Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সতর্কে দায়মুক্তি এবি ব্যাংককে!

অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে টাকা পাচার

| প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ব্যবস্থাপনা পরিষদকে সতর্ক করে দেয়ার মাধ্যমে অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে চার বিদেশি কোম্পানির নামে প্রায় সাড়ে ৩ শ’ কোটি টাকা বের করে বিদেশে পাচার করে দেয়ার ঘটনায় আরব-বাংলাদেশ (এবি) ব্যাংককে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। অর্থ স্থানান্তরের অনিয়মের দায়ে ব্যাংকটিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সতর্ক করে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে যে কোনো ঋণ মঞ্জুরির ক্ষেত্রে ঋণ প্রস্তাব পর্যালোচনা, পর্যাপ্ত জামানত সংরক্ষণ ও ঋণ বিতরণ পরবর্তী মনিটরিংয়ে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। কমিটি এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বিদেশে স্থানান্তরিত এই বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। পাশপাশি তদন্ত কমিটির কাজের অগ্রগতি অতিদ্রæত কমিটিকে অবহিত করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করা অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. রিজওয়ানুল হুদা স্বাক্ষরিত উপস্থাপিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিপুল পরিমাণ এই অর্থ পাচার হয়েছে সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। যে চার বিদেশি কোম্পানির নামে টাকা নেয়া হয়েছে সেগুলো হলোÑ সংযুক্ত আরব আমিরাতের গেøাবাল এমই জেনারেল ট্রেডিং ও সেমাট সিটি জেনারেল ট্রেডিং, সিঙ্গাপুরের এটিজেড কমিউনিকেশনস পিটিই লিমিটেড ও ইউরোকারস হোল্ডিংস পিটিই লিমিটেড। এসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশে ব্যবসা এবং ‘শিল্পকারখানা’ করার জন্য এ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ঋণ দেয়ার জন্য যে ধরনের বিচার বিশ্লেষণ ও নিয়ম আছে, তা মানা হয়নি। এ ছাড়া যে উদ্দেশ্যে ঋণ নেয়া হয়েছে, সেই উদ্দেশ্যের ছিটেফোটাও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ঋণগুলোর প্রস্তাবের যথাযথ বিচার বিশ্লেষণ না করা, ইক্যুইটির তুলনায় বেশি পরিমাণ ঋণ মঞ্জুরি, অপর্যাপ্ত জামানত, ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বের বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির অনুক‚লে স্থানান্তর হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে দলের নিকট প্রতীয়মান হয়।
কমিটি সূত্রে জানা গেছে, টাকার অঙ্কে দেশে ব্যাংক খাতে এর আগে আরো বড় ধরনের জালিয়াতি হলেও অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে এটাই বড় ঘটনা। অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের অভ্যন্তরে পৃথক ব্যাংকিং। বিদেশি কোম্পানিকে ঋণ প্রদান ও বিদেশি উৎস থেকে আমানত সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে অফশোর ব্যাংকিংয়ে। স্থানীয় মুদ্রার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব হয় অফশোর ব্যাংকিংয়ে। ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতিমালা অফশোর ব্যাংকিংয়ে প্রয়োগ হয় না। কেবল মুনাফা ও লোকসানের হিসাব যোগ হয় ব্যাংকের মূল হিসাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহজেই ঋণ দেয়া হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণ নিচ্ছে তাদের অস্তিত্ব আছে কি না, তা দেখার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে বাংলাদেশিরাই কাগুজে কোম্পানি তৈরি করে ঋণ সুবিধা নিচ্ছেন। অর্থ লোপাটের নতুন পন্থা হিসেবে অফশোর ব্যাংকিংকে বেছে নেয়া হচ্ছে। এদিকে গতকালের বৈঠকে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন স্থগিতের ফলে উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে বাজেট বাস্তবায়ন বিশেষভাবে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে অর্থায়নের কৌশল ও চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়। কমিটি নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না হওয়ার কারণে যে রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হবে তা পূরণের উদ্দেশ্যে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি এবং বকেয়া আদায়ের মাধ্যমে তা পূরণ করার সুপারিশ করে। কমিটির সভাপতি ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কমিটির সদস্য মো. আব্দুল ওয়াদুদ, নাজমুল হাসান, ফরহাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, মো. শওকত চৌধুরী এবং আখতার জাহান। এ ছাড়া অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়াম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ