পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শামসুল ইসলাম : হজযাত্রী পরিবহনে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। যাত্রী সংকটের দরুণ দফায় দফায় বিমানের হজ ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে। হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিমানকে কোটি কোটি টাকা গচ্ছা এবং শ্লট বাতিল হচ্ছে । হজ ভিসা সংকট দ্রুত সম্পন্ন না হলে প্রায় ৪০ হাজার হজযাত্রী’র হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি গতকাল মঙ্গলবার সকালে হাজী ক্যাম্পে বিমান শ্রমিক লীগের (সিবিএ) হজযাত্রীদের জন্য বিশেষ সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বিমান মন্ত্রী বলেন, বিমান হজযাত্রী পরিবহনে শতভাগ প্রস্তুুত হলেও ভিসা না পাওয়ায় তাদের (হজযাত্রীদের) পরিবহন করতে পারছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে ফ্লাইট বরাদ্দ নিয়ে। বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলোর জন্য বিমান আবেদন করেছে। সেগুলো পেলে সমস্যা হবে না। আর না পেলে ৪০ হাজার হজযাত্রীর হজ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বঙ্গবন্ধুর ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে মাসব্যাপী বিমান শ্রমিক লীগের এ কর্মসূচিতে বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারী, বিমানের এমডি ও সিইও এএম মোসাদ্দিক আহমেদ, শ্রমিক লীগ (সিবিএ) সভাপতি মো. মশিকুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। গত ২৪ জুলাই থেকে আজ বুধবার রাত পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে’র ১২টি হজ ফ্লাইট ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে সাউদিয়া এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সেরও তিনটি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিমানের সংশ্লিষ্ট সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। হজ ফ্লাইট নিয়ে বিপর্যয় শুরু হওয়ায় আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বিমান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জরুরী সভা ডেকেছেন। সভা শেষে তিনি প্রেস ব্রিফিং করবেন। সমন্বয়হীনতার দরুন বিমানের হজ ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। এর দায়-দায়িত্ব বিমানকেই নিতে হবে। মক্কা থেকে গতকাল মঙ্গলবার হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী টেলিফোনে এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ২৪ জুলাই থেকে আগামীকাল বুধবার রাত পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মোট ১২টি হজ ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে বাতিল করা হয়েছে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ৩টি হজ ফ্লাইট। বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত ১২টি ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। এই ১২টি ফ্লাইটে ৪ হাজার ১৫৩ জন হজযাত্রী যেতে পারতেন। ভিসা জটিলতার কারণে গত বছরও বিমানের ২০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ২৯টি ডেডিকেটেট হজ ফ্লাইট ও ৮টি শিডিউল ফ্লাইটে হজযাত্রী পরিবহন করা হয়েছে।
বিমানের সর্বোচ্চ গ্রাহকের (টপ-টেন) নামে যে সিন্ডিকেটের হাতে পুরো হজ টিকিট তুলে দেয়া হয়েছে তারা সব সময়েই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট চক্র এখন কেন যথাসময়ে হজযাত্রী দিতে পারছে না সে ব্যাপারে কোনো উচ্চ-বাচ্চ্য নেই। বিমানের কতিপয় কর্মকর্তার সাথে হজ টিকিট সিন্ডিকেট চক্রের দহরমহর সর্ম্পকেরও মুখরোচক গল্প শোনা যায়। সউদী সরকার ২০১৫ ও ২০১৬ সালে যারা হজে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে এবারও যারা হজে যাচ্ছেন তাদের মোফা সেন্ট করার সময়ে জনপ্রতি ২ হাজার রিয়াল এজেন্সি’র আইবিএএন-এর একাউন্ট থেকে কেটে নিচ্ছে। এতে দ্বিতীয় বারের প্রায় ১৫ হাজার হজযাত্রী’র ২ হাজার রিয়াল করে যোগাড় করতে গলদর্ঘম পোহাতে হচ্ছে। দ্বিতীয় বারের হজযাত্রীদের জনপ্রতি দুই হাজার রিয়াল অতিরিক্ত ট্যাক্স দেয়ার বিষয়টি সরকার অনুমোদিত হজ প্যাকেজেও উল্লেখ ছিল না। দ্বিতীয় বছরের ১৫ হাজার হজযাত্রী হলে জনপ্রতি ২ হাজার রিয়াল করে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। হাবের মহাসচিব মো: শাহাদাত হোসাইন তসলিম গত ৩০ জুলাই দুই হাজার রিয়ালের নতুন ট্যাক্স পরিশোধের জন্য দ্রুত সার্কুলার জারির লক্ষ্যে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে চিঠি দিয়েছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সার্কুলার জারি না হওয়ায় দ্বিতীয় বারের এসব হজযাত্রী হজে যেতে সউদীর নতুন ২ হাজার রিয়াল ট্যাক্স দিতেও রাজি হচ্ছে না। এদের ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় গ্রুপের অন্যান্য হজযাত্রীদের সউদী আরবে পাঠানো যাচ্ছে না। অনলাইনে সার্ভার সমস্যার কারণে ভিসা বের করার সময়ে গ্রুপ ভিসার মধ্যে ৩/৪ জনের ভিসা বের হচ্ছে না। এতে অনেক গ্রুপের হজযাত্রীরা ভেঙ্গে ভেঙ্গে হজে যেতে রাজি হচ্ছেন না। এসব কারণেও হজ ফ্লাইট খালি যাচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি ৯১টি হজ এজেন্সি’র প্রায় ১৪ হাজার হজযাত্রীর সউদী আরবে মুয়াল্লেম পেতে ১৫ দিন বিলম্ব হয়। এসব হজযাত্রীর ভিসা সংক্রান্ত অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
বিকেলে হাজী ক্যাম্পে পরিচালক হজ সাইফুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে। প্রায় ২৫ হাজার হজযাত্রী সউদী আরবে চলে গেছেন। সউদী সরকার দ্বিতীয় বারের হজযাত্রীদের জনপ্রতি দুই হাজার রিয়াল এজেন্সি’র একাউন্ট থেকে কেটে নিচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে ধর্মমন্ত্রী ও মক্কাস্থ বাংলাদেশ হজ মিশনের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও পরিচালক হজ উল্লেখ করেন। হজযাত্রী পরিবহনের ভয়াবহ বিপর্যয় আজ কালের মধ্যে কেটে যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এসময়ে হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম ও হাবের ক্যাশিয়ার মাওলানা ফজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। হাবের মহাসচিব শাহাহাদ হোসাইন তসলিম বলেন, দ্বিতীয় বারের সরকারী ও বেসরকারী হজযাত্রীদের কাছ থেকে সউদী সরকার জনপ্রতি দুই হাজার রিয়াল নতুন ট্যাক্স কেটে নিচ্ছে। উল্লেখিত দুই হাজার রিয়ালের নতুন ট্যাক্স পরিশোধের জন্য ধর্মমন্ত্রণালয় থেকে সার্কুলার জারির জন্য হাব থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তার পরেও সার্কুলার জারি করা হয়নি। বেসরকারী হজ এজেন্সি বাংলাদেশ এয়ার ট্রাভেলসের (৬৯৩) স্বত্বাধিকারী আলহাজ হাফেজ মাওলানা জাহিদ আলম দফায় দফায় হজ ফ্লাইট বাতিলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে হজযাত্রী পরিবহনে সৃষ্ট সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামান করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।