Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অপরূপ সৌন্দর্যের নিদর্শন যশোর কালেক্টরেট ভবন

| প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নয়া জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে খুলে গেল ৩৬০ দুয়ার
যশোর থেকে রেবা রহমান: অপরূপ সৌন্দর্য্য। কিন্তু ঢেকে রাখা ছিল এতদিন। গাছপালা, জঙ্গল, জঞ্জাল, আবর্জনায় ঢাকা পড়েছিল। এটি ঐতিহ্যবাহী যশোর কালেক্টরেট ভবন। ঢেকে রাখার জন্য হযরত গরীব শাহ সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় কারো দৃষ্টিতে পড়তো না। এখন মনে হচ্ছে ঢাকনা খুলে দেয়া হয়েছে। যা যশোরবাসির নজরে আসছে। হয়েছে চমৎকার দৃষ্টিনন্দন। যশোরের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা যশোর ডিজিটাল কার্যক্রমেও মুখ থুবড়ে পড়ে। সেটিও এখন গতি পেয়েছে। কালেক্টরেট ভবনটি অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা যশোরের ঐতিহ্য ও ইতিহাস বহনকারী ৩শ’৬০ দুয়ারের। দীর্ঘদিন ভবনটির অতীত সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেননি কেউ। নিলেও নামকাওয়াস্তে। তবে ওয়ান ইলেভেনের সময় কালেক্টরেট ভবনের সামনে এতিহ্যবাহী নিয়াজ পার্কটি সংস্কার করে কিছুটা নান্দনিক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। একটু উদ্যোগ নিলেই যে দৃশ্যপট পাল্টে দেয়া যায় তার প্রমাণ রেখেছেন যশোরের নবাগত জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফ উদ্দীন। তিনে যশোরে যোগদানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা করেন। সাংবাদিকরা ঐতিহ্যবাহী কালেক্টরেট ভবনে ঢুকতে অকেজো গাড়ির স্তুপ, জঞ্জাল ও আবর্জনার কথা উল্লেখ করেন। বিভিন্ন পরামর্শ দেন। ডিসি পরামর্শগুলো লিপিবদ্ধ করেন। ওই সভায় ঘোষণা দেন একে একে সব কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার। পক্ষকালের মধ্যে নিলেনও তাই। চেহারা পাল্টে দিলেন ঐতিহ্যবাহী কালেক্টরেট ভবনের।
লক্ষণীয় জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দীন নিজে দাড়িয়ে থেকে নির্দেশনা দেন কোথায় কিভাবে পরিস্কার করতে হবে। সামান্য উদ্যোগেই যে অল্পদিনের ব্যবধানে পাল্টানো যায় তার স্বাক্ষর রাখলেন তিনি। নিজের এলাকা যশোর কালেক্টরেট ভবন বদলে দিলেন। যশোর একটি পুরাণো জেলা, ঢুকলেই যাতে মনে হয় সৌন্তর্যের জেলা শহর। যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায় দাড়িয়ে পরিস্কার দেখা যায় কালেক্টরেট ভবন। কালেক্টরেট ভবনের বাইরে প্রাচীর লাগোয়া ঝুপড়িও পরিস্কার হয়েছে। নবাগত জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছেন পুরো এলাকাটি থাকবে ঝকঝকে। যশোর কালেক্টরেট প্রাচীর ঘেষে দোকান বরাদ্দ দেয়ারও পায়তারা চলে একসময়। যশোরের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ জানান, একটা মাস্টার প্লান করে নবাগত জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দীন যশোরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ নিবেন।
জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দীন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আমি সবার সহযোগিতা নিয়ে যে ক’দিন যশোরে থাকি আপ্রাণ চেষ্টা করবো গতানুগতিক ধারার বাইরে কিছু করতে। তিনি ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সামনে যশোরের বিভিন্ন উন্নয়নের দাবি জানিয়েও প্রশংসিত হয়েছেন যশোরবাসির কাছে। অবিভক্ত বাংলায় যশোরকে জেলা ঘোষণা করা হয় ১৭৮১ সালে।
যশোরের আওতায় ছিল আজকের বিভাগীয় শহর খুলনা (যা তথন ছিল খুলনা মহাকুমা)। এছাড়া ফরিদপুর, পাবনা, নদীয়া ও চব্বিশ পরগনা জেলার বেশিরভাগ এলাকা ছিল যশোরের সঙ্গে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাজস্ব সংগ্রহের জন্য প্রশাসনিক সংস্কারের দিকে গুরুত্ব দেয়। ১৭৮৬ সালের ৪ঠা এপ্রিল প্রথম কালেক্টর মি. টিলম্যান হেঙ্কেলের হাতে যশোর কালেক্টরেটের যাত্রা শুরু হয়। সেইসময় মুড়লির একটি পুরাতন কুঠিবাড়িতে তিনি তাঁর কার্যক্রম শুরু করেন। ১৭৯৩ সালে মুড়লি থেকে কসবায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় সরিয়ে আনা হয়। ১৮০১ সালে যশোর জেলার প্রথম কালেক্টরেট ভবন বর্তমানের স্থানে গড়ে তোলা হয়। ১৮৮৫ সালে বর্তমান ভবনটির একতালা নির্মাণ করা হয়। ৩৬০ দরজার এই ভবন ছিল তৎকালীন বাংলার দীর্ঘতম ভবন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ