Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত দুদক : মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিরোধী দল শেষ করে দিতে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দুদকের প্রায় সকল আইনজীবী আওয়ামী লীগের সমর্থক। সেজন্য তারা প্রভাব খাটিয়ে তিন-চার দিন পরপর মামলায় হাজিরার দিন ঠিক করছেন। সংস্থাটি খালেদা জিয়ার মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় প্রভাবিত করছে। গতকাল (শনিবার) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুদকের বক্তব্যকে আমরা বিচার প্রক্রিয়াকে বিশেষ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবার শামিল বলে মনে করছি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে দুদক চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য হচ্ছে সরকারের বক্তব্য। সরকারের যেসব রাজনৈতিক এজেন্ডা আছে, সেগুলো বাস্তবায়িত করার জন্য দুদক কাজ করছে। গত বৃহস্পতিবার দুদকের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা শুনানির পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মামলা পরিচালনায় বাধা দিচ্ছে। আমরা মামলা শেষ করতে চাই, কিন্তু মামলা শেষ করতে পারছি না। আসামী পক্ষ বার বার সময় নেয়ায় মামলা দীর্ঘসূত্রি হচ্ছে।
দুদক চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, দুদক একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। অতিস¤প্রতি দুদক চেয়ারম্যান গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছেন বা মন্তব্য করেছেন, সেই মন্তব্যটি শুধু দুর্ভাগ্যজনকই নয়, আমরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছি, গোটা জাতি হতাশ হয়েছে। তার বক্তব্যে দুদক ও সরকারের ভুমিকা এক্ষেত্রে একাকার হয়ে গেছে বলে আমরা মনে করি। ফলে স¤প্রতি সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনায় দেশনেত্রীর বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের যে মামলাগুলো চলছে, এই মামলাগুলোকে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে আমরা শঙ্কিত রয়েছি।
তিনি বলেন, জাতির প্রত্যাশা যে, দুদক নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করবে, স্বাধীন ভুমিকা পালন করবে এবং সরকারের ক্রীড়নক হয়ে কাজ করবে না। আমরা মনে করি তাদের এটা বন্ধ করা উচিৎ। তাদের নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করা উচিৎ। অন্যথায় দুদকের নিরপেক্ষতা ও পক্ষপাত নিয়ে জনগণের মধ্যে অবশ্যই প্রশ্ন দেখা দেবে।
মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিচারাধীন বিভিন্ন মামলায় হাজির হননি, সময় নিয়েছেন। মামলা বাতিল হওয়ার পরও দুদক কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা শেখ সেলিম ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি প্রদান করেছিলেন এবং দুদকের পক্ষ-পাতিত্বের কারণে সেটা বাতিল হয়েছে গেছেন বলে জনগণের একাংশের ধারণা। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম সাজেদা চৌধুরীর ছেলে নজিরবিহীনভাবে আদালত থেকে জামিন না দিয়ে মামলা খারিজ করে নিয়েছেন। দুদক তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে দুদকের প্রায় সকল আইনজীবীরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। এটা প্রমাণিত করে দুদক পক্ষপাতদুষ্ট ভুমিকা পালন করছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিয়োজিত হয়েছে। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বিরোধী দলকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করে দেয়া ও ভিত্তিহীন মামলায় সাজা দেয়ার লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে। সেই কারণে দুদকের চাপে বেগম খালেদা জিয়ার মামলায় আদালতের ওপর তারা চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন। একই আদালতের অন্যদের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলায় একমাস থেকে দেড়মাস সময় দেয়া হয়। বেগম খালেদা জিয়ার মামলায় যিনি তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, বিরোধী দলীয় নেত্রী ছিলেন, তার মামলায় দুদকের আবেদনের ও তাদের চাপের কারণে ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে তারিখ পড়ছে। বিচার ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ যে ন্যূনতম সুযোগটুকু পায় দুদদকের চাপের কারণে দেশনেত্রী সেই সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় বিচারিক আদালতের রায় বাতিলে দুদকের দ্রæত আপিল করার বিষয়টিও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
অতীতে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত মামলার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দুদক আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তখন তিনি বিরোধী দলে ছিলেন, তখন যেসব দুর্নীতির মামলা তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছিলো, সেগুলো হাইকোর্টে যখন চলছিলো, তখন সেই মামলাগুলো দুদক সঠিকভাবে পরিচালনা করবার জন্য কতটুকু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তা নিয়ে জনগণের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার যে রায় হলো অর্থাৎ সেটা খারিজ করে দিলো, তার বিরুদ্ধে কোনো আপীলও তারা করেননি।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আইনের চোখে সবাই সমান। যেখানে একই মামলায় অন্যরা তিন সপ্তাহ চার সপ্তাহ টাইম পান। কিন্তু বেগম জিয়াকে খুব কম সময় দেয়া হচ্ছে। তিনি তো চিকিৎসার জন্য বিদেশে আছেন। আইন বলে- মামলা সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিকে সকল সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। তাকে তো অর্ধেকও দেয়া হচ্ছেনা। এসব না হলে তো সংবিধানের লঙ্ঘন হবে। দুদক কেনো এতো তাড়াহুড়ো করছে? তারা আইন মতে কাজ করবে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ