Inqilab Logo

রোববার, ০২ জুন ২০২৪, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খায়রুল হক বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন -মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিচারপতি খায়রুল হক ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এটা আদালত অবমাননার শামিল। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক ত্রয়োদশ সংশোধনীর সংক্ষিপ্ত রায়ে দুই মেয়াদের জন্য তত্ত¡াবধায়ক সরকার থাকা উচিৎ বলে প্রকাশ করেছিলেন। পরর্তীতে কার ইঙ্গিতে, কী উদ্দেশ্যে ১৬ মাস পর পূর্ণাঙ্গ রায়ে সে অবস্থান থেকে সরে গেলেন? গতকাল (বৃহস্পতিবার) নয়াপলন্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় দেশের সুশাসন ও গণতন্ত্রের জন্য আশার আলো এই রায়ে সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে নির্ভিকভাবে। রায়ের পর সরকার বা সরকারী দল আওয়ামী লীগ কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পূর্বেই সাবেক প্রধান বিচারপতি বর্তমান আইন কমিশন চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক রায়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করলেন। মনে হলো-এই রায়ের ফলে তাঁর গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। আইন কমিশনের আসনে বসে সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্পর্কে, প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে তিনি যেসব উক্তি করেছেন তা শুধু অশালীনই নয়, তা রীতিমত আদালত অবমাননার সামিল। বিচারপতি খায়রুল হক তাঁর সময় যেসব রায় দিয়েছেন তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তা দেশের মানুষ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে ঐতিহাসিক দলিল উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বাতিল করেছেন। ৭৯৯ পৃষ্ঠার ঐতিহাসিক, দার্শনিক দিক-নির্দেশনামূলক বা দলিল এই রায়টির মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং রাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি ম্যাগনাকার্টা বলেই আমাদের কাছে মনে হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম যে,
তিনি বলেন, ৫ম, ৭ম ও ১৩তম সংশোধনী বাতিলের ফলে আজ দেশে যে সাংবিধানিক, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা দেশের গণতন্ত্রকে পুরোপুরি ভঙ্গুর করে ফেলেছে। বিচারপতি খায়রুল হকের বক্তব্য আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীদের বক্তব্যের মধ্যে কোনও অমিল নেই। একই সুরে বাধা। বিচারপতি খাইরুলের বক্তব্যই আওয়ামীলীগের বক্তব্য। বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের পরেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অস্থীতিশিলতা এবং হতাশা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার হয়ে উঠেছে লাগামহীন। এ রায়ের ফলে তত্তাবধায়ক সরকার বাতিলের ফলসরূপ আওয়ামী লীগ বহুদলীয় গণতন্ত্রের দর্শনের মূল উৎপাটন করে প্রায় একদলীয় একনায়কতান্ত্রিক সরকার চাপিয়ে দিয়েছে। কোন কার্যকরী পার্লামেন্ট নেই। সরকারের কোন জবাবদিহীতা নেই, তাই সকল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে একদলীয় দু:শাসনে রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে। দুর্নীতি আজ সকল নজির ছড়িয়ে গেছে। জনগণ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের জনগণের কোন ম্যান্ডেড নেই- পার্লামেন্টও নেই। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত ঘোষণা, বাকি ১৪৭ আসনে প্রকৃত পক্ষে কোন ভোটারই ভোট দিতে যাননি। সেই পার্লামেন্টে বিচারকদের অভিসংশন, অপসারনের দায়িত্ব পেলে শেষ ভরসার জায়গাটুকু হারিয়ে যাবে। বিচারপতি খাইরুল হকের বক্তব্যকে আমরা ধিক্কার জানাই যে, তিনি কৃতকর্মের জন্য কোন অনুশোচনা তো করেননি বরং একটি অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষথেকে এই রায়ের উপর প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। তারা হতাশ হয়েছেন, সংক্ষুদ্ধ হয়েছেন। তাতো হবেনই। তাদের সৃষ্ট দানব যে তাদেরকেই গ্রাস করতে চলছে তা এখনও তারা বুঝতে পারছেন না। সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগকে আর একবার ধন্যবাদ জানাই এই জন্য যে তাঁরা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। সীমাহীন দুর্নীতি, দ্রæত দুঃশাসন, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অহংকার আজ স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল স্বপ্ন ও অর্জনগুলিকে ভেঙ্গে চুরে চুরমার করে দিচ্ছে। এই দুঃসময়ে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের এই রায় সুশাসনের জন্য, ন্যায়বিচারের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, মানবাধিকারের জন্য, নিঃসন্দেহে আশার আলো। তিনি বলেন, আমরা সংগ্রাম করছি, সুশাসন, ন্যায় বিচার ও গণতন্ত্রের জন্য। আমাদের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্তু এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা হারুনুর রশীদ, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সানাউল্লাহ মিয়া, কায়সার কামাল প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ