রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লার বেশিরভাগ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর ধারণা উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কলেজগুলোতে মেধাবী ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলির তত্ত¡াবধানে উন্নত মানসম্মত শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডের ফল বিপর্যয় সেই ধারণাকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। কুমিল্লার সরকারি কলেজগুলোর তুলনায় শহর এবং গ্রাম পর্যায়ের বেসরকারি কলেজগুলো কম সুযোগ সুবিধা নিয়ে এবারে অনেকটা ভালো ফল করেছে। আর সরকারি দশটি কলেজের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ের সাতটিতে এবারের এইচএসসিতে ফলাফলের আশঙ্কাজনক ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে। কুমিল্লার প্রবীণ শিক্ষাবিদরা মনে করছেন কুমিল্লার নতুন-পুরনো সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষার মানের মারাত্মক অবনতি দেখা দিয়েছে। কেননা সরকারি কলেজগুলোতে মূলত মেধাবীরাই ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষায় ফেলের সংখ্যা বেড়ে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে কলেজের শিক্ষার মান নিয়ে সব মহলে প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক।
কুমিল্লায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে ধারণা উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কলেজের সার্বিক শিক্ষার উন্নত হয়ে উঠেছে। আর প্রত্যাশা ছিল এবারের এইচএসসির ফলাফল শহরের সরকারি কলেজগুলোর সমপর্যায়ে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু সেই প্রত্যাশায় উপজেলা পর্যায়ে সাতটি সরকারি কলেজে আশার আলো জ্বলে উঠেনি। পাশাপাশি কুমিল্লা শহরের তিনটি সরকারি কলেজও প্রত্যাশিত পাসের হারের জায়গায় নিজেদের স্থান করে নিতে পারেনি। কুমিল্লার দশটি সরকারি কলেজের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ের সাতটির ফলাফল বোর্ডের শতকরা পাসের হারের চেয়ে কম। কুমিল্লার সরকারি কলেজগুলোতে যোগ্যতাসম্পন্ন, বিসিএসধারি, অভিজ্ঞ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক থাকা সত্তে¡ও এবারের এইচএসসির ফলাফল সন্তোষজনক হয়নি। কুমিল্লার সরকারি কলেজগুলোর মধ্যে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে বোর্ডের ফল বিপর্যয়ের তুলনায় ভালো করলেও কলেজের ঐতিহ্যগত দিক থেকে এবারে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জিত হয়নি। শহরের বাকি দুইটি সরকারি কলেজের ফলাফল গত ৪/৫ বছল ধরে উঠানামার মধ্যেই রয়েছে।
কুমিল্লা বোর্ডে এবারের এইচএসসিতে বিপর্যস্ত ফলাফলের মধ্যে কুমিল্লার দশটি সরকারি কলেজের ফলাফল ছিল আশঙ্কাজনকভাবে খারাপ। এ দশটি সরকারি কলেজের ফলাফল চিত্রে দেখা যায়- উপজেলা পর্যায়ে বরুড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা, মানবিক ও বিজ্ঞানের ৬২১ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২২৮জন পাস করেছে। ফেল করেছে ৩৯৩জন। পাসের হার ৩৬ শতাংশ। চৌদ্দগ্রামের চিওড়া সরকারি কলেজের ২২৭ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছে ২০৬জন। পাসের হার ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজে ফেল করেছে ৬২৪জন ও পাস করেছে ২২৭জন। পাসের হার ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। দাউদকান্দির গৌরিপুর মুন্সি ফজলুর রহমান কলেজের ৪৫৭ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছে ৩৪৬জন। পাসের হার ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। দাউদকান্দির হাসানপুর সরকারি কলেজে ৩৫৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩০২জন ফেল করেছে। পাসের হার ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। দেবিদ্বারের সুজাত আলী সরকারি কলেজের ৫৭৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছে ৪৩৬জন। পাসের হার ২৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। লাকসামের নবাব ফয়েজুন্নেসা সরকারি কলেজের ৯৮২ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছে ৪৭৩জন। পাসের হার ৫১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। কুমিল্লা শহরের তিনটি কলেজের মধ্যে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের ১৫৬৩জন ছাত্রীর মধ্যে ফেল করেছে ৬৬৯জন। পাসের হার ৫৭ দশমিক ২০ শতাংশ। কুমিল্লা সরকারি কলেজে ১১৭২জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছে ৪০৬জন। পাসের হার ৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ১২৮৯জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছে ১৮৮জন। পাসের হার ৮৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।
কুমিল্লা বোর্ডের ফল বিপর্যয় কেন্দ্র করে গত ৪/৫দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কলেজের লেখাপড়ার গুণগত মান, শিক্ষকের যোগ্যতা ও বোর্ড কর্তৃপক্ষকে নিয়ে নানা ধরণের মন্তব্য চলছে। কুমিল্লার প্রবীণ শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, ফল বিপর্যয় নিয়ে পরষ্পর দোষারোপের জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে কারণ অনুসন্ধান করে আগামীর ভালোর জন্য প্রস্তুতির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি এখন থেকেই সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষার পরিবেশ, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, ক্লাশরুমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতির বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে রাখতে হবে। আর উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কলেজগুলোতে মেধাবী ও মানসম্পন্ন শিক্ষক পদায়নের বিষয়টি জোরালো করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।