Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আদালতের রায়ে সরকার বৈধতা হারিয়েছে : রিজভী

প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:২৭ পিএম, ৫ আগস্ট, ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার  : ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর বর্তমান সরকার বৈধতা হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে রাজনৈতিক দল, সাধারণ মানুষ, সুশীল ও নাগরিক সমাজের অভিযোগ এবং বক্তব্যের প্রতিফলন হয়েছে। গতকাল (শনিবার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, দেশ জুড়ে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে, বাক স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। প্রতিমূহুর্তে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ৫৭ ধারা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে। এই সরকারের অধীনে প্রতিটি নির্বাচন হচ্ছে রক্তাক্ত নির্বাচন। প্রতিটি নির্বাচনে রক্তগঙ্গা বইছে, লাশ পড়ছে। এতোদিন বিএনপি এই অভিযোগগুলো করে আসছিল। কিন্তু এবার এই কথাগুলো বিচার বিভাগের রায়ে প্রতিফলিত হয়েছে। যখন সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে এসব বিষয় বলা হয় তখন এই সরকারের আর কোন বৈধতা থাকে না। নির্বাচন কমিশন নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমরা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যে অভিযোগ করে আসছি তারও প্রতিফলন রায়ে এসেছে। এছাড়া সাধারণ মানুষ, নাগরিক সমাজ, বিশিষ্টজনেরা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা যা লিখছে, যা বলছে তারও প্রতিফলন রায়ে দেখা গেছে। বিচার বিভাগকে একটি স্বাধীন অরগান উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর সকল দেশেই সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনে নেয়া হয়। আদালতের বক্তব্য আমলে নেয়া হয়। কিন্তু সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা এই রায় নিয়ে আদালত অবমাননাকর এবং আইনের শাসনের প্রতি চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছে। গণতান্ত্রিক সরকার কখনও কর্তৃত্ববাদী হতে পারে না জানিয়ে রিজভী বলেন, রায়ে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধানে উই (আমরা) এর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দেশ চলছে ‘আমি’র উপর। এটাই তো কোন সরকারের বৈধতা থেকে সবচেয়ে বড় বিচ্যুতি।
গত শুক্রবার সিলেটে অর্থমন্ত্রী বলেছেন “ষোড়শ সংশোধনী যতবার আদালত বাতিল করবে ততবার সংসদে তা পাশ করা হবে” মন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, মন্ত্রীর এই বক্তব্য বার্ধক্যজনিত বা ক্ষমতা হারানোর হতাশার বিকার। অর্থমন্ত্রী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, সুতরাং তাঁর বক্তব্য সরকারেরই বক্তব্য। আদালতের রায় নিয়ে মন্ত্রীর এধরণের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে আদালত অবমাননার সামিল এবং আইনের শাসনের প্রতি চরম ধৃষ্টতা। ক্ষমতার সুউচ্চ বলয়ে আমৃত্যু থেকে যাওয়ার বাসনা বাধা পড়াতে ক্ষমতাসীন মন্ত্রী ও নেতাদের বক্তব্য অসংলগ্ন হয়ে পড়েছে। অতীতেও আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল করে বিচারকদের এজলাস ভাংচুর করেছে। ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পর সরকারের গদির নীচে ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেছে। এই রায়ের পর বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের সকল কর্মকান্ড এখন সম্পূর্ণভাবে বেআইনী। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের কথা বলতে গিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের মানবাধিকার এখন হুমকির মুখে, অবাধ দুর্নীতি চলছে, সংসদ এখন অকার্যকর। রায়ে আরও বলা হয়েছে-নিরপেক্ষ ও হস্তক্ষেপমুক্ত স্বাধীন নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। আর বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ছাড়া বিশ্বাসযোগ্য সংসদ প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। ফলে আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং সংসদ অবিকশিতই রয়েছে। উল্লিখিত অবজারভেশনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন নির্বাচনের বিষয়টি যেন ফুটে উঠেছে। সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের ৭৯৯ পৃষ্ঠার দীর্ঘ রায়ে- দুর্নীতি, প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, বিচার ব্যবস্থা, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, গণতন্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, অবাধ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের শূন্যপদগুলো সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আজকাল গুটিকয়েক লোকের একচেটিয়া ব্যবহারের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। সংবিধানে স্বীকৃত আমরার বদলে আমিত্বই যেন বড় হয়ে উঠেছে। ক্ষমতা জোরালো করার এই আত্মঘাতী প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।
সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে হজ ব্যবস্থাপনায় চরম অব্যবস্থা চলছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় একের পর এক বাতিল হচ্ছে নির্ধারিত হজ ফ্লাইট। হজযাত্রী পরিবহন শুরুর ১২ দিনে বাতিল হয়েছে ১৯টি ফ্লাইট। এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় এসে দুর্ভোগে পড়ছেন হজযাত্রীরা। রাজধানীর হজ ক্যাম্প, হোটেল ও আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় ভোগান্তির দিন পার করছেন কয়েক হাজার হজযাত্রী। থাকা-খাওয়ার অসুবিধার পাশাপাশি গচ্চা যাচ্ছে বাড়তি টাকা। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতি বছরই হজ্বযাত্রীদের নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলেও সরকার কোন নীতিমালা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা তৈরি না করায় হজযাত্রীরা হয়রানিতে পড়ছেন। বিমানমন্ত্রী প্রতিদিনই জাতিকে সবক দিচ্ছেন অথচ নিজের মন্ত্রণালয় যে বারবার ব্যর্থতার হ্যাট্রিক করেছে সেটি তিনি বেমালুম ভুলে যান।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্তে¡ গরিয়সী হয়ে উঠতে যারা ভিত্তি দান করেছে সেই দলীয় রঙে সাজানো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলের সশস্ত্র বেপরোয়া ক্যাডারদের উদ্ধত দাপটে সারাদেশে এক ভয়ঙ্কর নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়েছে। এই দাপটে শুধু তরুণ ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানই অন্ধ হচ্ছে না, গোটা রাষ্ট্র ও সমাজকেও ক্রমান্বয়ে অন্ধত্বের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আর এরই ফলশ্রুতিতে বগুড়া’র মতিন সরকার ও তুফান’রা এখন সমাজে প্রভু হয়ে বসেছে। আর যারা দৃঢ়, অকপট, সত্যবাদী ও প্রতিবাদী তাদের জায়গা হচ্ছে কারাগারে। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ