Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাবিতে সেশন জট ফল প্রকাশে অনিয়ম

| প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এহসান আব্দুল্লাহ : সেশন জটের ফাঁদ থেকে বের হতে পারেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েকটি বিভাগ। সেশনজটের কবলে পড়া এইসব বিভাগ সমূহের মাঝে আছে আইন, গণিত, ভুগোল, পদার্থ, শিক্ষা ও গবেষণা, টেলিভিশন চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগ ইত্যাদি
নির্দিষ্ট সময়ে সেমিস্টার শেষ করতে না পারা, ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘ সময়, ফল বিপর্যয় ইত্যাদী নানা সমস্যায় এইসব বিভাগের সেশন জট যেন কাটিয়ে উঠতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। এছাড়া কয়েকটি বিভাগে শিক্ষকরা একাডেমিক কার্যক্রম বাদ দিয়ে বাহিরের নানা গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় শিক্ষার্থীদের সময়মতো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়াতেও তারা পড়ছে সেশন জটের কবলে। তবে এইসব বিভাগ অতি দ্রæতই এইসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে।
জানা যায়, আইন বিভাগের ¯œাতকোত্তর ২০১১-১২ বর্ষের শিক্ষার্থীদের এখনো সেমিস্টার কোর্স অনুষ্ঠিত হয়নি। অন্যদিকে ২০১২-১৩ বর্ষের শিক্ষাথীদের প্রথম সেমিস্টার এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। অথচ এই বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থীদের এখনো ক্লাস শুরু হয়নি। এছাড়াও আইন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থীদের ২য় বর্ষ পরীক্ষার ফলাফল ও এখনো প্রকাশ হয়নি অথচ তাদের ৩য় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আইন বিভাগে অন্যান্য বিভাগের তুলনায় অনেক দেরি করে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করায় শিক্ষার্থীরা বার কাউন্সিলসহ নানা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়রানীর শিকার হতে হয়।
বিভিন্ন প্রজেক্টের গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সময়মত কোর্স শেষ করতে পারছেন না পদার্থ বিভাগের শিক্ষকরা। ফলে সেখানেও কয়েক মাসের জট রয়েছে। বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তাদের পরীক্ষা নিয়মিত হয় না। পরীক্ষা হলেও তার ফলাফল প্রকাশ হতে অনেক দেরী হয়। জানা যায়, বিভিন্ন কোম্পানী বা সংস্থার গবেষণা প্রজেক্ট আসে তাতেই ব্যস্ত থাকেন শিক্ষকরা। অথচ ক্লাসের গবেষণায় তারা বেশি মনোযোগ দেন না।
এদিকে, একাডেমিক জটিলতার কারনে অন্যান্য বিভাগ থেকে প্রায় এক সেমিস্টার পিছিয়ে আছে ক্রিমিনোলজি বিভাগ। কোর্স ফি বেশী থাকায় তা কমিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন করায় ৬ মাসের সেশন জটে পড়ে টেলিভিশন চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের ২০১৩-১৪ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে তাদের এ সেশন জট আর কমিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিভাগের পরবর্তী ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এমন সেশন জটে পড়তে হয়নি।
বিজ্ঞান অনুষদের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতি না থাকায় তাদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় বর্ষ সমাপনী দিয়ে। এর ফলে অতিরিক্ত সংখ্যক ক্লাস ও পরীক্ষার ফাঁদে পড়ে তারা। এদিকে সেমিস্টার পদ্ধতি নেই ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগে। তাদের আছে বাৎসরিক সমাপনি পরীক্ষা। এর ফলে প্রায় ৫/৬ মাসের সেশনজটে ভুগছে ¯œাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা।
খোজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থীরা মাত্র তাদের ¯œাতকোত্তর এর কয়েক মাস ক্লাস সম্পন্ন করেছেন, যেখানে একই সেশনের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ¯œাতকোত্তর সম্পন্ন করে ফেলেছে। আর ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থীরা এখনো তাদের ¯œাতকের ফলাফল না পাওয়ার কারনে ভর্তি হতে পারেননি ¯œাতকোত্তর শ্রেণীতে, যেখানে একই সেশনের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ¯œাতকোত্তর শ্রেণীর ক্লাস আরাম্ভ করে দিয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষার ফল প্রকাশে এই বিভাগে প্রায় ৪ থেকে ৫ মাস অতিবাহিত হয়ে যায়। ফলে শিক্ষার্থীরা নানা জটিলতা শিকার হন।
গণিত বিভাগেও রয়েছে ফলাফল প্রকাশে অনিয়মের অভিযোগ, এই বিভাগে পরীক্ষা সময়মতো অনুষ্ঠিত হলেও ফল প্রকাশে তাদের পেরিয়ে যায় প্রায় ৪ থেকে ৫ মাস ফলে কোন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলে তাকে পুনরায় পূর্বের শিক্ষাবর্ষে ফিরে যেতে পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। এর ফলে তারা ৫-৬ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর পূর্বের শিক্ষাবর্ষে ফিরে গেলে দেখা যায় তাদের অর্ধেক সময় ক্লাস ও প্রথম পর্ব পরীক্ষায় শেষ হয়ে যায়। ফলে সেই শিক্ষার্থী আবার একই ঝামেলায় পড়েন।
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিভাগের তুলনায় প্রায় এক সেমিস্টারের সেশন জটে আটকে আছে। এ বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষকরা এস্যাইনমেন্ট, ইনকোর্স, মিডটার্ম ও সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষা নিয়ে তার ফলাফল দিতে দেরি করায় এমন সমস্যা হয়েছে।
নির্দ্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা নেওয়া হলেও তার ফলাফল প্রকাশ করতে দেরি হওয়ায় এ সমস্যা এখন মারাত্বক আকার ধারণ করেছে। অধিকাংশ বিভাগে এ সমস্যার কারণেই সেশন জট হয়ে থাকে। এমন ফল প্রকাশে অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরী নির্দ্দিষ্ট করে সমস্যাগ্রস্থ বিভাগের নাম জানতে চান, তাকে নাম বলা হলে তিনি বলেন আমাকে দেখে বলতে হবে। তাছাড়া এইসব ব্যাপারে টেলিফোনে কথা বলা নিষেধ। এই বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সাথে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ