Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আপনার বাবার খুনীরা মন্ত্রীসভাতেই আছে : রিজভী

| প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

৫৭ ধারায় চলছে নতুন বাকশালী শাসন
স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আপনার কেবিনেটেই আপনার পিতার হত্যাকারীরা রয়েছেন। তিনি বলেন, আপনার কেবিনেটকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে পেছন দিক থেকে দেখুন মন্ত্রিপরিষদের মধ্যে আপনার পরিবারের হত্যাকারীরা কতজন রয়েছেন। এই হত্যাকান্ডের প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই স্বাধীনতার ঘোষক এবং সেক্টর কমান্ডারকে অপমানিত ও অভিযুক্ত করা হয়।
গতকাল (বুধবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বগুড়ায় মেয়েকে ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে নির্যাতনের প্রতিবাদে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশ যখন রাজনৈতিক শূন্য হয়ে পড়েছিল। তখন জাতি একটি কন্ঠের জন্য প্রত্যাশা করেছিল। সেদিন যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান।
তিনি এই ঘোষণার মাধ্যমে জাতিকে যুদ্ধের মধ্যে নিয়ে দেশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছেন। সরকার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মাধ্যমে নতুন রূপে বাকশালী শাসন কায়েম করেছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ৫৭ ধারাকে ব্যবহার করে প্রতিদিন গণমাধ্যমের নেতা ও সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে, জেলে পাঠানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ আগের সেই বাকশাল আবার ফিরিয়ে এনেছে। তবে এই বাকশাল একটু অন্য কায়দায়, অন্য ফর্মে প্রতিষ্ঠিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বগুড়ায় মা ও মেয়ের উপর নির্যাতনের ঘটনার নিন্দা ও দোষীদের শাস্তি দাবি করে রিজভী বলেন, অনেক তুফান আপনারা তৈরি করেছেন, আপনারা তুফান দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় দিয়ে আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রে যখন নির্দয়, কর্তৃত্বপরায়ণ ব্যক্তির আধিপত্যে সকল প্রতিষ্ঠান ধবংসপ্রাপ্ত এবং রাষ্ট্রের উঁচু পর্যায় থেকে আদর আর সোহাগে দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দুর্দমনীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগ-শ্রমিক লীগের অপকর্মে মাতম সৃষ্টি হয়েছে। এরকম এক ভয়ঙ্কর দুঃসময়ে সুপ্রিম কোর্ট যে যুগান্তকারী রায় কালকে (মঙ্গলবার) দিয়েছেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুন:স্থাপন করে। এখানে আইনের শাসনের যাত্রাপথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এদেশের মানুষের কিছুটা হলেও আশাবাদ তৈরি হয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। আজকে গোটা জাতি যখন বন্দি করা হয়েছে একদলীয় দুঃশাসনের করাল গ্রাসের মধ্যে, সেসময়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি এক অসীম সাহসিকতার রায়টি দিয়েছেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করে গোটা জাতির মধ্যে কিছুটা হলেও আশা জাগিয়ে তুলতে পেরেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশকে ঐতিহাসিক অভিহিত করে বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি জাতিকে আশান্বিত করেছেন। তবে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অনেক কালো আইন তৈরি করেছে।
দেশ ক্ষমতাসীনদের রাহুগ্রাসে আক্রান্ত মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমরা কী আফ্রিকার জঙ্গলে বাস করছি নাকী একটি সভ্য দেশে বাস করছি? আজকে আমাদের প্রশ্ন হলো বাংলাদেশকে কোন রাহুগ্রাস আচ্ছন্ন করে দিলো? আমি আতঙ্কিত। যদি এই সরকারের বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ থাকে, আত্মসম্মানবোধ থাকে তাহলে এই মুহুর্তে তাদের পদত্যাগ করা উচিৎ। জনগণের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা তাদের করা উচিৎ। তিনি বলেন, এটা কীভাবে সম্ভব? একজন নিরহ তরুণী-কিশোরীকে কলেজে ভর্তি করে দেবার কথা বলে তার সম্ভ্রমহানী করা হয়েছে। কারা করেছে? যারা এই কাজ করছে তাদের ওপর সরকারের অথবা যারা ক্ষমতাবান, যারা প্রশাসন ও এদেশের শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের যদি রহমত না থাকে তাহলে কে এই ধরণের অপকর্ম করতে সাহস করবে?
বগুড়ায় দুই নারী নির্যাতনের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমি শুধু বলব- আজকে ওই অপরাধ যে করেছে, তার যারা সহযোগী ছিলো শুধু তাদেরকে দোষারোপ করবো না, আমি প্রশ্ন করবো তাদেরকে কারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এবং আজকে দেশ-জাতিকে কারা রাহুগ্রস্থ করেছে তার জবাব সরকারকে দিতে হবে। আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই- এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। আজকে যতই তাদের শক্তি থাকুক, যতই ক্ষমতা থাকুক, বুঝতে হবে তাদের শক্তি হচ্ছে বন্দুকের শক্তি, তাদের শক্তি হচ্ছে সন্ত্রাসের শক্তি। এভাবে তো কোনো দেশ চলতে পারে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার দাবিও জানান মঈন খান।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজকে দেশের সমস্ত সমাজ ব্যবস্থা ধবংস করে দেয়া হয়েছে। এই সরকার দেশে কোনো ভালো কাজ করতে পারেনি, তারা জনগণের কোনো কল্যাণ করতে পারেনি। তারা একটি মাত্র কাজ করেছে এদেশে যত রকমের অন্যায়-অত্যাচার-অপকর্ম এগুলোর প্রসার ঘটিয়েছে এবং এদেশে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান, তাকে একের পর এক ধ্বংস করে দিয়েছে। সারাদেশে নারী নির্যাতনের জন্য ক্ষমতাসীনদলকে অভিযুক্ত করে এর নিন্দা জানান মঈন খান।
সভাপতির বক্তব্যে আফরোজা আব্বাস বলেন, তুফান সরকার, তার ভাইসহ তাদের সহযোগীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ফাঁসি দাবি করেন।
মহিলা দলের নেতাকর্মীরা ওই ঘটনার প্রতিবাদে কালো কাপড় মুখে বেঁধে প্রতিবাদ জানান। মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, কেন্দ্রীয় নেতা পেয়ারা মোস্তফা, শামসুন্নাহার ভুঁইয়া প্রমুখ।



 

Show all comments
  • জুবায়ের ৩ আগস্ট, ২০১৭, ২:১৬ এএম says : 1
    ধর্ষণ এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • afsar ৬ আগস্ট, ২০১৭, ১:৩৭ এএম says : 0
    Tofans are very important to politicians., specially in Bangladesh.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ