Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সামনে নির্বাচন : জোট গঠনের নানা উদ্যোগ এবং বিবিধ প্রশ্ন

উ প স ম্পা দ কী য়

| প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুনশী আব্দুল মাননান : দেশে রাজনীতি অনেকদিন ধরেই নেই হয়ে আছে। আন্দোলন নেই, সংগ্রাম নেই, মিটিং নেই, সমাবেশ নেই, মিছিল নেই। ক্ষমতাসীনদের জন্য এটা একটা সুবিধাজনক অবস্থা। তারা নির্বাধে, বিনা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ইচ্ছেমত শাসন চালিয়ে যেতে পারছেন। রাজনীতিহীন এই অবস্থাটা তারা খুব কৌশলে, ব্যাপক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তৈরি করার কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। বিরোধী দল আছে; তাদের কোনো আন্দোলন-কর্মসূচী নেই। নিষ্ঠুর ও নির্বিচার দমন-পীড়নে তারা কেবল মাঠছাড়া নয়, ঘর ছাড়াও। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি বিবৃতি, সংবাদ সম্মেলন, গোলটেবিল আলোচনা এবং কখনো কখনো মানববন্ধনে তার কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। মিটিং-সমাবেশ-মিছিল করার কোনো সুযোগ নেই। তার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কত মামলা যে আছে, তার ইয়ত্তা নেই। অনেকেই জেলে, অনেকেই আত্মগোপনে বা পালিয়ে আছেন। যারা বাইরে আছেন, তাদের আদালতে হাজিরা দিতে দিতে জান শেষ। অন্যান্য বিরোধীদলের তো কথাই নেই। বিএনপির অবস্থা দেখে তারা চুপচাপ থাকাকেই শ্রেয় বিবেচনা করছে। এরকম রাজনীতিহীনতা অতীতে এদেশে কখনই দেখা যায়নি।
রাজনীতি করার একক ও একচ্ছত্র অধিকার আছে কেবল ক্ষমতাসীন দলের। ক্ষমতাসীন দলের আন্দোলন-সংগ্রাম করার কিছু নেই। তাই মাঠে-ঘাটে তার কোনো কর্মসূচীও নেই। তবে কোনো উপলক্ষে মিটিং-সমাবেশ-মিছিল করার প্রয়োজন হলে দলটি অবলীলায়, ঢাক-ঢোল পিটিয়েই করতে পারে। বিরোধী দলের কোনো ছোটখাটো কর্মসূচী পালন করতে হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়, যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনুমতি দেয়া হয় না। ক্ষমতাসীন দলের ক্ষেত্রে এর বালাই নেই। অনুমতি চাওয়া বা না চাওয়া একই বরাবর। এই দ্বৈতনীতি ও ব্যবস্থা রীতিমত প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এই রাজনীতিশূন্যতা, রাজনীতির এই বৃত্তাবদ্ধতা, এই একমুখিতার কবে অবসান ঘটবে, কবে রাজনীতিচর্চার সিংহদ্বার উম্মোচিত হবে, কবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে, কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। তবে সবাই আশা করে, বিশ্বাস করে, যত বিলম্বই হোক, এই নজিরবিহীন পরিস্থিতির একদিন নিরসন ঘটবে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পাবে। মানুষও ফিরে পাবে তাদের রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার এবং পছন্দের সরকার গঠনের অধিকার।
এই অস্বাভাবিক ও অবাঞ্ছিত পরিস্থিতিতে হঠাতই রাজনীতি মৃদু ঢেউ তুলতে শুরু করেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নড়াচড়া দেখা দিয়েছে বিভিন্ন দলের মধ্যে। নির্বাচনের যদিও বাকী হয়েছে অনেক দিন; তা সত্তে¡ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সকল দলের মধ্যেই একটা তৎপরতা লক্ষ্যযোগ্য হয়ে উঠেছে। এর একটা বড় কারণ এই হতে পারে, নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে এবং সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজও আরম্ভ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ অবশ্য নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ ঘোষণার অনেক আগেই নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছে। অনেক দিন ধরেই দলের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন উপলক্ষে জনগণের কাছে ভোট চেয়ে আসছেন। সংসদে বিরোধীদল দল কথিত সরকারের অংশীদার জাতীয় পার্টি ও নির্বাচনপ্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে একই সময় থেকে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও খুব পিছিয়ে নেই। নির্বাচনের প্রস্তুুতিমূলক কাজ বিএনপিও এগিয়ে নিচ্ছে। অন্যান্য বিরোধী দলও যার যার মতো করে তৎপর ও সক্রিয়।
নির্বাচন এলে, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করলে সব দলেই সাড়া পড়ে। কে কিভাবে নির্বাচন করবে, এককভাবে করবে, নাকি জোটবদ্ধ হয়ে করবে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট আগে থেকেই বিদ্যমান আছে। বিএনপির নেতৃত্বে আছে আরও একটি জোট, যা ২০ দলীয় জোট নামে পরিচিত। আসলে দলীয়ভাবে নির্বাচন করার দিন বোধহয় আর নেই। এখন চলছে জোটীয় নির্বাচন। সম্ভবত : জোটীয় নির্বাচনের ধারাটিই স্থায়ী হয়ে যাবে। আগে রাজনীতি ছিল আদর্শভিত্তিক। আর এখনকার রাজনীতি ক্ষমতাকেন্দ্রিক। আদর্শভিত্তিক দলগুলো আগে দলীয় আদর্শের প্রচার-প্রতিষ্ঠাকেই গুরুত্ব দিতো; ক্ষমতায় যাওয়াকে গৌণ জ্ঞান করতো। এখন ক্ষমতাই মুখ্য, আর্দশ গৌণ। তাই প্রতিদ্ব›দ্বী দুই জোটই স্ব স্ব জোটকে দৃঢ় ও শক্তিশালী করার দিকে মনোনিবেশ করেছে। প্রধান দুই দলও তাদের দলীয় সংহতি সুদৃঢ়, অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিরসন এবং দল সক্রিয়-তৎপর করার প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। এজন্য চায় জনগণের সমর্থন ও ভোট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন জানুয়ারির মতো হবে না, নির্বাচন হবে কঠিন। এই ‘কঠিন’ নির্বাচনে কীভাবে জিতে আসা যায় সেজন্যে বিভিন্ন কৌশল ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন জোট। অন্যদিকে বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন জোট আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী-জোটকে হটিয়ে ক্ষমতার আসীন হওয়ার জন্য নানা কৌশল ও পরিকল্পনা আঁটছে। আরেকটি ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন যাতে না হতে পারে সে ব্যাপারে তারা সতর্ক ও সচেতন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথা : নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং সবদলের অংশগ্রহণে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। বিএনপিকে বাইরে রেখে ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনও করতে দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য : ৫ জানুয়ারীর মতো নির্বাচন তারাও চান না। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করুক, এটাও তারা কামনা করেন। তবে বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচন হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। দুই দল ও তাদের নেতৃত্বাধীন দুই জোটের পরস্পরবিরোধী এই অবস্থানের মীমাংসা কীভাবে হবে, সেটা বলার সময় এখনো আসেনি। পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচকালীন নিরপেক্ষ সরকারের ব্যাপারে দু’পক্ষের সমঝোতা ও ঐকমত্যে আসাটা নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
আওয়ামী-জোট ও বিএনপি-জোট নির্বাচনী লড়াইয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। একাদশ সংসদ নির্বাচন যদি ৫ জানুয়ারির মতো না হয়, যদি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ আগেই সৃষ্টি হয়, তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, দু’ জোট হবে নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী। এর ব্যতিক্রম হলে হিসাব-নিকাশ হবে ভিন্নভাবে। নতুন নতুন জোটের আবির্ভাব ঘটতে পারে। অবশ্য এ দু’ জোটের পাশাপাশিও অন্যান্য জোট গড়ে উঠতে পারে। বিএনপিবিএনপি-জোটের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত না হওয়ায় জাতীয় পার্টি নতুন জোট করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। অর্ধশতের বেশী দলের সমন্বয় একটি জোটের ঘোষণাও দলটির তরফে দেয়া হয়েছে। তবে তার পরবর্তী খবরাখবর পাওয়া যাচ্ছে না। ওদিকে গত ১৩ জুলাই জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকটি পুলিশের বাধায় ঠিকমত হতে পারেনি। ২ আগস্ট বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায় বিভিন্ন দলের নেতাদের আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয় বৈঠকেই জেএসডি, বিকল্প ধারা, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য প্রভৃতি দলের শীর্ষ নেতারা অংশগ্রহণ করেন। এতে প্রতীয়মান হয়, আসম আবদুর রবের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকটিই পূর্নাঙ্গতা পেয়েছে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসার বৈঠকে। এসব দলের তরফে আওয়ামী-জোট ও বিএনপি-জোটের বাইরে একটি বিকল্প জোট গঠনের চেষ্টা চলছে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসার বৈঠকে আমন্ত্রিত হয়ে জাতীয় পার্টির কো- চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে একটা কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। পরে অবশ্য জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ওই বিকল্প জোটে জাতীয় পার্টি যাচ্ছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় পার্টি তার অবস্থান বদলাবে না। দীর্ঘদিন ধরে সে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, সরকারের সঙ্গে আছে; সেখানেই থাকবে। তার নেতৃত্ব নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ ‘সম্মিলিত পরিকল্পনা’ই একটা অংশ মাত্র।
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, আসম আবদুর রব, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না, প্রমুখ যে ‘তৃতীয় ধারা’ বা‘ তৃতীয় বিকল্প জোট গঠনের লক্ষ্যে উদ্যোগী হয়েছেন সে জোটের প্রকৃতি ও লক্ষ্য কী হবে তা জানার আগ্রহ জনমনে তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। কারণ, ওইসব নেতা স্বনামে ধন্য, খ্যাতিমান এবং জনগণের মধ্যে তাদের একটি বিশেষ ইমেজ রয়েছে। এখনো সম্ভাব্য ওই জোটের ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যেভাবে জোট গঠনকে স্বাগত জানিয়েছেন তাতে কারো কারো মনে প্রশ্ন দেখা দিলে বিস্মিত হওয়া যাবে না। তিনি শত ফুল ফুটতে দিতে বলেছেন। কথা ওঠে সংগতকারনেই, তাহলে আসম আবদুর রবের বাসায় একই নেতাদের বৈঠকটি বানচাল করে দেয়া হয় কেন? ক্ষমতাসীনরা কি তাহলে এটা বুঝতে পেরেছেন, ওই জোট তাদের ক্ষমতার জন্য কোনো হুমকি নয়?
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, ঈদের আগেই কথিত জোটটি আত্মপ্রকাশ করতে পারে। প্রাথমিকভাবে পাঁচটি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে জোট যাত্রা শুরু করবে। দলগুলো হলো, বিকল্প ধারা, গণফোরাম; জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং নাগরিক ঐক্য। দলগুলোর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ পত্রিকাটিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, সামনের যে কোন দিন অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন বৈঠকে বসবেন যে বৈঠকে অন্য তিনদলের তিন শীর্ষ নেতাও থাকবেন। জোটের নাম, তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী জানিয়েছেন : মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। বিএনপি-জামায়াত অনেক আগেই জনগণের কাছে পরিত্যক্ত হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গেও জনগণ নেই। তারা জনগণের প্রতি আস্থা না রেখে হেফাজতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। গায়ের জোরে ক্ষমতা আঁকড়ে আছে। দেশবাসীকে দু:শাসন উপহার দিয়েছে। এ অবস্থায় বিকল্প শক্তির উত্থান জরুরি। এসব চিন্তা মাথায় রেখেই আমরা আপাতত পাঁচটি রাজনৈতিক দল মিলে নতুন একটি জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জোটের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেছেন : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবদলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, নির্বিঘেœ সভা-সমাবেশ করতে দেয়াসহ সব ধরনের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, দমন-পীড়ন বন্ধ, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও কালোটাকার মালিক ও ঋণখেলাপীদের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন। আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধ করা ইত্যাদি
অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর বক্তব্য থেকে জোট সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা পাওয়া গেলো বটে, তবে আরো অনেক কিছুই অজানা থেকে গেলো। জোট অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়, সেটা স্পষ্ট। কিন্তু কীভাবে সেটা সম্ভব সে-ব্যাপারে তেমন কিছু জানা গেলোনা। কাঙ্খিত নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর নির্বাচনকালীন সরকার ও তার ভূমিকা। সে বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য জোটের থাকতে হবে। সংসদ বহাল রেখে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অনিশ্চিত রেখে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কেমন হবে তা সহজেই আন্দাজ করা যায়। জোটের অন্তর্ভুক্ত দলগুলো যত ছোটই হোক, জনভিত্তি যতই দুর্বল হোক, তাদের নেতারা কিন্তুু বিখ্যাত এবং তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও প্রাজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই। কিন্তু তাদের নেতৃত্বাধীন জোট শক্তিশালী তৃতীয় বিকল্প হিসাবে জনসমর্থন লাভ করতে পারবে কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহের সুযোগ রয়েছে। জোট যদি কোনো কারণে ক্ষমতাসীনদের সুবিধা করে দেয় তবে যে লাউ সেই কদুই হবে।
জোটের গন্তব্যও ভূমিকা কী হতে পারে, তা নিয়ে এর মধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ক্ষমতাসীনদের বিশেষভাবে উৎফুল্ল হওয়ার প্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, এ ধরনের রাজনৈতিক মেরুকরণ কোথা থেকে কিভাবে উৎসাহিত ও প্রযোজিত হচ্ছে, খুঁজে দেখার প্রয়োজন এড়িয়ে যাওয়া যায় না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের একটি মন্তব্য বিভ্রান্তির অবকাশ সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেছেন : এবার রমজানে বি. চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর ইফতারে গেছেন। কাজেই বি. চৌধুরীকে মিত্র বাহিনীর সদস্য বলেই ধরে নেয়া যায়। আসলেই গঠিতব্য জোট ‘মিত্র বাহিনীর’ অংশ কিনা কিংবা এ ধরনের একটি রং তার ওপর চড়িয়ে দেয়া হচ্ছে কিনা, সেটা জোটনেতাদের খোলাসা করতে হবে। তা না হলে এ জোট গঠনের কোনো গুরুত্ব ও তাৎপর্য জনগণ পর্যায়ে থাকবে না।
আওয়ামী লীগের নেতারা বারংবারই বলে যাচ্ছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে অনেক মেরুকরণ হবে। তার আলামত তো পাওয়াই যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সিপিবি-বাসদও গণতান্ত্রিক বামমোর্চা ‘বিকল্প গণতান্ত্রিক শক্তি’ নামে একটি জোটের ঘোষণা দিয়েছে। এরকম জোট হয়তো সামনে আরও দেখা যাবে। এইসব জোট, যাদের রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রকাশ হিসাবে দেখা হচ্ছে, তা দেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং সর্বোপরি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কতটা নিশ্চিত করতে পারবে, সেটাই দেখার বিষয়। বিএনপি ক্ষমতাসীন দল ও জোটের মোকাবিলায় ২০ দলীয় জোটকে শক্তিশালী করা এবং নতুন নতুন দলকে জোটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চেষ্টা করেও কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি। অবশ্য সম্ভবনা শেষ হয়ে যায়নি। বিএনপির অন্য একটি চিন্তাও আছে। সেটি হলো, বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে মিলে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করা এবং প্রয়োজনে সবাই মিলে ঐকবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়া। যোগাযোগ, সখ্য ও অনুকূল পরিবেশের ওপর এটা নির্ভর করবে। পরিশেষে বলা যায়, রাজনীতিহীন দেশে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি ধীরে ধীরে সরগরম হয়ে উঠছে। লক্ষণ হিসাবে একে নেতিবাচক নয়, বরং ইতিবাচকই বলা যায়। এখন দেখা যাক সামনে কি হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ