Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাঙনের কবলে অস্তিত্ব সঙ্কটে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন

| প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্বেচ্ছাশ্রমে কেয়াগাছ রোপণ করে ভাঙন রোধের চেষ্টা
শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার ব্যুরো : ভাঙনের কবলে পড়ে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। দ্বীপের চারপাশে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি দীর্ঘ দিনের হলেও ভাঙনের কবলে পড়ে ৮.৩ বর্গ কিলোমিটারের দ্বীপটি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। দ্বীপের ভাঙন রোদে এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে দ্বীপবাসী অনেক আন্দোলন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দেশের মানচিত্র থেকে একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন এখন সেন্টমার্টিনবাসী।
কিন্তু তাই বলে বসে থাকেনি দ্বীপের মানুষ। সেন্টমার্টিন দ্বীপের অস্থিত্ব ও সৌন্দর্য রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে এগিয়ে এসেছেন দ্বীপের কিছু মহৎ ব্যক্তি। সরকারি কোন সহযোগিতা না পেলেও স্বেচ্ছাশ্রমে তাদের এই প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসনীয়। ভাঙনকবলিত এলাকায় তারা স্বেচ্ছাশ্রমে কেয়াগাছ রোপন করে ভাঙন রোধে এগিয়ে আসেন। গত ৭ আগস্ট সোমবার সকালে সেন্টমার্টিন দ্বীপে এই মহতী কাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি মেম্বার আলহাজ্ব মোহাম্মাদ হাবিবুর রহমান খান ও সাবেক মেম্বার আব্দুল আমিন। দ্বীপ রক্ষার এই মহতী কাজে স্বেচ্ছাশ্রমে আরো যোগ দিয়েছেন স্থানীয় আরো কিছু মানুষ। এদের মধ্যে রয়েছেন, মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ, কটেজ ম্যানেজার মোহাম্মাদ আলম, কামাল ও আব্দুর রহিমসহ অনেকেই।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়নের মেম্বার আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান খান প্রকাশ হাবিব খান এপ্রসঙ্গে বলেন, দ্বীপ রক্ষায় বিশেষতঃ ইতিহাস বিখ্যাত কেন্দ্রীয় কবরস্থানের ভয়াবহ ভাঙন রোধে সরকারী বরাদ্দ না পেলেও সর্বসাধারণকে সাথে নিয়ে কয়াগাছ রোপন করে ভাঙনরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, শীতের পর্যটন মৌসুমে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি দেশী-বিদেশী পর্যটক, ভিআইপি, পদস্থ কর্মকর্তাসহ সকলের কাছে স্বপ্নের দ্বীপ হয়ে যায়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে এই দ্বীপের কথা কারও মনে থাকেনা। অসহায় দ্বীপবাসীর কান্না তাঁদের কর্ণকুহরে পৌঁছেনা। এমনকি ভয়াবহ ভাঙন রোধে কার্যকরী উদ্যোগ এবং ক্ষতিগ্রস্থদের খোঁজ খবর পর্যন্ত নেয়া হয়না। তিনি জরুরী ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় কবরস্থানের ভয়াবহ ভাঙন রোধে এগিয়ে আসার অহবান জানান।
উল্লেখ্য ঐতিহাসিকদের মতে সেন্টমার্টিন দ্বীপে মানুষের বসবাস শুরু হয় প্রায় ৩ শতাধিক বছর আগে। দ্বীপে বসতি শুরুর পর এভাবে কোনোদিন এখানে পানি ওঠেনি। এ রকম ভয়াবহ ভাঙনও আগে কোনো সময় দেখা যায়নি। জোয়ারের পানি আর সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে দ্বীপে চারপাশেই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। বেশি ভেঙেছে উত্তর-পশ্চিম অংশে। এদিকে বিস্তীর্ণ কেয়া বন সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। দ্বীপের একমাত্র কবরস্থানটির প্রায় দেড়শ’ ফুটেরও বেশি সাগরে তলিয়ে গেছে। মাটি সরে যাওয়ায় স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িসহ আশপাশের কয়েকটি সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে কোন কোন সময় কবর থেকে বেরিয়ে আসে মানুষের কঙ্কালও।
দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, বসতি শুরুর দীর্ঘ তিন শত বছর পর বিগত বছরগুলোতে পূর্ণিমার জোয়ারে হঠাৎ সেন্টমার্টিনে জলোচ্ছ¡াসের সৃষ্টি হয়। দ্বীপের চতুর্দিকে ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনের কবলে পড়ে দ্বীপের চারপাশে বিশাল অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। ভাঙনের কবলে পড়ে দ্বীপের আটটি বসতঘরসহ প্রায় ২১টি স্থাপনা সাগরে বিলীন হয়ে যায়। এসময় দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিম অংশে অবস্থিত একমাত্র কবরস্থানটির ১৫০ ফুটেরও বেশি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে গেছে। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়ে দ্বীপের বাসিন্দারা।
বঙ্গোপসাগরের করাল গ্রাসে ভেঙে আশঙ্কাজনকভাবে দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানচিত্র। সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর এবং পশ্চিম অংশে ভাঙছে বেশী। এমনিতেই স্বাভাবিক সময়েও পূর্ণিমা-অমাবশ্যার ‘জো’ চলাকালে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে দ্বীপের বিভিন্ন অংশে নিত্য নতুন ভাঙন সৃষ্টি হয়। উপরন্ত ঘুর্ণিঝড় মোরার আঘাত এবং অবিরাম বর্ষণে বর্তমানে ভাঙন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দ্বীপের চারপাশে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে ভাবনায় পড়েছে দ্বীপের প্রায় ৯ হাজার বাসিন্দা। সরকারি-বেসরকারিভাবে স্থাপনা নির্মিত হলেও নির্মিত হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ। পর্যটন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনা ধরে রাখতে মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি দীর্ঘ দিনের।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর আহমদ বলেন ‘দ্বীপের চতুর্দিকে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের কবলে পড়ে বহু বসতবাড়ি ও সরকারি বেসরকারী অবকাঠামো সাগরে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙন রোধে ক্ষতিগ্রস্থরা ব্যক্তি উদ্যোগে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে চাইলে প্রশাসন বাধা প্রদান করে। সেন্টমার্টিনদ্বীপের চতুর্দিকে এ দ্বীপের পরিবেশ, পর্যটন ও জীববৈচিত্র রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনকে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ