Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেনাপোল বন্দরে অবৈধভাবে চার্জ আদায়ের অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভেস্তে যেতে বসেছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতার কার্যক্রম
বেনাপোল অফিস : বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধির করতে সরকারের সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা কাস্টমস ও বন্দর খোলা রেখে কাজ করার নির্দেশ দিলেও বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অসহযোগীতায় সরকারের এই কার্যক্রম ভেস্তে যেতে বসেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওভারটাইম (উৎকোচ), হলিডে চার্জ ও নাইট চার্জ আদায়ের অভিযোগে ব্যবসায়ীরা সরকারের এই সিদ্ধান্তে সহযোগীতায় এগিয়ে আসছে না। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যেখানে ২৪ ঘণ্টা বন্দর খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে সেখানে এসব চার্জ প্রযোজ্য হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ সব চার্জই আদায় করে নিচ্ছেন। এসব চার্জ আদায় করা হলে তারা ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে নিরুৎসাহিত হবেন। এতে সরকারের লক্ষ্য অর্জিত হবে না।
বাংলাদেশ ও ভারতের স্থলবাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। এই বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও বন্দর ব্যবহারকারী সূত্রে জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে গতিশীলতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে কাস্টমস ও বন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার কার্যক্রম চালু করা হয় ১ আগস্ট থেকে। সে লক্ষ্যে উভয় দেশের কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ কার্যক্রম চালাচ্ছে। বন্দর ও কাস্টমস ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ইতিবাচক। এর পরিপূর্ণ সুফল পেতে প্রতিদিন ভারত থেকে ৮০০ থেকে এক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোলে প্রবেশ করতে হবে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় ও স্থান স্বল্পতার কারণে এ পরিমাণ পণ্য বন্দরের অভ্যন্তরে রাখা সম্ভব হবে না। এ মুহূর্তে বন্দরের ধারণক্ষমতা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টন। আর পণ্য রয়েছে দুই লাখ টন। ক্রেন ও ফর্ক লিফটের মতো যন্ত্রাংশ নষ্ট থাকায় পণ্য লোড-আনলোডে সমস্যা হচ্ছে। অবিলম্বে বন্দরের এসব সমস্যা দূর করার তাগিদ দেন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী নেতারা।
কিন্তুু বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন বিকেল পাঁচটার পর প্রতিটি পণ্যচালানের বিপরীতে অলিখিত ৫০০ টাকা ওভারটাইম চার্জ আদায় করছে। এছাড়া বন্দর চার্জের সঙ্গে এক হাজার ২৫৭ টাকা ১১ পয়সা হলিডে চার্জ ও ৭১৮ টাকা ৩৭ পয়সা নাইট চার্জ হিসেবে আদায় করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনও দেখা গেছে, একটি পণ্য চালানের বন্দর চার্জ এসেছে মাত্র ৫০০ টাকা সেখানে ৫টার পর কাজ করলে চার্জ দিতে হচ্ছে প্রায় তিন হাজার টাকা। আর এ কারণে অনেক আমদানিকারক বন্দরের চার্জের কারণে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। বিষয়টি জানার পরও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো কথা বলছেন না।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, সরকারি নির্দেশে ২৪ ঘণ্টা কাজ করলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের এসব চার্জ নিলে ব্যবসায়ীরা ছুটির দিনে কাজ করতে নিরুৎসাহিত হবেন। এতে করে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। সেই সঙ্গে সরকারের ছুটির দিনে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত ভেস্তে যাবে।
সরকারের বার বার বন্দর সচলের উদ্যোগ নিলেও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নানা চার্জের কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। সরকারের একটি ভালো সিদ্ধান্ত ভেস্তে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের স্বার্থে সরকারের বিশেষ ঘোষণায় সবাই কাজ করতে চাইলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের লোকজন কাজ করতে চায় না। ওভারটাইম, হলিডে চার্জ, নাইট চার্জ ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে না নিলেও বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ তা আদায় করছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা প্রধান কার্যালয়ের অজুহাত দেখায়। এ ব্যাপারে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে পত্র পাঠানো হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ল্যান্ডপোর্ট সাব-কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, ‘সরকারের নতুন উদ্যোগ ভেস্তে যাবে যদি বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের হলিডে, নাইট শিফট ও ওভারটাইম চার্জ নেওয়া বন্ধ না করে। ভারত না নিলেও বেনাপোলে এসব চার্জ নেওয়ায় আমদানিকারকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আবার পণ্য খালাসের জন্য বন্দরে গিয়ে পর্যাপ্ত জায়গা ও শেড ইনচার্জদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।’২৪ ঘণ্টা বাণিজ্য সফল করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক হতে হবে বলে মত দেন তিনি।
এ ব্যাপারে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘বন্দরে বিভিন্ন ধরনের চার্জ সরকার নির্ধারিত ট্যারিফ অনুযায়ী নেওয়া হয়। আমরা তা পরিবর্তন করতে পারি না। সরকার আমাদের ছুটির দিনে বন্দর খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ওভারটাইম, হলিডে, নাইটচার্জ নিয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি কিন্ত যারা বিকেলে ৫ টার পর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ওবার টাইমের নামে ৭০০ টাকা আদায় করছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেনাপোল বন্দর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ