Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নরসিংদীতে ধর্ষণের ঘটনা অব্যাহতভাবে বেড়ে চলছে - গত ১০ বছরে ১ হাজার ৮ ঘটনা

| প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : নরসিংদীতে নারী ও শিশু ধর্ষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দিন দিন ধর্ষণের ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে চলছে। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকায় ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। গত ৮ মাসে নরসিংদীতে শতাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সরকারীভাবে ৭৫টি ধর্ষণ ঘটনার অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে। গত ১০ বছরে ধর্ষণ ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে ১ হাজার ৮টি। এর মধ্যে ২০০৮ সালে ২৪টি, ২০০৯ সালে ৪৬টি, ২০১০ সালে ৭৫টি, ২০১১ সালে ৭৬টি, ২০১২ সালে ১০৯টি, ২০১৩ সালে ১২০টি, ২০১৪ সালে ১৭৬টি, ২০১৫ সালে ১৮০টি, ২০১৬ সালে ১২৭টি ধর্ষণের অভিযোগ রেকর্ড হয়েছে। চলতি বছর আগস্ট মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত নরসিংদীতে ৭৫টি ধর্ষণ ঘটনার অভিযোগ রেকর্ড হয়েছে। এ রেকর্ড দেশের যেকোন জেলার চেয়ে বেশী বলে জানা গেছে।
গতকাল রোববার এক দিনেই রেকর্ড হয়েছে ৩টি ধর্ষণ ঘটনার অভিযোগ। ধর্ষণের সর্বশেষ শিকার হয়েছে রায়পুরার বেগমাবাদ গ্রামের এক দ্বাদশী স্কুলছাত্রী। গত শনিবার সকালে উদয় নামে এক ধর্ষক তাকে জোরপূর্বক স্কুলের রাস্তা থেকে অপহরণ করে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে। রাত ৯ টায় তাকে উদ্ধার করা হয়। ধর্ষিতা দ্বাদশীর পিতা জানিয়েছে, তার কন্যা স্থানীয় একটি গাল্স স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। সেই সুবাদে সে প্রতিদিন বাড়ী থেকে সকাল ৯ টা সাড়ে ৯টার মধ্যে স্কুলে যাতায়াত করে। এই সুযোগ নিয়ে রায়পুরা উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের মাঝেরচর গ্রামের সাফি উদ্দিনের পুত্র উদয় তাকে প্রায়ই রাস্তায় উত্যেক্ত করতো। এসব কথা ধর্ষিতা দ্বাদশী প্রায়ই বাড়ী গিয়ে তার পিতামাতাকে জানাতো। গত শুক্রবার দ্বাদশী বাড়ী থেকে বেরিয়ে স্কুলে যাবার পথে সকাল ৯ টায় একটি সিএনজি নিয়ে এসে ধর্ষক উদয় তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে তাকে একটি জঙ্গলে নিয়ে সারা দিন ধর্ষণ করে। পরে এ ঘটনা থানা পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ তাকে রাত ৯ টায় উদ্ধার করে। একইভাবে সদর উপজেলার ফজুরকান্দী গ্রামে জয়নাল উদ্দিন নামে এক রিক্সা চালকের ১১ বছর বয়সী কন্যাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে গাফফার নামে এক ধর্ষক। তার ২টি স্ত্রী রয়েছে। রয়েছে সন্তান সন্তুতি। এই ধর্ষকের বাড়ী কাঠালিয়া ইউনিয়নের মৈষাদি গ্রামে। ধর্ষিতা একাদশীর মা জানিয়েছেন, তার বাড়ী আড়াইহাজার উপজেলায়। সে ফজুরকান্দী গ্রামের হোসেন আলীর বাড়ীতে ভাড়া থাকে। তার স্বামী জয়নাল উদ্দিন রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। ঘটনার দিন মাজেদা বেগম তার একাদশী কন্যাকে বাড়ীওয়ালা হোসেন আলীর কন্যা আরজুদার নিকট রেখে ডাক্তারের কাছে যায়। এই সুযোগে আরজুদা বেগম একাদশীকে ধর্ষক গাফ্ফারের হাতে তুলে দেয়। ধর্ষক গাফ্ফার তাকে জঙ্গলে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে ঘটনা তার মাকে জানায়। একই তারিখে শিবপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে কয়েকজন ধর্ষক। এছাড়া গত ৫ আগস্ট রায়পুরার দিঘলিয়া কান্দীতে ২৫ বছর বয়সী এক যুবতীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে এলাকার একটি বখাটে চক্র। এই যুবতী বর্তমানে নরসিংদী শহর এলাকার শালিধা মুন্সী বাড়ীতে বসবাস করছে। এভাবে চলতি বছরের ৮ মাসের মধ্যে জানুয়ারীতে ধর্ষণ হয়েছে ৯ জন নারী ও শিশু, ফেব্রæয়ারীতে ধর্ষণ হয়েছে ১০ জন নারী ও শিশু, মার্চ মাসেও ১০ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, এপ্রিল মাসে ১৩ জন, মে মাসে ৭ জন এবং জুলাই মাসে ১৫ জন নারী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এসব ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে মামলা দায়ের করা হলেও তদন্তে তেমন অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে না। বেশীরভাগ মামলাই সামাজিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আপোষ করে ফেলছে। বেশীরভাগ ধর্ষণের ঘটনায়ই সমাজে প্রভাবশালীরা জড়িত। আর যারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে তারা সমাজে নিরীহ শ্রেণীর মানুষ। যার ফলে প্রভাবশালীদের ভয়ভীতি, মামলা হামলা, ও টাকার কাছে হার মানতে বাধ্য হচ্ছে ধর্ষিতাদের পরিবারগুলো।



 

Show all comments
  • shakib ১৫ মার্চ, ২০১৮, ১১:২৮ এএম says : 0
    good
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ