Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উঠতি আউশ ছাড়াও রোপা ও আমন বীজতলা

শ্রাবণের অঝোর ধারায় ঝুঁকিতে দক্ষিণাঞ্চলের

| প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : শ্রাবণের ভড়া বর্ষার প্রথম পনের দিনে দক্ষিনাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী বৃষ্টিপাতে উঠতি আউশ ধান যথেষ্ঠ ঝুকিতে। রোপা আমন ও বীজতলা নিয়েও কৃষকের উদ্বেগের শেষ নেই। সারা দেশের ২০ভাগেরও বেশী আউশের আবাদ ও উৎপাদন হয় দক্ষিণাঞ্চলে। ফলে দেশের তৃতীয় বৃহত্বম এ দানাদার খাদ্য ফসল নিয়ে উৎকন্ঠা রয়েছে কৃষি স¤প্রসারন অধিদফ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলেও। তবে গত দুদিন বরিশাল অঞ্চলে তেমন বৃষ্টিপাত না হলেও পরবর্তি ৪৮ঘন্টায় এর প্রবনতা বৃদ্ধির খবর দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। চলতি বছর দক্ষিণাঞ্চল যুড়েই পরিবেশের বিচিত্র আচরনে সুস্থ্য জনজীবনে নানামুখি বিরুপ প্রভাব পড়ছে। কোন কোন মাসে বৃষ্টির অভাব, আবার কোন মাসে অতি বর্ষণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে যথেষ্ঠ। এবার বিদায়ী রবি মওশুমে অকাল ও অতি বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজ ও গোল আলুর ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকার। আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘ মেয়াদী বুলেটিনে চলতি জুলাই মাসে বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ৫শ মিলিমিটার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও গতকাল পর্যন্ত ৫৪২মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে গত ২১থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ২৮৬ মিলিমিটার। আর মাসের প্রথম কুড়ি দিনে বৃষ্টি ছিল ১৬০মিলিমিটারেরও কম। গত জুন মাসেও বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫১২মিলিমিটার। অতিবর্ষনের কারণে এখন দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে থাকা প্রায় ২লাখ ১০হাজার হেক্টর আউশ ধান নিয়ে যথেষ্ঠ শংকায় রয়েছেন কৃষকগন। এসব আউশ ধানের বেশীরভাগেই এখন ফুল অথবা থোর এসেছে। ডিএই’র তরফ থেকে প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বøক পর্যায়ের কর্মীদের আউশ ও আমনের প্রতি নিবিড় নজরদারী করতে বলা হয়েছে। চলতি মওশুমে লক্ষমাত্রা অতিক্রম করে যে প্রায় ২.১০লাখ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছে, সব কিছু ঠিক থাকলে তা থেকে অন্তত সাড়ে ৬ লাখ টন চাল পাবার কথা। সারা দেশে আবাদকৃত আউশের ২০ভাগই এবার দক্ষিণাঞ্চলে। অপরদিকে চলতি খরিপ-২ মওশুমে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রায় ৭লাখ ৪০হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের মাধ্যমে প্রায় পৌনে ১৬লাখ টন চাল পাবার লক্ষ স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কিন্তু গত দুমাসের অতি বর্ষনের সাথে উত্তরাঞ্চলের বণ্যার পানি দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলো সাগরে বয়ে নিয়ে যাওয়ায় দুকুল ছাপিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আমন বীজতলার যথেষ্ঠ ক্ষতির শংকা রয়েছে। ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলের মতে, পুরো আগষ্ট মাসটিই দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসলের জন্য যথেষ্ঠ ঝুকিপূর্ণ। এসময়ে শ্রাবণের পূর্ণিমা ছাড়াও ভাদ্রের অমাবশ্যার ভড়া কোটাল মাঠে থাকা ফষলের যথেষ্ঠ ঝুকির সৃষ্টি করতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, দক্ষিণাঞ্চলে গত মার্চ ও এপ্রিলে স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১৫২% ও ১৬০%-এর মত বেশী বৃষ্টি হলেও মে মাসে তা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৫.৯% কম । আবার জুন মাসে বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫ভাগ বেশী। এসময় বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক ৪৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কথা জানান হলেও পূর্বাভাষ দেয়া হলেও তা অতিক্রম করে। চলতি জুলাই মাসেও বরিশাল অঞ্চলে ৫১৯মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কথা থাকলেও ২৯দিনে বৃষ্টি হয়েছে ৫৪২মিলিমিটার।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, মওশুমী বায়ুর অক্ষ ভারতের রাজস্থান,উত্তর প্রদেশ, বিহার পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ হয়ে ভারতের আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মওশুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে দূর্বল থেকে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে। বরিশাল ও খুলনা সহ উপক’লীয় এলাকায় মাঝারী বৃষ্টিপাতের সম্ভবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। আগামী ৪৮ঘন্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবনতা বৃদ্ধির কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ