পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1720210836](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ধর্ষক শ্রমিকলীগ নেতসহ গ্রেফতার তিন
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়ায় উন্নত জীবনের স্বপ্ন ও ভাল কলেজে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক অনিন্দ সুন্দরী তরুণীকে ধর্ষণ করেছে তুফান সরকার ( ২৮) নামে হঠাৎ কোটিপতি বনে যাওয়া এক শ্রমিক লীগ নেতা। এই ঘটনার ১০ দিন পর অভিযুক্ত তুফান সরকারের স্ত্রী আশা ও তার বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকির নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী গত শুক্রবার দুপুরে সোনালী আক্তার নামের ওই তরুণী এবং তার মা মুন্নী বেগমকে তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে চকসুত্রাপুর এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকির বাড়িতে মা ও মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে বেধড়ক পেটানো হয়। পরে নাপিত ডেকে এনে ওই দু’জনের মাথার চুল কেটে দিয়েছে।
শুক্রবার রাতে খবর পেয়ে ঘটনায় জড়িত উঠতি কোটিপতি ও শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার (২৮) এবং তার ৩ সহযোগীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে অভিযুক্ত শ্রমিক লীগ নেতা তুফানের স্ত্রী আশা এবং ও বড় বোন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ অন্যরা পালিয়ে গেছে।
এর আগেই পুলিশের সহযোগিতায় রাত পৌণে ১০টার দিকে ধর্ষিতা তরুণী এবং তার মা মুন্নী বেগমকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। শজিমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আব্দুল মান্নান জানান, কিশোরীর তার হাত-পা এবং উরুসহ শরীরের অন্তত ৬টি স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘তার শারীরীক আঘাত ততটা গুরুতর নয় তবে সে মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত।’
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় ধর্ষিতা কিশোরীর মা মুন্নী বেগম বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় নারী নির্যাতন ও অপহরণের অভিযোগে পৃথক ধারায় দুইটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দুইটিতে মোট ১০ জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলার এজাহারে শ্রমিক লীগ নেতা তুফানের গাড়ি চালক জিতু, তার সহযোগী মুন্না ও শ্বাশুড়ি রুমি খাতুনের নামও রয়েছে।
শজিমেক হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন ধর্ষিতা সোনালী জানায়, প্রায় দুই মাস আগে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তার সঙ্গে শ্রমিক লীগ নেতা তুফানের পরিচয় হয়। এসএসসিতে পাশ করলেও জিপিএ-৫ না পাওয়ায় সে ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারছিল না। বিষয়টি জানার পর তুফান তাকে ভালো কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি তাকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখায়। এরপর গত ১৭ জুলাই সকালে তুফান তাকে ফোন করে এবং কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষরের জন্য শহরের চকসুত্রাপারে তার বাড়িতে যেতে বলে। সে তুফানের বাড়ি যেতে রাজি হয়নি। পরে অবশ্য তার চাপাচাপিতে সে রাজি হয়। তখন তুফান তাকে আনার জন্য গাড়ি পাঠাতে চাইলে সে কাছাকাছি দূরত্ব হওয়ায় পায়ে হেঁটে তার বাড়িতে যেতে চায়। তবে তুফান তাতে রাজি না হয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দেয়। সোনালী অভিযোগ করে, গাড়িতে করে তুফানের বাড়িতে যাওয়ার পর তুফান ছাড়া বাড়িতে সে আর কাউকে দেখতে পায়নি। এরপর ঘরের ভেতর নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে তুফান তাকে ধর্ষণ করে। এতে রক্তপাত হলে তুফান তার সহযোগী আতিককে খবর দিলে সে ওষুধ এনে খাইয়ে দেয়। এরপর সে বাড়ি চলে যায়। তুফান অর্থশালী ও রাজনৈতিকভাবে খুব প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে ধর্ষণের বিষয়টি ওই কিশোরী চেপে যায় এমনকি তার মাকেও বলার সাহস পায়নি।
পুলিশের গণমাধ্যম শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত তুফান সরকার ওই কিশোরীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। থানা হাজতে আটক আতিক নামে তার সহযোগী সাংবাদিকদের জানিয়েছে ওই কিশোরী যাতে গর্ভবতী হয় সেজন্য ধর্ষণের আগে তাকে গর্ভনিরোধক ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল।
ধর্ষিতা তরুণী তাকে ও তার মাকে নির্যাতনকারী সকলের বিচার দাবি করে বলে, ‘তুফান আমাকে ধর্ষণ করেছে কিন্তু এ কথা কাউকে বলার সাহস পাইনি। এমনকি মাকেও বলতে পারিনি। কারণ সে খুবই প্রভাবশালী। ওই ঘটনার কয়েকদিন পর তুফনের স্ত্রী ও তার বড় বোনসহ সন্ত্রাসীরা আমাকে আর মাকে মারলো, চুল কেটে দিলো ন্যাড়া করে দিল;এখন সমাজে আমরা কিভাবে মুখ দেখাব?’
বগুড়া সদর থানার ওসি এমমাদ হোসেন জানান, এজাহারে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে সোনালীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। অন্য আসামীদের বিরুদ্ধে ওই কিশোরী এবং তার মাকে (মামলার বাদী) অপহরণ, মারপিট ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
এদিকে তুফান সরকারের সম্পর্কে জানা যায়, তুফান সরকারের পরিবারের একাধিক সদস্য মাদক ব্যবসা , চাঁদাবাজী, জমি দখল, দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা কামাই করে বগুড়ার অঘোষিত জমিদারী কায়েম করেছে। এক তুফান সরকারই বগুড়ার অটোরিক্সা থেকে দিনে ৩ লক্ষাধিক টাকা আয় করে থাকে । এর সিংহ ভাগ টাকাই প্রশাসন, পুলিশ, সাংবাদিকদের মধ্যে তাদের যারা অনুগ্রহ ভাজন তাদের বিতরণ করে বিধায় এক রকম বিনা বাধায় তাদের সব অপকর্ম চালিয়ে গেছে দিনের পর দিন। তাই এই তরুণী ধর্ষণের ঘটনাটাও হয়তো ইতোপুর্বে তাদের দ্বারা সংঘঠিত অপরাধের মতোই ধামাচাপা পড়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে । চাঁদাবাজী ও দখলবাজী ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে হঠাৎ কোটিপতি এই তুফান সরকার জাতীয় শ্রমিক লীগ বগুড়া শহর শাখার আহবায়ক। সে বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর কসাইপাড়া এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে। তুফানের সাথে গ্রেফতার হওয়া তার সহযোগীরা হল চকসুত্রাপুর এলাকার দুলু আকন্দের ছেলে আলী আজম দিপু (২২) , শহরের কালিতলা এলাকার জহুরুল হকের ছেলে রুপম ( ২২) ও খান্দার সোনারপাড়ার মোখলেছার রহমানের ছেলে আতিক (২৩)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।