পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ এম এম বাহাউদ্দীন : সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বের একমাত্র মোড়ল হয়ে ওঠে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর কিন্তু পাল্টে গেছে ওই দেশের চালচিত্র। ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্টের লাগামহীন কথাবার্তা এবং পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে মতবিরোধে চলছে তোলপাড়। ট্রাম্পের পছন্দের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের সঙ্গে চলছে প্রেসিডেন্টের ঠান্ডা লড়াই। এ কারণে হোয়াইট হাউজ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন না। প্যাট্রিক কেনেডি, জয়সি বার, মাইকেল বন্ড, জেনট্রি স্মিথের ঝানু কূটনীতিকরা ট্রাম্প প্রশাসন থেকে সরে গেছেন। একজন ঝানু কূটনীতিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে জিজ্ঞাস করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে এখন কি কি গুরুত্ব পাবে? টিলারসন জানান, সন্ত্রাসবাদ দূর করা, উগ্রবাদ প্রতিহত এবং চায়নার সঙ্গে লেনদেন (ডিল)। সারাবিশ্বে যে চীনের আধিপত্যের বিস্তার বাস্তবতার নিরিখে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তা মেনে নিচ্ছে। এতেই বোঝা যায় বিশ্ব রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে চীনের অবস্থান কোন পর্যায়ে!
বিশ্বকে এখন বলা হয় গ্লোবাল ভিলেজ। প্রতিটি দেশের স্বাতন্ত্র্য ভূখন্ড থাকলেও এককভাবে টিকে
থাকা প্রায় অসম্ভব। বিশ্বরাজনীতিতে আদর্শের লড়াই আছে; নীতি-নৈতিকতাও গুরুত্বপূর্ণ; তারও চেয়ে অতি প্রয়োজনীয় হয়ে গেছে অর্থনীতির বিকাশ। নাগরিকের অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তায় রাষ্ট্রের কাছে দর্শন-আদর্শের চেয়ে হয়ে ওঠে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। দুই পরাশক্তির অন্যতম ক্রেমলিনের পতনের পরও দেশে দেশে বিরোধ ছিল দর্শনগত কারণে; এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সম্পর্ক ছিল সাপে-নেউলে। গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে সে অবস্থা কার্যত নেই বললেই চলে। বিশেষ করে চীনের ক্ষেত্রে। অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। শিল্পায়ন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সামরিক, অর্থনৈতিক, চিকিৎসা, বিজ্ঞান, পর্যটন, যোগাযোগ, মহাকাশ গবেষণা এমনকি বিভিন্ন দেশের সাথে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সেতুবন্ধন প্রতিষ্ঠা করছে প্রায় দেড়শ’ কোটি জনসংখ্যার উদীয়মান দেশটি। শিল্পায়ন এমন পর্যায়ে গেছে যে, বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারে এখন চীনের তৈরি পণ্যসামগ্রী ব্যবহৃত হয়। এক সময়ের কমিউনিজম বলয় থেকে বেরিয়ে দেশটির শক্তিশালী নেতা দেং শিয়াও পিং যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন এখন তার সুফল পাচ্ছে চীনের নাগরিকরা। বর্তমান প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের যোগ্য নেতৃত্ব যেভাবে চীনকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছে তাতে আগামীতে দেশটিকে গোটা বিশ্বকেই সমীহ করতে হবে। শি জিনপিং-এর ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ মহাপরিকল্পনা ৬৪টি দেশের মূল ভূখন্ডকে চীনের সঙ্গে যুক্ত করবে, যা এতদিন কল্পনাও করা যেত না। গত জুলাই মাসেও চীন থেকে পণ্য নিয়ে ট্রেন মাত্র ১৮ দিনে লন্ডন পৌঁছে। এক সময় এটা ভাবাই যেত না।
অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে চীন বিশ্বমন্ডলে কার্যত টর্নেডোর গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। উদ্দেশ্য সর্বক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বে নেতৃত্ব প্রদান। শি জিনপিং সে পথেই হাঁটছেন। প্রায় দুই হাজার বছর আগে চীনে হান সাম্রাজক্যকাল প্রতিষ্ঠিত হয় সিল্ক রুট নামের ঐতিহাসিক বাণিজ্য পথ। ওই রুট দিয়ে চীনের তৈরি সিল্ক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাঠানো হতো বলেই রোডের নামকরণ করা হয় সিল্ক রুট। ওই সড়ক পথে শুধু চীনা ব্যবসায়ীরাই নয়; আরব, তুরস্ক, আর্মেনিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা ইউরোপ, আফ্রিকা আর এশিয়ার দেশগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য করত। এত বছর পর সেই ধারণাকে সামনে রেখে ৬৫টি দেশকে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ নির্মাণের মহাপরিকল্পনা নিয়েছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। উদ্দেশ্য সড়কপথে অল্প খরচে এবং কম সময়ে চীনের পণ্য বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়া। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সেই ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডে থাকছে দু’টি অংশ। প্রথমত ‘সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট’। চীনের সিয়ান প্রদেশ থেকে উরুমকি হয়ে সড়কপথ তৈরি হবে, যা তুরস্কের ইস্তাম্বুল, কাজাখস্তান, মস্কো, পোল্যান্ড, জার্মানির হামবুর্গ, হল্যান্ডের রটারডাম হয়ে মাদ্রিদে গিয়ে শেষ হবে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুরকেমেনিস্তানও এই সুবিধা পাবে। দ্বিতীয়ত হলো ‘টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি মেরিটাইম সিল্ক রোড’। সমুদ্রপথে আফ্রিকার জিবুতি, কেনিয়ার মোমবাসা বন্দরের সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর ও মিয়ানমারও সংযুক্ত হবে এই পথে। কয়েক বছর আগেও বিশ্ব অর্থনৈতিক কাঠামোটার নিয়ন্ত্রক ছিল পাশ্চাত্য জগৎ তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। চীনের এই ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড সেটার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। চীনের সঙ্গে বিরোধ এবং মনোসতাত্তি¡ক বিরোধের কারণে ভারত সেখানে নেই। বাংলাদেশে চীনের বিপুল বিনিয়োগ। চীনের প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরে এসে ৩৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশে যে বিদেশী বিনিয়োগ তার সবচেয়ে বেশি চীনের। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা নেই কেন? সারা বিশ্ব যখন চীনের বিনিয়োগের সুবিধা নিচ্ছে; আমেরিকা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাচ্ছে; তখন সে সুযোগ আমরা কেন নিচ্ছি না?
চীনের পররাষ্ট্রনীতি হলো চীনের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভূ-ভাগের অখন্ডতা রক্ষা করা, আধিপত্যের বিরোধিতা করা, বিশ্বশান্তি রক্ষা করা, দেশ যত ছোট-বড় হোক, শক্তিশালী-দুর্বল হোক সবাই আন্তর্জাতিক সমাজে একই মর্যাদাপ্রাপ্ত। চীনের এই নীতির কারণেই তারা যে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে এবং সামরিক শক্তি সরঞ্জামের উপস্থিতি ঘটাচ্ছে সেসব দেশও চীনকে আগ্রাসী মনে করছে না। পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, ইরান, নেপাল প্রায় সব দেশই নিজ নিজ ভূখন্ডে চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক আধিপত্য মেনে নিয়েই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের কথা ধরুন। ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড-এর আওতায় পাকিস্তানে ৫৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ করছে চীন। সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। গোয়ালিয়ায় সমুদ্র বন্দর করেছে। সে পোর্ট সামরিক-বেসামরিক ও ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার হবে। কাশ্মিরের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। চীনের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগে পাকিস্তানের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মানুষের নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে; নাগরিকের জীবনমানের উন্নতি ঘটিয়েছে। সে দেশের মানুষ চীনের নতুন নতুন বিনিয়োগে এতই উপকারভোগী হচ্ছেন যে, তারা এখন চীনের সামরিক উপস্থিতির বিরোধিতা করার প্রয়োজন মনে করছে না। রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ডসহ অনেক দেশ পাকিস্তানে ব্যবসা-বাণিজ্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।
মিয়ানমারে বহুদিন সেনা শাসক ছিল। বর্তমানে সে দেশের যে পরিবর্তন এবং অং সান সুচিকে ক্ষমতায় আনার পেছনে মার্কিনিদের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। যার জন্য বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় ২০১২ ও ২০১৪ সালে দুইবার মিয়ানমার সফর করেন। বিশ্বের ঝানু কূটনীতিকদের ধারণা ছিল সুচির ক্ষমতা গ্রহণ এবং আমেরিকার প্রভাবের কারণে মিয়ানমার থেকে চীন ‘নাই’ হয়ে যাবে। অথচ সুচি ক্ষমতা গ্রহণের পর চায়নার উপস্থিতি সেখানে ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। চীনও বিনিয়োগে মিয়ানমারকে উজাড় করে দিচ্ছে। বহু জাতিগোষ্ঠী ও বিদ্রোহী গ্রুপের বসবাস মিয়ানমারের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে চীন এমনভাবে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে যে, সে দেশের সব পক্ষই এখন চীনের ব্যাপারে উৎসাহী। মিয়ানমারে শুধু রোহিঙ্গা সমস্যা নয়; সেখানে অনেক জাতিগোষ্ঠী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী সক্রিয়। সংঘাত-সংঘর্ষ ছিল সেখানে নিত্য ঘটনা। যুগের পর যুগ ধরে জাতিতে জাতিতে বিরোধ-সংঘাত-সংঘর্ষ চলেই আসছে; বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো স্বাধীনতা চাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে এই জাতিগত সংঘাত ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কাছে অস্ত্রের যোগান আসত চীন থেকে। সেই চীনের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে মিয়ানমারের নাগরিক জীবনচিত্র পাল্টে দেয়ায় বিবদমান জাতিগোষ্ঠীগুলো একত্রিত হয়ে চীনের বিনিয়োগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কারণ তারা বুঝে গেছে চীনের বিনিয়োগের অর্থনৈতিক সুবিধা তারা পাচ্ছেন। মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশ দরিদ্র। সেই দরিদ্র প্রদেশের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত এলাকা হিসেবে পরিচিত কায়ুক প্যাঁ (কুধঁশ চুধ)। সেখানে বসবাসরতদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি। ভারত মহাসাগরের পূর্বের দিকে সামরিক গুরুত্বপূর্ণ ওই আরাকানের চীন ৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে। সেখানে চীনের নৌপথে বাণিজ্য হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন এবং কায়ুক প্যাঁ দরিদ্র এলাকায় পাইপের মাধ্যমে এখন গ্যাসের লাইন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওই এলাকায় আরো সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি অর্থনৈতিক বিশেষ অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। ফলে আমেরিকা পুতুল খ্যাত নোবেল বিজয়ী সুচি সরকার উন্নয়নের প্রয়োজনে এখন চায়নামুখী হয়েছেন। এমনকি চায়না বিনিয়োগে যদি বাধা আসে সে আশঙ্কা থেকে সুচি আমেরিকা সফর বাতিল করেছিলেন।
শ্রীলংকা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। যুগের পর যুগ ধরে তামিল টাইগারদের সঙ্গে যুদ্ধ করে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ে। সেই শ্রীলংকার উন্নয়নে দুই হাতে ডলার ঢালছে চীন। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দর অধিগ্রহণ করছে চীন। তারা ১১২ কোটি ডলারে ৯৯ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে বন্দরটি ইজারা নিয়েছে। ভারত মহাসাগরকে ঘিরে প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে আগ্রহ যে সময় বাড়তে শুরু করেছে সে সময় এই বন্দর শ্রীলংকার জন্য যথেষ্ট সুবিধাজনক হবে। আফগানিস্তানে ট্রাম প্রশাসনের চোখ প্রাকৃতিক সম্পদের দিকে। সেখানে আমেরিকার হিসাব মতে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের খনিজ সম্পদ রয়েছে। সে জন্য আমেরিকা সেখানে সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করছে, যুদ্ধ করছে। অথচ চীন সেখানে শিল্পায়ন করছে; অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। নিজেরাই অর্থ ব্যয় করে খনিজ সম্পদ আহরণ করে আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। চীন সম্পর্কে মানুষের মনোভাব বুঝতে পেরে আমেরিকা সেখানেও সম্পর্ক গড়তে চাচ্ছে চায়নার সঙ্গে। ইরান মধ্য সারির পরাশক্তি। বিশ্বের সামরিক কৌশলগত নীতিতে চীনের আধিপত্য মেনে নিয়েই ইরান চায়নার ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে সুযোগ করে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার বার যখন ইরানের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করছে; তখন চীন ইরানে বিনিয়োগে পিছপা হয়নি। পরীক্ষিত বন্ধুর মতোই বিনিয়োগ করেছে ঝুঁকি নিয়েই। তাই ইরান বেশ ভালোভাবেই চীনকে গ্রহণ করেছে। আর চীনও ইরান হয়ে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর তাজাকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কেমেনিস্তান যাচ্ছে।
শি জিনপিং বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েই চীনকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সামরিক ও অর্থনৈতিক বুনিয়াদির কারণে এখন চীন এককভাবে যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে; আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসির মতো প্রভাবশালী সংস্থার পক্ষেও তা সম্ভব নয়। নেপালে চীনের বিনিয়োগ উল্লেখ করার মতোই। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপালের অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে শিল্প সবকিছুই করছে চীন। ভারতের যখন বাধার মুখে পড়েছে তখন নেপালের পাশে দাঁড়িয়েছে চীন। আর ভুটান? চীন-ভুটান-ভারত (সিকিম) সীমান্তের ডোকা লা মালভূমি এলাকায় ভুটানের ভূখন্ডে চীন রাস্তা তৈরি করছে। এর প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। ভারতের দাবি চীনের রাস্তা ডোকা লা অঞ্চলের স্থিতাবস্থার জন্য হবে বিপজ্জনক। এ ঘটনায় চীন-ভারত সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। কিন্তু যার ভূখন্ডে রাস্তা হচ্ছে সেই ভুটান যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তা উল্লেখ করার মতো নয়।
চিকেন’স নেক। পূর্বে নেপাল, পশ্চিমে বাংলাদেশ। মাঝখানে খুব সঙ্কীর্ণ একটি অংশ ভারতের নিয়ন্ত্রণে। ম্যাপে সঙ্কীর্ণ অংশ মুরগির ঘাড়ের মতো দেখতে হওয়ায় সেটাকে হলা হয় চিকেন’স নেক। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের যোগসূত্র ওই ভূখন্ড। শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া এলাকা নামে পরিচিত। গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টারর্সে যাতায়াতে এই চিকেন ম্যাপ শিলিগুড়ির গুরুত্ব যেমন অপরিসীম; তেমিন এ করিডোরের আন্তর্জাতিক গুরুত্বও যথেষ্ট। নেপাল এবং ভুটানও বিশ্বের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত থাকতে এই করিডোর ব্যবহার করে। ভারতের দুই অংশের মধ্যে সড়ক ও রেল যোগযোগ বজায় রাখা, উত্তর-পূর্ব ও অবশিষ্ট ভারতের মধ্যে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে কাজ করা এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ভারতের নিত্য যোগাযোগে এই চিকেন’স নেক ব্যবহার হয়। ভুটান-নেপালে যেভাবে চীনের বিনিয়োগে উন্নয়ন কর্মকান্ড হচ্ছে তাতে দুই দেশে চীনের আধিপত্য ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ভুটান বা নেপালের সাধারণ মানুষের ভারতবিরোধী মনোভাব এবং চীনের বিনিয়োগে অর্থনৈতিক উন্নতিতে চীনের সামরিক শক্তির উপস্থিতি দুই দেশের নাগরিকরা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে না। অর্থনৈতিক শক্তিতে ভারতের চেয়ে চীন ৫ গুণ বড়। সামরিক শক্তিতেও ভারতের চেয়ে চীনের অবস্থান অনেক ওপরে। এ অবস্থায় ভারত বেশি কিছু করতে চাইলে চীনের সামরিক উপস্থিতির কারণেই চিকেন’স নেক থেকে ভারতের ভূখন্ডের বিশাল এলাকা হাতছাড়া হয়ে যাবে। কাশ্মিরের স্বাধীনতা আন্দোলন ইস্যু তো রয়েছেই। খোদ আমেরিকা পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মির সমস্যা সমাধানের কথা বলছে। কাজেই ভবিষ্যতে ভারতের অবস্থা কেমন হবে সহজেই অনুমেয়।
চীনের আয়তন ৩৭ লাখ ৪ হাজার ৪২৭ বর্গমাইল। জনসংখ্যা ১৩৫ কোটি। দেশটির উত্তরে মঙ্গোলিয়া, উত্তর-পূর্বে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া, পূর্বে চীন সাগর, দক্ষিণে ভিয়েতনাম, লাওস, মিয়ানমার, ভারত, ভুটান, নেপাল, দক্ষিণ-পশ্চিমে পাকিস্তান, পশ্চিমে আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান ও কাজাকিস্তান। চীনের পূর্বে পীত সাগরের পাশে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। শিল্পে ব্যাপক অগ্রগতির পাশাপাশি দেশটি প্রতিরক্ষা শিল্পেও প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন চমক প্রদর্শন করছে। এক সময় আমেরিকার অহঙ্কার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ছিল শত্রুপক্ষের জন্য চরম আতঙ্ক। কিন্তু চীন আমেরিকার এ-১৬, বি স্টিলথ বোমারু বিমান, গোয়েন্দা বিমান কিংবা মহাশূন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পেছনে ফেলে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ১০ বছর আগেই আমেরিকা উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম অর্জন করেছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনকে দাবিয়ে রাখা কঠিন। কারণ দ্রুত উৎপাদন ও পণ্যমূল্য। এক সময় বিশ্বের দেশে দেশে পণ্যসামগ্রী রফতানির শীর্ষে ছিল জার্মানি। দ্বিতীয় জাপান ও তৃতীয় ছিল আমেরিকা। কিন্তু ২০১৪ সালে জার্মানিকে পেছনে ফেলে চীন রফতানির শীর্ষে চলে যায়। মানুষের প্রয়োজনের সবগুলো পণ্য উৎপাদন করছে চীন। ইউরোপের কোনো দেশ একটি পণ্য উৎপাদনের পর বাজারজাত করা হলো। এর কয়েক দিনের মধ্যে চীন ওই পণ্য তৈরি করে আরো কম মূল্যে বাজারজাত করবে। ফলে অধিক সস্তায় ক্রেতারা চীনা পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। এ কারণে শত্রু দেশও নিজ দেশে চীনা পণ্যের আগমন ঠেকাতে পারছে না। দ্রুত শিল্পায়নের মাধ্যমে চীন অর্থনীতিতে শীর্ষে অবস্থান করছে। বাংলাদেশে যে বিদেশী বিনিয়োগ তার শীর্ষে রয়েছে চীন। দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ যখন চীনের বিনিয়োগে প্রাধান্য দিচ্ছে; অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে; তখন আমরা কেন সে সুযোগ হাতছাড়া করছি সেটাই বড় প্রশ্ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।