হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মোবায়েদুর রহমান : আওয়ামী লীগ অনেক দিন থেকে বলে আসছে যে বিরোধী দলসমূহ, বিশেষ করে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন নাকি সংবিধানে অনেক কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। কিন্তু বিগত ৪৬ বছরের ইতিহাস সেকথা বলে না। এই ৪৬ বছরে দেখা যায় যে, সংবিধানে ১৬টি সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করা সংশোধনীগুলো হলো (১) ৪র্থ সংশোধনী, (২) ৫ম সংশোধনী, (৩)৮ম সংশোধনী, (৪) ত্রয়োদশ সংশোধনী এবং (৫) ষোড়শ সংশোধনী। আওয়ামী লীগ আরো বলে আসছে যে, দেশে যতগুলো সামরিক আইন এসেছে সবগুলো নাকি বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি এনেছে। বাংলাদেশের ৪৬ বছরের ইতিহাসে এই অভিযোগের সমর্থনে কোনো প্রমাণ পাওয়া বা ঘটনা দেখা যায় না। বরং ৪৬ বছরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এই সাক্ষ্যই দেয় যে, আওয়ামী লীগই বরং সংবিধানের কাটাছেঁড়া করেছে এবং যে তিনটি সামরিক শাসন এসেছিল তার দুটিই আওয়ামী সমর্থিত বা আওয়ামীপন্থী। আর একটি সামরিক শাসন মার্কা যে জরুরি শাসন এসেছিল সেটিও আওয়ামী লীগের অনুক‚লে এবং বিরোধীদলের প্রতিকূলে ছিল। আমরা এক একটি ঘটনার উল্লেখ করে আমাদের বক্তব্যের যথার্থতা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবো।
সর্ব প্রথমে সংবিধানের ওপর সবচেয়ে ধারালো এবং মেজর যে অপারেশন করা হয়, সেটি করা হয় ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে সংবিধান প্রণীত হয়। ঐ সংবিধান ছিল বহুদলীয় পার্লামেন্টারি সিস্টেম। সেই সংবিধানটি টিকে ছিলো মাত্র দুই বছর। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম সংবিধানের খোলনলিচা পুরাপুরি পাল্টানো হয়। পার্লামেন্টারি পদ্ধতির পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি চালু করা হয়। বহু দলের পরিবর্তে একদলীয় শাসন চালু হয়। এই একদলের নাম দেওয়া হয় বাকশাল। যে সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের এই মেজর অপারেশন করা হয় সেটির নাম ছিল ৪র্থ সংশোধনী। যে সংসদ এই সংশোধনী পাস করে সেখানে বিরোধী দলীয় সদস্য ছিলেন মাত্র ৭ জন। ২৯৩ জন সদস্য ছিলেন সরকার দলীয়। তখন বিএনপির জন্ম হয়নি এবং জামায়াতে ইসলামীসহ সমস্ত ইসলামী দল নিষিদ্ধ ছিলো।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একটি রক্তাক্ত এবং মর্মস্পর্শী ঘটনার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়। এই মর্মন্তুদ ঘটনার সময়ও বিএনপির জন্ম হয়নি এবং ইসলামী দলসমূহ নিষিদ্ধ ছিলো। তাই এই রক্তাক্ত ঘটনার সাথে তাদের কোনো রকম সম্পৃক্ততা ছিলো না। কিন্তু এখানে একটি জিনিস লক্ষ করার বিষয় এই যে, এই পট পরিবর্তনের পরেও কিন্তু ৭২’ এর সংবিধান জারি ছিলো এবং জাতীয় সংসদও বহাল ছিল। অর্থাৎ ৭২’ এর সংবিধানও বাতিল করা হয়নি এবং জাতীয় সংসদও ভাঙ্গা হয়নি। একই বছর অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর যে সামরিক অভ্যুত্থান সংঘঠিত হয় সেই অভ্যুত্থানের নায়ক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ। তাঁর ডান হাত ছিলেন ঢাকার ৪৬ নম্বর ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার কর্ণেল শাফায়াত জামিল। তারা দুজনই কড়া আওয়ামীপন্থী ছিলেন। খালেদ মোশাররফ ছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য রাশেদ মোশাররফের আপন ভাই। খালেদ মোশাররফ অভ্যুত্থান করার পর ঢাকার ধানমন্ডিতে ঐ অভ্যুত্থানের সমর্থনে রাশেদ মোশাররফ এবং খালেদ মোশাররফের মাতার নেতৃত্বে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়। অভ্যুত্থান ঘটানোর পর প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদকে অপসারণ করা হয়, জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া হয় এবং সংবিধান বাতিল করা হয়। ১৫ই আগস্টের পরেও যে সংবিধান এবং জাতীয় সংসদ চালু ছিল ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ সেগুলি বাতিল করেন এবং প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মাদ সায়েমকে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সি এম এল এ) বানান। এছাড়া তিনি নিজেকে ব্রিগেডিয়ার পদ থেকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করেন। তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গ্রেফতার করেন। তখনও বিএনপির জন্ম হয়নি এবং জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো রাজনীতি করার অধিকার পায়নি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, প্রথমবার সংবিধানের ওপরে যে মেজর সার্জিক্যাল অপারেশন হয়েছে সেটি বিরোধী দল করেনি। তার দশ মাস পর যে সংবিধান বাতিল এবং সামরিক শাসন জারি হয়েছে সেটিও বিরোধী দল করেনি।
১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান সংঘঠিত হয়। তখন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান খালেদ মোশাররফের হাতে বন্দী ছিলেন। ৭ই নভেম্বরের অভ্যুত্থানের পেছনে প্রধান অনুঘটক ছিলেন কর্ণেল আবু তাহের, জাসদ, জাসদপন্থী বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা এবং সাধারণ সিপাহী। ঐ অভ্যুত্থানে তৎকালীন জাসদ নেতা এবং বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু শাহবাগের সামনে ট্যাংকের ওপর উঠে উল্লাস করেছিলেন। অভ্যুত্থানের পর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সৈনিকরা মুক্ত করে আনে। তখনও বিএনপির জন্ম হয়নি এবং ইসলামী দলগুলো রাজনীতির অধিকার পায়নি। এখান থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ১৫ই আগস্ট, ৩রা নভেম্বর এবং ৭ই নভেম্বর যেসব পট পরিবর্তন ঘটেছে সে সবের পেছনে বিরোধী দলের কোনো ভ‚মিকা ছিলো না, কারণ তখন তাদের ভ‚মিকা থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
\ দুই \
৭ই নভেম্বরের অভ্যুত্থান ঘটার পর পরই প্রেসিডেন্ট ও সিএমএলএ আবু সাদাত সায়েম সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানগণকে উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বা ডিসিএমএলএ নিযুক্ত করেন। জিয়াউর রহমানও সেই সুবাদে ডিসিএমএলএ হন। পরবর্তীতে তিনি সিএমএলএ এবং প্রেসিডেন্ট হন। জেনারেল জিয়া সামরিক আইন উঠিয়ে দেন এবং রাজনীতি চালু করেন। আওয়ামী লীগ স্বনামে রাজনীতি শুরু করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর নেতা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাকশাল চালু করেন এবং এই দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ইসলামী দলগুলোর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রথমে জাগো দল এবং পরে বিএনপি গঠন করেন।
খালেদ মোশাররফ অভ্যুত্থান করার পর সেই যে সংবিধান বাতিল করেন তখন থেকে দেশে আর কোনো সংবিধান ছিলো না। মার্শাল ল’ প্রোক্লামেশন এবং প্রেসিডেনশিয়াল অর্ডারের মাধ্যমে দেশ চলছিলো। জেনারেল জিয়ার আমলে সংবিধান প্রণীত হয়। এই সংবিধানে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি এবং বহু দলীয় গণতন্ত্রের ব্যবস্থা থাকে। তিনি দেশে সাধারণ নির্বাচন দেন। ঐ নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ গঠিত হয় সেই সংসদ সংবিধান অনুমোদন করে। সেই সংবিধানে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি রাখা হয় ঠিকই, কিন্তু একদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে বহু দলীয় রাজনীতির ব্যবস্থা চালু করা হয়।
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ছিলেন কট্টর আওয়ামীপন্থী। এই কথাটি সকলেই জানেন। আপিল বিভাগের দুইজন বিচারপতিকে ডিঙ্গিয়ে খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি করা হয়। যাদেরকে ডিঙ্গানো হয় তারা হলেন বিচারপতি আব্দুল মতিন এবং বিচারপতি শাহ আবু নঈম। বিচারপতি খায়রুল হক ৫ম, ৮ম এবং ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে এই তিনটি সংশোধনী বাতিল অর্থাৎ আওয়ামী লীগের ভাষায় সংবিধানের কাটাছেঁড়াতে বিরোধী দলের কোনো ভূমিকা ছিল না। অনুরূপভাবে যদি সামরিক শাসনের কথা বলা হয় তাহলে সেখানেও দেখা যাবে যে, এক্ষেত্রেও বিরোধী দলসমূহের কোনো ভূমিকা ছিলো না। আমরা আগেই দেখিয়েছি যে, এর আগে যতগুলো সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে সেগুলোর পেছনেও বিরোধী দলগুলোর কোনো ভ‚মিকা ছিলো না। ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদ যে সামরিক শাসন জারি করেন সেটিতো হয়েছিল রীতি মতো বিএনপির বিরুদ্ধে। তখন দেশে প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। তিনি ছিলেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তাকে উৎখাত করে সামরিক শাসন জারি করেন জেনারেল এরশাদ। ঐ সামরিক শাসনও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষেই হয়েছিল। সেই এরশাদ এবং তার জাতীয় পার্টি আজ আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় মিত্র।
\ তিন \
বিচারপতি খায়রুল হক ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেন। ত্রয়োদশ সংশোধনীতে ছিলো কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা। আওয়ামীপন্থী প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক কেয়ারটেকার ব্যবস্থা বাতিল করেন ঠিকই, তবে সাথে সাথে একথাও বলা হয় যে, পার্লামেন্ট চাইলে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হতে পারে। হাসিনা সরকার কেয়ারটেকার বাতিল মেনে নিলেন ঠিকই, কিন্তু পরবর্তী দুটি নির্বাচন যে কেয়ারটেকারের অধীনে হতে পারে, রায়ের সেই অংশটুকু তিনি গ্রহণ করেননি।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হলো চিফ জাস্টিস এসকে সিনহার প্রধান বিচারপতিত্বের কালে। এখানেও বিএনপি এবং ইসলামী দলগুলোর কোনো ভূমিকা ছিল না। বিচারপতি সিনহা প্রধান বিচারপতির নিয়োগ পেয়েছেন আওয়ামী লীগ শাসন আমলে। বিচারপতি খায়রুল হক তিনজন প্রেসিডেন্ট এবং তিনটি শাসন কালকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। সেগুলো হলো খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এরশাদের শাসন কাল। বিচারপতি সিনহা কোনো প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী এবং তার শাসন কালকে অবৈধ ঘোষণা করেন নি। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করার সময় তিনি এবং তার সহকর্মীগণ যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সেটি আওয়ামী লীগের আইনের শাসনের দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে।
\ চার \
রবিবার ৬ই আগস্ট এই লেখা লিখছি। ইতোমধ্যেই ৭৯৯ পৃষ্ঠার এই রায়ের সারাংশ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে পুরো রায়টি পড়া যাচ্ছে। মঙ্গলবার ৮ই আগস্ট যখন এই লেখাটি প্রকাশিত হবে তখন আরো অনেক আলোচনাই হয়তো এই বিষয়ে হবে। তবে আমি এই রায় এবং পর্যবেক্ষণ সম্পূর্ণটি পড়ার পর ২৯টি পয়েন্ট নোট করেছি, যেগুলো আমাদের নাগরিক সমাজ, আইনজীবী এবং সরকার ও বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদদের সিরিয়াস বিবেচনার দাবি রাখে বলে মনে করি। এক সাথে হয়তো ২৯টি পয়েন্ট কোনো পত্রিকা ছাপায়নি। তবে কোনো কোনো পত্রিকা ধারাবাহিকভাবে পূর্ণাঙ্গ রায়টি ছাপাতে শুরু করেছে। পর্যবেক্ষণের সাথে সাথে সুপ্রিমকোর্ট ১৯টি দিক নির্দেশনাও দিয়েছে, যেগুলো মেনে চললে এই জাতির স¦াস্থ্যে যে রাজনৈতিক ব্যাক্টেরিয়া ঢুকেছে সেগুলো অনেক খানি দূর হতে পারে।
সুপ্রিমকোর্টের এই রায়কে প্রাজ্ঞ বিজ্ঞ লোকদের কেউ কেউ বাংলায় বলেছেন, ঐতিহাসিক রায়, কেউ কেউ বলেছেন যুগান্তকারী রায়। ইংরেজিতে কেউ কেউ বলেছেন ল্যান্ড মার্ক জাজমেন্ট, কেউ কেউ বলেছেন মাইল স্টোন জাজমেন্ট। মনে হতে পারে যে, এটি শুধু মাত্র সরকারের সমালোচনামূলক একটি রায়। একথা ঠিক যে, সরকারের প্রচুর সমালোচনা রয়েছে এই রায়ে। কিন্তু যদি সময় নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ৭৯৯ পৃষ্ঠার এই রায় পড়া যায় তাহলে দেখা যাবে যে, শুধু সরকারের সমালোচনা নয়, বরং রাজনৈতিক ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে যেসব রোগ বাসা বেঁধে আছে সেগুলি দূর করে একটি স্বচ্ছ এবং স্বাস্থ্যকর রাজনীতির ব্যবস্থাপত্র এই রায়। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, অর্থমন্ত্রীর মতো একজন অশতিপর বৃদ্ধ, প্রবীণ ও লেখাপড়া জানা আমলা কাম রাজনীতিবিদ এই রায় নিয়ে ফালতু কথা বলতে পারেন। তিনি বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী যতবার বাতিল করা হবে আমরা (অর্থাৎ তার দল আওয়ামী লীগ) ততবার সেটি পাশ করবো। অর্থমন্ত্রী মানুষের উক্তিকে কথায় কথায় বলেন, ‘রাবিশ’। এখন মানুষ যদি অর্থমন্ত্রীর ঐ উক্তিকে বলেন রাবিশ তাহলে তাকে দোষ দেওয়া যাবে কি?
শেষ করার আগে দুটি কথা বলা দরকার। আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক আইন মন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু বলেছেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায়ে যেসব বিষয় আনা হয়েছে সেগুলো মামলার মূল বিচার্যের সাথে অপ্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে আমরা এটা কোনো ভাবেই আশা করি না।’ মতিন খসরুর এই মন্তব্য শুনে সেই প্রবাদ বাক্যটি মনে পড়ে গেল। সেটি হলো, ‘নিজের বেলায় আঁটি শুটি, পরের বেলায় দাঁত কপাটি।’ রায়ের সাথে যে সব পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে সে সব পর্যবেক্ষণ নাকি মূল বিষয়ের সাথে অপ্রাসঙ্গিক। মতিন খসরু হয়তো ভুলে গেছেন যে, বিচারপতি খায়রুল হক এবং বিচারপতি ফজলে কবির কিন্তু স্টার সিনেমা হলের মালিকানার বিচার করছিলেন। সিনেমা হলের মালিকানার বিচার করতে গিয়ে মার্শাল ল’ অর্ডারে সিনেমা হল এবং সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি সরকার কর্তৃক হুকুম দখল করা আইনি না বেআইনি ছিল সেই ব্যাপারে তার রায় দেওয়ার কথা ছিল। সেই রায় দিতে গিয়ে তিনি তিনজন প্রেসিডেন্ট এবং তিনটি সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেন। মতিন খসরুর প্রতি প্রশ্ন, সিনেমা হলের মালিকানা বিচার করতে গিয়ে তিনটি সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করা কি মামলার সাথে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক ছিল? তার পরেও তো সেগুলো অবৈধ হলো এবং ডক্ট্রিন অব নেসাসিটির দোহাই দিয়ে ঐ তিন সরকারের আমলে কতগুলো কাজকে কনডোন করা বা মার্জনা করা হয়। তাহলে বিচারপতি সিনহা অপ্রাসঙ্গিক কি কাজ করেছেন? ষোড়শ সংশোধনীতো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়। রাজনৈতিক বিষয়ে রায় দিতে গিয়ে রাজনীতির পূর্বাপর যদি এসে যায় তাহলে সেটি অপ্রাসঙ্গিক হবে কেন? আসলে তিনি যা বলছেন সেটি হলো সেই পুরাতন প্রবাদের মতো, ‘দেবতার বেলা লীলা খেলা, পাপ হয়েছে মোদের বেলা’।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।