Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিজিএমইএ বন্দরের অদক্ষ কর্মকর্তাদের অপসারণ চায়

| প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : চট্টগ্রাম বন্দরের অব্যবস্থাপনা তুলে ধরে এর সঙ্গে জড়িতদের সরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে এত কঠিন সংকটে এ শিল্প আগে আর পড়েনি। পোশাক তৈরির উপকরণ বোঝাই জাহাজকে পণ্য খালাসের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পণ্য খালাস করতে না পারায় কন্টেইনার ভাড়া বাবদ বন্দর ও জাহাজ কোম্পানিতে অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হচ্ছে। সোমবার রাজধানীর বিজিএমইএ ভবনে ‘চট্টগ্রাম বন্দরে পোশাক শিল্পের আমদানিকৃত মালামাল খালাস ও রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণে জটিলতা এবং পোশাক শিল্পখাতের সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ক’ সংবাদ সম্মেলনে সিদ্দিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা কি এ সমস্যা সমাধান করবো না ব্যবসা করবো। আমদের কাজতো সমস্যাগুলো খোঁজা নয়, আমাদের কাজ পণ্য রপ্তানি করা। পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কাজ করা। কিন্তু অবকাঠামো দেখার যাদের কাজ তারা কী করছে। তারা কি এসব দেখে না। আমাদের করের টাকায় তাদের (সরকারি কর্মচারীদের) বেতন দেয়া হয়। আমরা সমস্যায় থাকবো আর তারা বেশি বেশি বেতন পেয়ে আয়েশে থাকবে তা আর হতে দেয়া হবে না। তারা কাজ না করলে তাদের সরিয়ে দেয়া হোক। অদক্ষ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয়া হোক। আমরা ব্যবসা করতে চাই। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়ন না হলে আমরা ব্যবসা করতে পারবো না।
সিদ্দিকুর বলেন, অযোগ্যদের সরিয়ে যারা কাজ করতে চায় তাদেরকে এসব জায়গার বসান। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সাংবাদিকদেরর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, আমাদের যেখানে সমস্যা হচ্ছে তার কথা বলেছি আমরা। অদক্ষ কর্মকর্তা বলতে সেই এলাকার কর্মকর্তাকে বুঝিয়েছি।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কি-গ্যান্ট্রি ক্রেন আমাদের প্রয়োজন ২৬টি, চট্টগ্রাম বন্দরে আছে চারটি, এরমধ্যে দুইটিই বন্ধ। রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন বন্দরে প্রয়োজন ৫২টি, আছে ২৩টি; এম্পটি হ্যান্ডলার ৩৯টি প্রয়োজন, আছে ১৯টি, ট্রাক্টর ট্রেইলর ১৩০টি প্রয়োজন, আছে ৪৩টি। এগুলো সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সিদ্দিকুর রহমান।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমেছে জানিয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দেশীয় পোশাক শিল্পকে নিয়ে দেশে বিদেশে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নেতিবাচক প্রচারণার ফলে শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং এই শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই দেশের ৪৪ লাখ শ্রমিকের কথা চিন্তা করে এসব অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
বর্তমানে শিল্পায়ন ও বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধিতে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যা বলে উল্লেখ করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিভিন্ন জটিলতায় আমরা সময়মত অর্ডার ডেলিভারি দিতে পারছি না। ফলে অন্য দেশগুলো আমাদের অর্ডারগুলো নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে পোশাক শিল্পের সংকটময়কাল উল্লেখ করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাদের বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যদের আগামী দুই বছর পাঁচ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়া হোক। সরকারের কাছে আমরা আবারো এ দাবি জানাচ্ছি।
চট্টগ্রাম বন্দরের সমস্যা সমাধানে বিজিএমইএ’র প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে- চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) বার্থে বিকল দুটি গ্যাংট্রি ক্রেন দ্রুত মেরামত করে কার্যক্রম শুরু করা; কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি জরুরিভাবে সরকারিভাবে কেনার ব্যবস্থা করা, তা না হলে দ্রæত বেসরকারি খাত থেকে হলেও ভাড়া নিয়ে বর্তমান সংকট মোকাবেলা করা; বন্দরের চলমান প্রবৃদ্ধিকে সামনে রেখে সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কন্টেইনার ইয়ার্ড স¤প্রসারণে জরুরি ভিত্তিতে ২৬ একর পশ্চাৎ সুবিধাদিসহ পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু করা; পোশাক শিল্পের কাঁচামালবাহী কন্টেইনারসমূহ শুল্কায়নসহ একই কর্মদিবসে ডেলিভারির ব্যবস্থা করা; কন্টেইনারবাহী জাহাজসমূহকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বার্থিংয়ের সুযোগ দেয়া; চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে আরও অধিকসংখ্যক শেড নির্মাণ করা ইত্যাদি
লিখিত বক্তব্যে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, যদিও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজজট কমানোর লক্ষ্যে গিয়ারলেস ভেসেল আসা নিরুৎসাহিত করেছে; নাইট নেভিগেশন চালু করেছে; শিফটিং করে সার্বক্ষণিক হ্যান্ডলিং কার্যক্রম চালু রাখাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তারপরও পণ্য খালাস সংকটের সমাধান হয়নি। যেসব জাহাজে ১৫০ থেকে ২০০ এলসিএল কন্টেইনার বেশি থাকে, তা আনস্টাফিং করে খালাস দিতে এখনো ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে। এর মধ্যে ভ্যাসেল বার্থিং-এ ৭-৮ দিন বিলম্ব ও পণ্য খালাসে ৮-১০ দিন বিলম্ব হচ্ছে। আমদানি করা কাঁচামাল পেতে বিলম্ব হওয়ায় আমাদের উৎপাদনে যেতেও দেরি হয়।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, পরিচালক (অর্থ) মো. নাসির প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিজিএমইএ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ