Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রমাণিত হলো সহায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় -মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রামপাল নিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা মিথ্যাচার করছেন
স্টাফ রিপোর্টার : নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ও সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা ছাড়া নির্বাচন কোনোভাবেই সুষ্ঠ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এটা প্রমাণিত হলো সহায়ক সরকার ছাড়া অর্থাৎ একটা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। বিএনপি যে দাবি করে আসছিল সেই একই দাবি জানিয়েছে দেশের সুশীল সমাজ। নির্বাচন কমিশনের ডাকা সংলাপে অংশ নিয়ে দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা যে মতামত দিয়েছেন তার সমর্থন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সংলাপে তারা (সুশীল সমাজ প্রতিনিধি) বলেছেন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং তাদেরকে নির্বাচনকালীন ম্যাজিস্ট্রেসিয়াল ক্ষমতা দিতে হবে। যার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় আমরা বিএনপি সঠিক।
গতকাল (মঙ্গলবার) রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদের হল রুমে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু’র মুক্তির দাবিতে এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে বরকত উল্লাহ বুলু মুক্তি পরিষদ।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে হওয়া নির্বাচন কমিশনের সংলাপের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা পত্র-পত্রিকায় যা দেখেছি, সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন যে, সহায়ক সরকার ছাড়া অর্থাৎ একটা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তারা বলে এসেছেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়া, তাদেরকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তারা পরিষ্কার করে বলেছেন, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনতে হবে এবং তাদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় অভিযোগ করে তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে জনগণকে ভুল বুঝিয়ে নীলনকশা বাস্তবায়নে। এই কমিশনের সিইসি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি জনতার মঞ্চের লোক। নিরপেক্ষ নন। ফলে তার অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। হতে পারে না।
রামপাল নিয়ে জ্বালানী উপদেষ্টা মিথ্যাচার করছে
সুন্দরবনের রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ইউনেস্কোর অবস্থান নিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা মিথ্যাচার করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ইউনেস্কো প্রতিবেদনে বলেছে, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যাবে না। সংস্থার প্রতিবেদনে এটা প্রমাণিত হল। আওয়ামী লীগের নেতারা বিশেষ করে দায়িত্বে যে উপদেষ্টা আছেন, তিনি তারপরও মিথ্যা কথা বলছেন। উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী নিজের স্বকীয়তা ত্যাগ করে, নিজের বিবেককে বাদ দিয়ে এদেশকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কীভাবে মিথ্যা কথা বললেন, আমি গতকাল (সোমবার) সংবাদ সম্মেলনটা শুনেছি। এদের চেহারা উন্মোচন হওয়া প্রয়োজন। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে সংস্থাটি উদ্বেগ জানিয়ে এলেও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির সভার পর তারা ‘আপত্তির জায়গা থেকে সরে এসেছে’ বলে দাবি করে সরকার। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী পরিবেশ ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সরকারের ওই বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসার পর গত ৩০ জুন ওই সভার সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর দেখা যায়, তার সঙ্গে সরকারের বক্তব্য পুরোপুরি মিলছে না।
বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে এলে সংবাদ সম্মেলনে এসে হেরিটেজ কমিটির সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব নেওয়া প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, ইউনেস্কো সুন্দরবন এলাকার কৌশলগত পরিবেশ মূল্যায়নের (এসইএ) আগে সেখানে অন্য কোনো বড় শিল্প বা অবকাঠামো নির্মাণ না করতে সরকারকে নজর রাখার পরামর্শ দিলেও রামপাল প্রকল্প এগিয়ে নিতে বলেছে। এ ধরনের বক্তব্যকে তৌফিক ইলাহীর স্বকীয়তা বিসর্জন দেওয়া মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি ক্ষমা চেয়ে নিতে চাই, জ্বালানী উপদেষ্টা আমার শিক্ষক। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নাম ছিল, অত্যন্ত মেধাবী ব্যুরোক্রেট ছিলেন, আমলা ছিলেন এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা নিঃসন্দেহে। আজকে কী ঘটল যে, আপনি আপনার সমস্ত স্বকীয়তা ত্যাগ করে, নিজের বিবেককে বাদ দিয়ে আপনি এদেশকে ধ্বংস করবার একটা কাজে লিপ্ত হয়েছেন।
সুন্দরবনকে দেশের ‘লাইফ ল্যান্ড’ অভিহিত করে সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আমাদের সুন্দরবন আমাদের লাইফ ল্যান্ড, সুন্দরবন আমাদের রক্ষাকবজ। আমাদের পরিবেশকে রক্ষার জন্যে, আমাদের মাটিকে রক্ষা করবার জন্যে সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই। সেটাকে ধ্বংস করবার জন্য আপনারা (সরকার) সেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দিচ্ছেন এবং দেওয়ার উদ্দেশ্য কার- কার জন্য দিচ্ছেন? সেটা কী জনগণের জন্য দিচ্ছেন, নাকি অন্য কারো যে স্বার্থ- সেটাকে চরিতার্থ করবার জন্য দিচ্ছেন।
বিএনপি’র এই নেতা আরও বলেন, দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা ব্যক্তিরা ইতোমধ্যে জনগণের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো হবে। যারা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করবে তাদেরকে দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
রামপালের মতো জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার নিয়েও সরকার মিথ্যাচার করছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বলছে দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি হার (জিডিপি) ৭ শতাংশের উপরে। এই প্রবৃদ্ধির হার নিয়েও তারা মিথ্যাচার করছে। আজকে যে জাতীয় প্রবৃদ্ধির কথা বলছেন সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হার্বার্ডের একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সার্ভে রিপোর্টে দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি চার এর উপরে বেশি নয়। বিশ্বব্যাংক বলছে, এটা ৬ এর উপরে কোনো মতে যেতে পারে না। আজকের পত্রিকায় দেখবেন, আমাদের বিজিএমইএ (পোশাক রপ্তানিকারক মালিক সমিতি) প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে’। প্রতিটি ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ করে দেখবেন তারা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছেন না, শিল্প উৎপাদন নেই। বিএনপি মহাসচিব সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, দেয়ালের লিখন পড়ুন, মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন আর সত্যটাকে জানার চেষ্টা করুন। জনগণকে বেশিক্ষণ বোকা বানিয়ে রাখা যায় না, কিছুক্ষণের জন্য বোকা বানিয়ে রাখা যায়।
বিচার বিভাগকে সরকার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমাদের প্রধান বিচারপতি এই সরকারের স্বরূপ উন্মোচন করে দিয়েছেন। পরিষ্কার করে বলেছেন, তারা কী অবস্থায় আছেন, এই সরকার কী চেষ্টা করছেন। গণতন্ত্র ও সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে নিয়ে তারা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ হিটলারকে অনুসরণ করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের চামড়া খুব মোটা। যা বলেন, ওদের কিছু যায় আসে না। তারা হিটলারকে বেশি অনুসরণ করে, তারা হিটলারকে পুরো দেবতা মনে করে, তার যাবতীয় কাজ করে। তার যে তথ্যমন্ত্রী ছিল- গোয়েবলস, উনি বলতেন যে একটি মিথ্যাকে বার বার বলতে থাকো, তা সত্য প্রমাণিত হয়ে যাবে, জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করবে। এজন্য আওয়ামী লীগ মিথ্যা বলতেই থাকে। নির্বাচন হবেই হবে, আর শেখ হাসিনা একমাত্র নেত্রী তার অধীনে নির্বাচন হবে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, ওইরকম নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করবে না। দেশে ৫ জানুয়ারির মতো আর কোন নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না।
সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ‘বিরাজনীতিকরণ’ প্রক্রিয়া শুরু করে অভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸান জানান বিএনপি মহাসচিব। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজেদের শক্তিতে দাঁড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। ঘরের মধ্যে প্রতিবাদ করলে হবে না। রাজপথে নামতে হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আওয়ামী লীগকে সরানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
বরকত উল্লাহ বুলু পরিষদের সভাপতি মো. মাসুদ রানা’র সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, হারুনুর রশীদ হারুন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, কাদের গনি চৌধুরী।



 

Show all comments
  • Aminul Islam ২ আগস্ট, ২০১৭, ১:৪০ এএম says : 1
    That's true
    Total Reply(0) Reply
  • MD:MIJANUR RAHAMAN ২ আগস্ট, ২০১৭, ২:১৯ এএম says : 0
    No
    Total Reply(0) Reply
  • S. Anwar ২ আগস্ট, ২০১৭, ৮:২৭ এএম says : 0
    বিএনপি-র সকল সিদ্ধান্ত যে সম্পুর্ন সঠিক ও কালোপযোগী ছিলো এতে কোন সন্দেহ নেই। কারন জনগনের আকাংখা ও ইচ্ছার প্রতিফলনই বিএনপি-র সিদ্ধান্ত। সময়ের প্রবাহে আজ একে একে সব সত্য প্রমানিত হয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগতো এক সুযোগে হঠাৎ চক্রান্ত-বৃক্ষের উপর থেকে লম্প দিয়ে রাষ্ট্র-সিংহের পৃষ্ঠে আসীন হয়েছিলো কিন্তু নিয়ন্ত্রণ-জ্ঞান না থাকায় তার কেশর টেনে টেনে দিগ্বিদিক বেপরোয়া ছুটতে গিয়ে রাষ্ট্র-সিংহের মেজাজ যেমন বিগড়ে ফেলেছে, তেমনি আওয়ামী লীগ নিজেও হয়ে গেছে ক্লান্ত-দুর্বল। এখন আর সিংহের পৃষ্ঠ হতে নামার সুযোগও পাচ্ছে না। নামাটা হয়তো বড় কোন বিষয় নয়, কিন্তু বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হলো একটা। আর তা হলো-- নামার পরে কি হবে.???
    Total Reply(0) Reply
  • Ah Shipon ২ আগস্ট, ২০১৭, ১০:৪৭ এএম says : 0
    absolutely right sir
    Total Reply(0) Reply
  • Kabir Sarkar ২ আগস্ট, ২০১৭, ১০:৪৮ এএম says : 0
    Right
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ