Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেই কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ প্রধান আসামি জামিনে

কুবি ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল্লাহ হত্যাকান্ডের ১ বছর

| প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কুবি সংবাদদাতা : কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় বিপনন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং কাজী নজরুল হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকান্ডের একবছর । এক বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। হত্যা মামলার প্রধান আসামী বিপ্লব চন্দ্র দাস ও জামিনে রয়েছেন। এ নিয়ে বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, গেল বছরের শোকবহ আগষ্টের প্রথম প্রহরে (১ আগস্ট মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের পর আধিপত্য বিস্তার ও হল দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে সংঘর্ষ হয়। এতে কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিপনন বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। হত্যাকান্ডের ২ মাস ২৬ দিন পর গত ২৬ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। টেন্ডারবাজি, ক্যাম্পাসে অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অনেক দিন ধরে চলে আসা দ্ব›েদ্বর কারনে সংঘর্ষের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে প্রতিবেদনে এমন উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও তৎকালীন প্রক্টর মো: আইনুল হক বলেন, আমরা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কেন দোষীদের শাস্তি দিচ্ছে না তা বোধগম্য নয়।’ এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এখন পর্যন্ত কাউকে শাস্তির অওতায় না আনায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাইফুল্লাহ হত্যার বিচারে টালবাহানা করছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তুত ২০ জন শিক্ষকদের সাথে কথা বললে তারা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। খালিদ সাইফুল্লাহ নিহতের জেরে দীর্ঘ ৫৬ দিনের অনিদিষ্টকালের বন্ধের পর ৩০ আগষ্টে অনুষ্ঠিত ৬৩ তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকল ধরনের সভা-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞার শর্তে ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি মানছে না খোদ প্রশাসনই। নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের মিছিল, সভা, সমাবেশ-সম্মেলন চলছে ক্যাম্পাসে। এ সব অনুষ্ঠানে আবার খোদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা অতিথি হচ্ছেন। ২৭ জানুয়ারি নবীন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করে ছাত্রলীগ। এ পর্যন্ত বিভিন্ন কলাকৌশলে নিষেধাজ্ঞার ভিতরে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের মিছিল, সমাবেশের বিষয়টি প্রশাসন এড়িয়ে গেলেও ১৩ মে ছাত্রলীগের সম্মেলনে অতিথি হন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আলী আশরাফ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সিন্ডিকেটের সভাপতি হয়েও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখাননি স্বয়ং প্রতিষ্ঠান প্রধান। সর্বশেষ গত ২৩ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে হল শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধক্ষ্য দুলাল চন্দ্র নন্দী। খোদ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের সদস্যরা।
এ দিকে খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যাকান্ডের আগে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মধ্যে বেশ কয়েক বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সংবাদকর্মীরা বড় ধরনে সংঘর্ষের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেন। কিন্তু তখন আশঙ্কা রোধে প্রশাসন কোন কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
সন্তান হত্যার বিচার না হওয়ায়খালিদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে ছেলের লাশ উপহার দিয়েছে। আমি ছেলে হত্যার বিচারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পায়ে পায়ে ঘুরেও বিচার পাইনি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আলী আশরাফ বলেন, ‘ তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছেন তা বিশ^বিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টার কাছে পর্যালোচনার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে, তিনি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী সিন্ডিকেটে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ