Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট যেন অপরিকল্পিত নগরী

| প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফয়সাল আমীন, সিলেট থেকেঃ কালের পরিবর্তনে বেড়েছে নগরের আয়তন, লোকসংখ্যাও ১০ লাখের বেশি। অথচ নগরীর সব কিছুই যেন গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনেও কোন উদ্যোগ নেই। ঢাকায় বসে যে পরিকল্পনা নেয়া হয়, সেগুলোই বাস্তবায়ন হয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। ১৮৭৮ সালে যাত্রা শুরু করা সিলেট পৌরসভা ২০০২ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। কর্পোরেশন পেলেও সিলেটবাসী এখনো পরিকল্পিত নগরী পাননি। অল্প বৃষ্টিপাতে সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা। দীর্ঘ দিন থেকে খাল ও ছড়া উদ্ধার চললেও কার্যত এর সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। পরিকল্পিত নগরী গড়তে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পরিকল্পনাবিদ থাকলেও সিলেট সিটি করপোরেশনে সেটিও নেই।
বাস্তবে সিলেট নগরীতে অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে একটু নজর দিলে যে কারো চোখে তা ধরা পড়বে। কোন প্রয়োজন ছাড়াই দেড় বছর আগে নগরীর ঐতিহ্যবাহী কোর্ট পয়েন্টে নির্মাণ করা হয় ফুট ওভারব্রিজ। ছোট মোড়ের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে সময় লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। আর ব্রিজ দিয়ে গেলে পাঁচ মিনিট। সেই বিজ্রটি বাস্তবে কোন কাজে আসেনি। ব্রিজটি এখন তুলে নেয়ার চিন্তা করছে সিটি কর্পোরেশন। প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যায়ে ফুট ওভারব্রিজটি স্থাপনে অনেকেই ভিন্নমত পোষন করলেও তখন কর্ণপাত করেনি সিটি কর্পোরেশন।
সুরমার পানির ওপর নির্ভর করে দেড়’শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। নদীর পানি শুকিয়ে গেলে ৬ মাস বন্ধ থাকে এটি। পুরো বছর সুফল পাওয়ারও কোন সুযোগ নেই এই প্রকল্প থেকে। প্রতিবছরই শুকনো মৌসুমে পানির জন্য আন্দোলন হয় নগরীর বিভিন্ন এলাকায়।
অন্যদিকে নগরীর আনাচে কানাচে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে সুউচ্চ ভবন। সিলেট শহরের শাহজালাল (রহঃ) এর মাজার গেইেটের বিপরিতে গড়ে তোলা হয়েছে হোটেল নূরজাহান গ্রান্ড নামক বহুতল ভবন। এর সুউচ্চ ভবন একেবারেই সড়কে ঘেষে নির্মাণ করা হয়েছে। এতে তীব্র যানজট লেগেই থাকে। অভিযোগ রয়েছে ভবন তোলার আগে সিটি কর্পোরেশনের কতিপয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই চলে এসব কর্মকান্ড। নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মাস্টারপ্ল্যান হয়েছে, সেটা ঢাকায় বসে তৈরি করা হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যানের প্রচুর ভুল রয়েছে। সভা করে তা ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।’ এদিকে নগরীর রাস্তাগুলো ছোট হওয়ায় আগুন নেভানোর বড় গাড়িগুলো কেনা হলেও সিলেটে আনা যাচ্ছেনা।
কর্পোরেশন সুত্র জানিয়েছে, সিলেটে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ না থাকলেও সিটি করপোরেশনে রয়েছে পরিকল্পনাবিদ পদ। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন সিটি করপোরেশনের পক্ষে যথাযথ ব্যবস্থাপনা সম্ভব না। এখানে সিটি উন্নয়ন অথরিটি থাকলে তাদের কাজের সুবিধা হবে।’ সিসিকের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘সিলেটে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হবে এটার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। সেবামূলক যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান আছে তাদের মধ্যে একটা সমন্বয় প্রয়োজন।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অভিমত, সিলেটে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন হলে দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বন্ধে, যেন উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। তিনি বলেন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আর সিটি করপোরেশনের ফাইল চালাচালির জন্য অনেক জায়গায় উন্নয়ন হচ্ছে না। এটার আলাদা একটা গাইডলাইন থাকা উচিৎ। এমন হতে পারে দুই বিভাগের ঠেলাঠেলিতে মানুষের ভোগান্তি হবে, কাজ হবে না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ