Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুঁজি ও স্থান সঙ্কটে দুশ্চিন্তায় খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীরা

| প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খুলনা ব্যুরো : আর তিন সপ্তাহ পরে ঈদ-উল-আযহা অনুষ্ঠিত হবে। কোরবানীর মাত্র ২৬দিন বাকি থাকলে প্রস্তুতি নিতে পারছেন না খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীরা। পুঁজি ও স্থান সঙ্কট, ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওয়া অনাদায়ী এবং চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক ঋণ না পেয়ে গুটিয়ে যেতে বসেছে জমজমাট চামড়া ব্যবসা। স্থান ও পুঁজি সঙ্কট উত্তরণে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় একশ’ বছর পূর্বে নগরীর শেরে বাংলা রোডের পাওয়ার হাউস মোড়ে গড়ে ওঠে কাঁচা চামড়া ব্যবসা। জমজমাট ওই ব্যবসায় তখন অন্তত তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান ছিল। এখন মাত্র ১২জন ব্যবসায়ী কোন রকমে টিকে আছে। এ ব্যবসায়ীদের নিজস্ব কোন দোকান না থাকায় মালিকদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে তারা ব্যবসা পরিচালনা করছে। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়েও তারা ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে দীর্ঘদিনের বকেয়া পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। এতে তারা পুঁজি সঙ্কটে পড়েছে। আবার ব্যবসার জন্য দোকান পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে তাদের। ভাড়া নেয়া ঘরও ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলে পানি চুইয়ে কাঁচা চামড়া পচে যাচ্ছে। বাড়িওয়ালা ঘর ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। কয়েকজন ছেড়ে দিয়েছে দোকানও। দৈন্যতায় বাকী এখন পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া ব্যবসা ছাড়ার!
ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী মোঃ আমান উল্লাহ, মোস্তফা, মনোদাস ও শহিদুল ইসলামকে ঘর ছেড়ে দিতে হয়েছে। ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা অগ্রিম এবং মাসিক ৪ থকে ৬ হাজার টাকা ভাড়ায়ও ঘর পাচ্ছেন না তারা। সিটি করপোরেশনের কাছে প্রতিবছর ব্যবসায়ীরা জায়গা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করলেও কর্ণপাত করেন কর্তৃপক্ষ। নগরীর জোড়াগেট, গল্লামারী অথবা অন্য কোথাও জায়গা খুঁজতে বললেও কার্যকর কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না কেসিসি। খুলনা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ আমানউল্লাহ জানান, বিপদে আছি। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে দেখা করেছি। তিনি আমাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। জোড়াগেট বাজারটি জমাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এখানে শুধু বছরে একবার কোরবানির হাট বসে। আর সারা বছর জায়গাটি খালি পড়ে থাকে। এখানে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করলে সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসায়ীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচতে পারবে। ব্যবসায়ীরা বলছে, কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ দেয়া হয় চলতি হিসাবের বিপরীতে। তারপরও ব্যাংকে সম্পত্তির দলিল জমা দিতে হয়। চামড়া বিক্রির টাকা ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পড়ে আছে অন্তত ৮ কোটি টাকা। ব্যবসা ভালো নয় বলে তারাও টাকা দিচ্ছে না। একমাসও হাতে সময় নেই; আবার চামড়া কেনার মৌসুম। এ অবস্থায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী মোঃ আব্দুস সালাম বলেন, খুলনার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা পথে বসতে চলেছে। তারা দেনায় জর্জরিত। সুদে টাকা এনে ব্যবসা করতে হচ্ছে। সরকার একটু নজর দিলে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচতে পারতাম। না হলে ব্যবসা হারিয়ে অনেকে পথে বসতে হবে! ১৯৯৬ সালে ৫৫ লাখ টাকা হারিয়েছে ট্যানারিতে; যা অনাদায়ী। ব্যবসায়ীদের গত তিন বছরের বকেয় টাকাও পরিশোধ করেনি ট্যানারিগুলো। এখন কোন রকম সংসার চলছে; এ অবস্থায় ট্যানারি মালিকরা পাওয়া টাকা না দিলে বিপদে পড়বে খুলনার ব্যবসায়ীরা।
গত বছরের মতোই এবারও চামড়ার মূল্য তুলনায় সস্তা হতে পারে। বর্তমানে গরুর ১নং চামড়া প্রতি বর্গ ফুট ৬০টাকা, গরুর ২নং চামড়া দাম ২৪টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি বর্গ ফুট। এছাড়া খাসি ১নং ২৫টাকা ও বাকি সব চামড়া প্রতি বর্গ ফুটের দাম ২০টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ