Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়ার কুমারখালী ডিগ্রী কলেজের এক গর্ত ভরাটেই ৩৭ লাখ!

| প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম


এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে : প্রকল্পের নাম হল কুমারখালী ডিগ্রী কলেজের গর্ত ভরাট। মাটি দিয়ে গর্ত ভরাটে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৩৭ লাখ টাকা। কাগজ কলমে গর্ত ভরাটের শতভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে এমন প্রতিবেদন জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বরাদ্দের পুরো টাকা প্রকল্পের চেয়ারম্যান তুলে নিয়েছেন।
শুধু কুমারখালীতে নয় এমন চিত্র খোকসা উপজেলার কয়েকটি প্রকল্পেও অনিয়ম হয়েছে। সেখানেও লাখ লাখ টাকা তচরুপ করা হয়েছে। অনিয়ম দুর্নীতি করে সরকারি কর্মকর্তাদের সহায়তায় টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
কুমারখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাহমুদুল ইসলাম জানান,‘গর্ত ভরাটের বরাদ্দের পুরো টাকা প্রকল্প সভাপতি তুলে নিয়েছে। তবে কাজ এখনও বাকি আছে। কাজ শেষ না হওয়ায় তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা বন্ড রেখে দেওয়া হয়েছে। কাজ শেষ হলে সেই টাকা দেওয়া হবে।’ তিনি এও জানান, এই বন্ড রাখারও কোন বিধান নাই।
তবে কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ হোসেন বলেন,‘গর্ত ভরাটের ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। এব্যাপারে কোন কাগজপত্রও পায়নি।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্র জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষাবেক্ষণ (কাবিটা) কর্মসূচির ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে কুমারখালী ডিগ্রী কলেজের গর্ত ভরাটের জন্য ৩৭ লাখ ৯ হাজার ৭০৮ টাকা বিশেষ বরাদ্দ ছাড় হয়। গত ২২ জুন পিআইও কার্যালয়ে এবরাদ্দের একটি চিঠি আসে। ২৯ জুন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজের অনুমোদন দেন। স্থানীয় কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাংসদ আবদুর রউফের ডিওলেটারে কাজের প্রকল্প চেয়ারম্যান হন আলতাব মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি সাংসদের আপন খালাতো ভাই। কলেজের একটি ডোবার ৮০ ফিট দীর্ঘ ও ৬০ ফিট প্রস্তে ৮ ফিট গভীরে মাটি ভরাট করার কথা।
তবে মাত্র একদিন শেষে ৩১ জুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠান। একাজে বরাদ্দ দেওয়া পুরো টাকা ব্যয় হয়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, কাগজ কলমে কাজ শেষ দেখানো হলেও কাজ শুরু হয় জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে। প্রায় ২০ দিন কাজ চলে। তবে মাটির পরিবর্তে গর্তে বালু ফেলা হয়। এই বালু স্থানীয় জিলাপীতলায় গড়াই নদ এলাকা থেকে ট্রাকে করে নিয়ে আসা হয়।
পিআইও মাহমুদুল ইসলাম বলেন,‘আমার চাকুরী জীবনে একটি গর্ত ভরাটের বিপরীতে একটি প্রকল্পে এত টাকার বরাদ্দ এটাই প্রথম দেখলাম।’
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিন কলেজে গিয়ে কথা অধ্যক্ষ শরীফ হোসেন ও উপাধাক্ষ বিনয় কুমার সরকারের সঙ্গে। কলেজের সামনে খোলা মাঠের সামনে থাকা একটি পুকুর ঘুরে দেখান তারা।
দুজন শিক্ষক জানান, এই কাজের জন্য অনেক আগে কলেজের সভাপতি ও সাংসদ আবদুর রউফ মৌখিক ভাবে জানিয়েছিলেন। এর বেশি কিছু জানি না। এনিয়ে কোন সভা বা রেজুলেশনও হয়নি। হঠাৎ জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ট্রাকে করে বালু নিয়ে ডোবা ভরাটের কাজ করতে দেখা গেল। এব্যাপারে ইউএনওর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছিলেন সেখানে একটি প্রকল্পে নগদ ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে।
বালু ফেলার অংশ দেখিয়ে দুজন শিক্ষকই জানান, দেখে মনে হচ্ছে প্রস্থে ২৫ থেকে ৩০ ফিট বালু ফেলা হয়েছে।
কুমারখালী উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির এক সদস্য নামপ্রকাশ না করার শর্তে জানান, কাজ যদি ঠিক ভাবে না হয়ে থাকে এবং পুরো টাকা উঠে যায় তবে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতা করা উচিত।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্পের সভাপতি ও কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলতাব মাহমুদ বলেন, ‘অভিযোগ সঠিক না। কাজ ঠিক ভাবেই করা হয়েছে। আর কোন কাজ করা হবে না। টাকাও পাওয়া হয়েছে।’
মাটি ও শ্রমিকের পরিবর্তে বালু ও ট্রাক ব্যবহারের ব্যাপারে তিনি জানান, ‘এখন ট্রাকে এভাবেই কাজ করা হয় বলে জানি।’
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহীনুজ্জামান জানান, ‘কাজ পুরোপুরি বুঝে নেওয়ার পর বাকি টাকা দেওয়া হবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ