পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন : আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা পাচারে বাংলাদেশকে টার্গেট করে সক্রিয় রয়েছে। ফলে ইয়াবা নামে মাদকের ছোবল মারাত্মক আকার ধারণ করেছে দেশে। র্যাব, পুলিশসহ সকল সংস্থার অভিযানে ইয়াবার বড় চালান ধরা পড়লেও নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীরা। আগে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মিসহ কিছু অপরাধী গোষ্ঠী ইয়াবা বিস্তারে বাংলাদেশকে প্রধান টার্গেট করলেও এখন দেশের ভেতরেও ইয়াবার অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বর্তমান সময়ে থাইল্যান্ডে ইয়াবা পাচার কঠিন হয়ে যাওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশকে টার্গেট করে এবং এখনো তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে এ কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের লাখ লাখ তরুণ-তরুণী ইয়াবায় আসক্ত হয়ে নিজেদের নিঃশেষ করে দিচ্ছে। সম্প্রতি র্যাম্প মডেল রিসিলা আত্মহত্যা করেছেন। এ বিষয়ে রিসিলার স্বামী ইমরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেছেন, রিসিলা মাদকাসক্ত ছিল। বাইরে গিয়ে নিয়মিত ইয়াবা সেবন করত। ঘরেও চেষ্টা করত। এ নিয়ে বাধা দিলে হেনস্তা করা হতো তাকে। এসব নিয়ে অশান্তি লেগেই থাকত। আর এর জের ধরে সে আত্মহত্যা করে। সমাজে হাজারো ঘটনার মধ্যে এটি একটি। ইয়াবা আসক্তের কারণে প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ২০ লাখ ইয়াবা সেবন করা হয়ে থাকে। মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইনের সমন্বয়ে তৈরি ইয়াবা ট্যাবলেটটির সেবন বাংলাদেশে শুরু হয় ২০০৬ সালের দিকে। এর আগে একশ্রেণির তরুণ গাঁজা, ফেনসিডিল বা হেরোইনের নেশায়ই বুঁদ থাকত। তাদের কাছে এখন ইয়াবাই বেশি প্রিয় হয়ে উঠেছে। পরিবহনের ক্ষেত্রে অন্য যে কোনো মাদকের চেয়ে ইয়াবা অনেক সহজ ও নিরাপদ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমদিকে অভিজাত শ্রেণির কিশোর ও তরুণ ছেলেমেয়েদের মধ্যেই ইয়াবার নেশা চালু ছিল। বিশেষ করে ঢাকা শহরের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল-কলেজে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কিন্তু দ্রুত ইয়াবা স্মার্টনেস, ফ্যাশন ও আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। এখন শহর থেকে গ্রাম অনেকেই ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। গত দশকের পর ইয়াবার দামও বেড়েছে। বর্তমানে একেকটি ইয়াবা ট্যাবলেট গুণগত মানভেদে ৩০০ থেকে ৯০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। ফলে অনেক প্রভাবশালী লোকজন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের মাদক বিরোধী সংস্থা মানস বলছে, দেশে প্রায় ৭০ লাখ মাদকাসক্ত ব্যক্তির ১৬ শতাংশই নারী। গত ২ আগস্ট বুধবার পিলখানা বিজিবি সদর দফতরে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির প্রধান মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেন, দেশে মাদকের আগ্রাসন বন্ধে যৌথ বাহিনী গঠন করা হবে। দেশব্যাপী যৌথবাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপের পর মিয়ানমার সরকারও বাংলাদেশে মরণ নেশা ইয়াবার পাচার ঠেকাতে আন্তরিকতার কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশে যাতে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা প্রবেশ করতে না পারে এজন্য সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ইয়াবা বন্ধে যৌথভাবে অভিযান চালাবে। ইয়াবা চোরাচালান বন্ধে নাফ নদীতে ১৫ দিন পরীক্ষামূলকভাবে মাছ ধরা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ওই সময় জেলেদের সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে। তবে কবে নাগাদ নাফ নদীতে পরীক্ষামূলকভাবে মাছ ধরা বন্ধ করা হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। নাফ নদীতে মাছ ধরার সূত্র ধরেই মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে বেশি ইয়াবা বাংলাদেশে পাচার হয় বলে বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্যান্য মাদকদ্রব্য যেমন- ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা সরবরাহ বা সেবকের পরিমাণ কমলেও প্রতি বছর বাড়ছে ইয়াবার সরবরাহ। আর সব ধরনের মাদকদের সবচেয়ে ‘বড় হাট’ রাজধানী ঢাকা। ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় মাদক হাটের বিস্তার ঘটেছে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, টাঙ্গাইল এবং ময়মনসিংহে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মাদক বিস্তারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নরসিংদী। ফেনসিডিল, হেরোইনসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের বিস্তার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও ইয়াবার বিস্তার রোধ করা যায়নি। প্রতি বছরই বাড়ছে এই মাদকের আগ্রাসন। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা, অপারেশন) মো. নজরুল ইসলাম সিকদার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ইয়াবা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সব জেলায়। এজন্য বিশেষ টিম গঠন করে আমরা কাজ করছি। মাদকদ্রব্য আইনেরও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ইয়াবাসহ বিভিন্নœ ধরনের মাদক সেবন কমানো এবং মাদক ব্যবসায় জড়িতদের গ্রেফতারে আরো সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মতো অস্ত্র চান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। মাদকবিরোধী অভিযানে ঝুঁকি থেকে নিজেদের জীবন রক্ষা ও অভিযান সফল করার যুক্তি দেখিয়ে সংস্থাটি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি চায়। সূত্র বলছে, শিগগিরই একটি অস্ত্র বিধিমালা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মিললে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর নিজস্ব তহবিল থেকে অস্ত্র কিনে কর্মকর্তাদের সরবরাহ করবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্থার সব স্তরের জনবল নিরস্ত্র থাকায় মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে অনেক সময় হুমকির মুখে পড়তে হয়। ফলে অভিযান থেকে অনেক সময় পিছিয়ে আসতে হয়। এমনও হয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে অস্ত্র থাকায় অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এতে সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে সংস্থাটির। সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ফলে প্রত্যেক স্তরে অস্ত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্র জানায়, গত ৩১ জুলাই টেকনাফ উপজেলায় পৃথক অভিযান চালিয়ে সাড়ে তিন লক্ষাধিক ইয়াবাসহ মিয়ানমারের তিন নাগরিককে আটক করেছে বিজিবি। এর আগের দিন টেকনাফ উপজেলায় পাচারকারীদের ফেলে যাওয়া একটি বস্তায় তল্লাশি চালিয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে বিজিবি। যেগুলোর বাজার মূল্য ১২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। গত ২৩ জুন রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকার মুক্তাঙ্গনের সামনে থেকে ১২ হাজার ইয়াবাসহ বাবা-ছেলেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। শুকনা মরিচের ভেতরে ১২ হাজার ইয়াবা ঢুকিয়ে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।