Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সুন্দরবনের রক্ষীরা ঝুঁকিভাতা চান

| প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) থেকে: বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনে কর্মরত বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাহাড়ী বনের ন্যায় বাড়তি ভাতা হিসেবে ঝুঁকি ভাতার দাবী জানিয়েছেন। এ দাবীতে গত এক দশকের বেশী সময় ধরে বাংলাদেশ মিনিষ্টিরিয়্যাল এসোসিয়েশন নামের কেন্দ্রীয় বন কর্মচারীদের সংগঠনটি সরকারের কাছে সভা সমাবেশ করে তাদের দাবী দাওয়ার পক্ষে যৌতিকতা তুলে ধরে আসছে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগীয় বন কল্যান সমিতির সভাপতি অলিউর রহমান জানিয়েছেন, বনরক্ষীদের ঝুঁকিভাতা ও রেশন চালুর দাবী সম্বলিত প্রস্তাবনা ইতপূর্বে কয়েকবার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় সেটি বিবেচনায় না নিয়ে ফেরত পাঠানোর কারনে ৬০৬০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পশ্চিম ও পূর্ব সুন্দরবনে কর্মরত সহ¯্রাধিক বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ভাগ্যে ঝুঁকিভাতার প্রাপ্যতা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না।
পশ্চিম সুন্দরবনে কর্মরত দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, বন রক্ষায় তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গহীন বনের টহল ফাঁড়িতে বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করছেন। জনমানবশূণ্য গহীন বনে মাঝে মাঝে দু’চারটি জেলের সন্ধান মেলে। চারিদিকে লোনা পানি বেষ্টিত বনের নদী খালে সকাল সন্ধ্যায় বোট চালিয়ে ডিউটি শেষে রাতে চৌকি অফিসে ফিরে আসতে হয়। নেই হাট বাজার, দোকান পাট, প্রয়োজনীয় কিছু কেনা কাটার ইচ্ছা থাকলেও করার কিছুই নেই। মাঝে মাঝে সরকারি কাজে রেঞ্জ অফিসে এসে কাজ শেষে বাজার থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, ঔষধ, তৈল, তরিতারকারি,মসলা, সাবান কিনে নিয়ে যেতে হয়। বনদস্যুদের ভয়ংকর তান্ডব উপেক্ষা করে সরকারি দায়িত্ব পালন করার পরও বাড়তি সুযোগ সুবিধার অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে বনরক্ষীদের। পশ্চিম সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ষ্টেশনের বনরক্ষী সাইফুর রহমান বলেন, পরিবার পরিজন দুরে রেখে মাসের পর মাস বন রক্ষায় কাজ করছি কিন্তু পাহাড়ী বনে যে ভাতা দেওয়া হয় সুন্দরবনে আমাদের তা দেওয়া হয়না। গেওয়াখালি বনটহল ফাঁড়ি ইনচার্জ শেখ মামুনুর রহমান বলেন, নলিয়ান রেঞ্জ অফিস থেকে ৪৫ কিলোমিটার গহীন বনে তারা জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন। এ জন্য ঝুঁকি ভাতা ও রেশনিং প্রথা চালুর দাবী করেন তিনি। পাথকষ্টা বন টহল ফাঁড়ি ইনচার্জ মোঃ হেমায়েত উদ্দিন জানান, নির্জন গহীন বনে বছরের পর বছর চাকুরী করে আসছি কিন্তু শহরের চাকুরীজীবিদের মতো শুধু বেতন ভাতা পাই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বনরক্ষীরা চাকুরী করেন সেজন্য পাহাড়ী বনাঞ্চলের ন্যায় সুন্দরবনে অনুরূপ সুযোগ সুবিধার দাবী জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগীয় কর্মকর্তা বশিরউল আল-মামুন বলেন, বিগত দেড়’শ বছরের বেশী সময় ধরে নানান প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সুন্দরবন রক্ষায় কাজ করে আসছেন বনরক্ষীরা। এ কারনে দেশের অন্যান্য বনাঞ্চলের ন্যায় সুন্দরবনে কর্মরত বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঝুঁকি ভাতার দাবীটি অত্যন্ত যৌতিক। গত ২৯ জুলাই বাগেরহাটে বাঘ দিবসের এক আলোচনা সভায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়ের সচিব ইশতিয়াক আহমদ ঝুঁকিভাতার বিষয়টি শীঘ্রই আলোর মুখ দেখবে বলে মন্তব্য করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ