বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মাদারীপুর থেকে আবুল হাসান সোহেল: উত্তাল পদ্মা। এর মাঝে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই লঞ্চ। আর সেই খাম-খেয়ালির বলি হয়ে পদ্মায় সলিল সমাধি হতে হয় শতাধিক যাত্রীকে। ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট দআজ এই দিনে পদ্মা নদীর মাঝে আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই একটি লঞ্চ। পিনাক-৬ যেন সেদিন সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত হয়ে নেমে এসেছিল মাঝ পদ্মায়। পিনাকের নাম শুনলেই আতঙ্কে কেঁপে ওঠে স্বজনদের বুক। প্রতি বছর এ দিনটি এলেই পদ্মাপাড়ে শোনা যায় স্বজনদের আর্তনাদ। সরকারীভাবে ৪৯ যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হলেও কার্যত: এখনোও শতাধিক যাত্রীর খোঁজ মিলেনি। আর স্বজনদের ক্ষোভ, এতো কিছুর পরেও থেমে নেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই। আর নৌ-কর্তৃপক্ষ বলছে, আরো জনবল বাড়ালে নৌ-দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব। তবে বরাবরই লঞ্চ মালিক সমিতি নিজেদের দোষ এড়িয়ে যাচ্ছ্¦্্্ে এদিকে পিনাকÑ৬ ট্র্যাজেডির ৩ বছর অতিবাহিত হলেও দোষীরা আজো সাজা পায়নি। আর কোন দিন পাবেও না। আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাবে তারা। কারণ দোষীদের অদৃশ্য হাত অনেক বড়। দোষীরা কেউ প্রভাবশালী আবার কেউ প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়। তাই চোখের পানিই এখন স্বজনহারাদের একমাত্র প্রাপ্তি। এদের সান্তনা দেবারও কেউ নেই।
আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত রিপোর্ট। থামেনি ওভারলোডিং। লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে কয়েকগুণ। ছাড়া পেয়ে গেছে লঞ্চ মালিক। বিচারের প্রত্যাশা যেন অর্থহীন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সে বছর পিনাক ট্র্যাজেটির পর উভয়ঘাট থেকে প্রতিটি লঞ্চ ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী নির্দ্দিষ্ট যাত্রী নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছিল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে। এ কাজের সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে তদারকি অব্যাহত রেখেছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্থানীয় প্রশাসন, বিআইডবিøউটিএ ও পুলিশ প্রশাসন। নৌ-রুটগুলোতে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ক‘মাস লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী দেখা যায়নি। কিন্তু ক‘মাস যেতে না যেতেই লঞ্চ মালিক-শ্রমিকরা আবার ফিরে যায় তাদের পুরনো স্বভাবে। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়ে যায়। এখন আর পদ্মা উত্তাল থাকলেও যাত্রী পারাপারে নেই কর্তৃপক্ষের তদারকি। নেই প্রশাসন ও পুলিশি তদারকিতে লঞ্চে গুণে-গুণে যাত্রী তুলে দেওয়ার চিত্র। মন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারিও কোনো কাজে আসছে না। এ সিন্ডিকেট এতোই শক্তিশালী যে, তাদের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে আছে অনন্তকাল ধরে। তাই মানুষের জীবন তাদের কাছে তুচ্ছ। তাদের চাই অর্থ উপার্জন।
মাদারীপুর জেলার শিবচরে স্বজন হারানো কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিরব-নিস্তব্ধ বাড়ির চারপাশ জুড়ে যেন বিষাদের ছায়া। ঈদ করতে গ্রামে এসেই স্বজনদের হারানো পরিবারের মাঝে ঈদ আর আনন্দ বয়ে আনে না। তাদের কাছে এখন ঈদ মানেই শুধু স্বজন হারানোর কষ্ট।
ঈদের ছুটিতে বাড়ীতে এসেছিল মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পৌরসভার বাসিন্দা মেধাবী ছাত্রী হিরা, স্বর্ণা আর লাকী। আনন্দ-উল্লাসে পরিবারকে মাতিয়েও রেখেছিল। পদ্মার বুকে পিনাক-৬ কেড়ে নিল তাদের তরতাজা প্রাণ। এক মেয়ের মৃতদেহ পেলেও বাকি দুজনের খোঁজ আজোও পাইনি। তাই তো তাদের পরিবারে যেন শোকের পাহাড়। লঞ্চ ডুবির তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের খোঁজ নেইনি কেউই।
এছাড়াও মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের খালাসীকান্দি গ্রামের হায়দার চৌকিদারের মেয়ে ইমা আক্তারসহ (১৮) পরিবারের অন্য সদস্যদের হারানো শোক আজও বয়ে বেড়াচ্ছে ঐ পরিবারের স্বজনরা।
কালকিনির ডাসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সবুজ কাজী তার মা হিরোন নেছা (৬৫), স্ত্রী ময়না আক্তার তৃষা (২৫), ছেলে তৌফিকুর নূর (১), স্ত্রীর ভাই আল-আমিনকে (৩০) হারিয়েছেন। আজও তিনি সবচেয়ে আপনজনদের হারানোর শোক ভুলতে পারেনি।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, সরকারিভাবে ওই ঘটনায় ৪৯ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ২৮টি লাশ পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয় আর ২১ জনের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় শিবচর পৌরকবর স্থানে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়। নিখোঁজ থাকে আরো ৫৩ জন। অন্যদের হদিস মেলেনি।
তবে একাধিক নিখোঁজ যাত্রীর পবিবার দাবী করেছে, এখনো নিখোঁজের তালিকায় রয়েছে অন্তত শতাধিক যাত্রী। তারা সরকারী উদাসীনতাকেই এর জন্যে দায়ী করছেন। জেলার কালকিনি উপজেলার ডাসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী সবুজের পরিবারে এই দুঘর্টনায় নিহত হয় ৪ জন। দু’জনের মৃতদেহ পাওয়া গেলেও বাকি দুজন পাইনি। কাজী সবুজ বলেন, সরকার আমাদের স্বজনদের মৃতদেহ উদ্ধারে কোন ভূমিকা রাখেনি।
আর নৌযান চলাচল ও যাত্রী সেবা যাদের উপর নাস্ত, তারাই সরকারের জনবলের দুর্বলতাকে দুষছেন। এমনই এক কর্মকর্তা, নৌপথে আরো পুলিশ বাড়ানোর দাবী করেন। মাদারীপুরের কাঠালবাড়ি ফেরি ঘাটের বিআইডবিøউটিসি’র সহকারী ম্যানেজার মোমিন উদ্দিন জানান, আমাদের সার্ভিস আরো সুন্দর করতে নৌ-পুলিশের পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের আরো যতœবান হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।