। চালকের যা দাবী তাতেই রোগী নিয়ে যেতে হবে। নিরুপায় স্বজনরা বাধ্য হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বড়মাপের হাসপাতালের উদ্দেশ্যে অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে বসেন। আর জরুরী সেবার আশায় অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে সাধারণ রোগীদের গুণতে হয় বাড়তি টাকা। আবার কুমিল্লায় সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স ও চালক সঙ্কট। আর জরুরী মুর্হূতে রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগটি কাজে লাগিয়ে নিেেচ্ছ শহরে ও গ্রামে গড়ে উঠা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সিন্ডিকেট। বাইরে লাল বাতি আর হুইসেলের এবাহনটির কাছে প্রতিদিনই গলাকাটা ভাড়ায় জিম্মি হয়ে পড়ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। লাভজনক হওয়ায় ফিটনেস নেই এমন মাইক্রোবাসও অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করা হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনায় নীতিমালার অভাবে আধুনিক চিকিৎসা উপকরণ ছাড়াই কুমিল্লা শহর ও গ্রামে শত শত অ্যাম্বুলেন্স খেয়াল-খুশি মতো ভাড়ায় রাস্তায় দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ চেষ্টা করেও ওইসব নামে-বেনামের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।
কুমিল্লা নগরীতে সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতাল ঘিরে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি, দালালদের দৌরাত্ব্যসহ এক অরাজক পরিবেশ বিরাজ করছে। এছাড়াও উপজেলাগুলোতে কুমিল্লা শহরে সরকারি বা প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী বহন নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্সের অতিরিক্ত ভাড়া রোগী ও স্বজনদের জন্য গলারকাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবমিলে অ্যাম্বুলেন্সের সহনশীল ভাড়ার জায়গাটি চালক-মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কুমিল্লা শহর ও উপজেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘিরে গড়ে ওঠেছে আম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি রোগী ও তাদের স্বজনরা। উপজেলাগুলোতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে কিছুটা উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা শহরের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে এবং শহরের হাসপাতাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রোগী বহন নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের নৈরাজ্যের কাছে অসহায় হয়ে পড়ছে রোগীর স্বজনরা।
অ্যাম্বুলেন্স নৈরাজ্যে বন্ধে সরকারিভাবে কুমিল্লা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা পদক্ষেপ নিয়েও অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারছেন না। কুমিল্লা শহরের দুইটি সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স সঙ্কটের সুযোগে এসবস্থানে গড়ে ওঠেছে একাধিক অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। কুমিল্লা জেলায় অনুমোদিত প্রাইভেট হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের তালিকা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে রয়েছে। কিন্তু ব্যক্তি মালিকানা ও নামে-বেনামী প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্সগুলোর কোন তালিকা নেই কুমিল্লা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। আর এধরণের অ্যাম্বুলেন্সগুলোই রোগীর স্বজনের কাছ থেকে গলাকাটা ভাড়া নেয়। অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক ও নামে-বেনামের সার্ভিসে গোটা জেলায় চারশোর বেশি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য গড়ে তুলেছে। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে পরিমান অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে সেখানেও চালক এবং যান্ত্রিক সমস্যায় পুরোপুরি সার্ভিস পাচ্ছেনা রোগীরা। আর বেসরকারি হাসপাতালেও রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স সঙ্কট। এসুযোগে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে কেন্দ্র করে শহরে ও গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের দুইটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি সচল। আরেকটি মেরামতের অভাবে দীর্ঘদিন অচল। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে মেরামতের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে কুমিল্লার ষোল উপজেলার মধ্যে মেঘনা, মনোহরগঞ্জ ও সদর দক্ষিণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নেই। আবার চৌদ্দগ্রাম ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রে অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক না থাকায় অতিরিক্ত টাকায় বাইরে থেকেই মুমূর্ষ রোগীর জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে হচ্ছে। যেসব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা নেই সেখানে ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানের নামে চলছে অ্যাম্বুলেন্সের নামে পরিবহন ভাড়া।
উপজেলা পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স সঙ্কটের বাইরে এ সার্ভিসের বেহালদশা খোদ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে। পাঁচশো শয্যার সরকারি এ হাসপাতালে চারটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে সচল মাত্র একটি। অকেজো বাকি তিনটির ঠিকানা গ্যারেজে। জেলায় চিকিৎসাসেবার সবচে বড়ো জায়গাটি হচ্ছে কুমেক। এখান থেকে প্রতিদিন অনেক রোগীকে ঢাকায় নিতে হয়। কিন্তু কুমেকের সচল একটি অ্যাম্বুলেন্স পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে রোগীর জন্য। আর তাই সরকারি এ হাসপাতালের সামনে বাইরের অ্যাম্বুলেন্সের ভিড় বেশিই লেগেই থাকে। কুমেক ও বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালের সামনে ব্যক্তিগত ও নামে-বেনামীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্সগুলো সাধারণ মাইক্রোবাসে যন্ত্রাংশ সংযোজন করেই তৈরি করা হচ্ছে। এটির কোনটির ফিটনেসও নেই। নেই আধুনিক জরুরী জীবন রক্ষাকারি কোন সুবিধা। মসুযোগ সুবিধা না থাকলেও ভাড়া আদায়ের সময় নেয়া হচ্ছে ইচ্ছেমতো টাকা।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স জরুরী চিকিৎসাসেবার একটি অন্যতম অংশ। কুমিল্লায় সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর সামনে নামে-বেনামের অসংখ্য অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থেকে ‘রোগী ধরা বাণিজ্যে’ লিপ্ত থাকে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আহ্বান করা হয়েছিল প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সগুলোর তালিকার বিষয়ে। এব্যাপারে অনুমোদিত প্রাইভেট হাসপাতাল এবং অনুমোদিত কিছু প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে সাড়া পাওয়া গেছে। অ্যাম্বুলেন্সের তালিকাসহ স্বাস্থ্যসেবার বিস্তারিত বিষয় সরকারি ওয়েবসাইট স্বাস্থ্য বাতায়নে ১৬২৬৩ নম্বরে কল করলেই পাওয়া যাবে। তালিকার বাইরে থাকা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। কিন্তু এসব অ্যাম্বুলেন্স ব্যক্তি মালিকানা ও নামে-বেনামের হওয়ায় এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ অথবা নিয়ন্ত্রনে আনা যাচ্ছেনা।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।