রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
মাগুরা থেকে সাইদুর রহমান: মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরে মধুমতি নদীর উপর শেখ হাসিনা সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেতুটি চালু হলে মাগুরাসহ ফরিদপুর জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়নে নবদিগন্তের সূচনা হবে। সেই সাথে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দারি পূরণ হবে।
এলজিইডির কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের জুন মাসে জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসনকে পরিশোধ করা হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের চেক দিতে শুরু করেছেন বলে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান।
সেতুর পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দা ইমারত মোল্যা ও কাইয়ুম শেখ জানান,‘এলাকা উন্নয়নে একটা ভালো কাজ হচ্ছে সে জন্য তারা ত্যাগ শিকার করতে প্রস্তুত কিন্তু অন্যত্র জমি কিনে ঘর তুলে বসতি স্থাপন করতে সময় টাকা দুটোই দরকার।
মহম্মদপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৭ নভেম্বর উপজেলা সদরের জাঙ্গালিয়ার মধুমতি নদীর বাঁশতলা খেয়াঘাট এলাকায় ৬০০ দশমিক ৭০ মিটার পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-রেনকিন কে কার্যাদেশ দেয়া হয়।
২০১৫ সালের ফেব্রæয়ারিতে মাটি পরীক্ষা ও মার্চ মাসে সেতুর মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৫৯ কোটি ৯০ লাখ ৩৪ হাজার ৭০৫ টাকা ২৫ পয়সা ব্যয়ে ১৮ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে ইতোমধ্যে সেতুর ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। রাত-দিন চলছে কাজ চলছে। চলতি বছরের আগস্টেই শেষ হতে পারে নির্মাণ কাজ।
নদীর মধ্যে মূল সেতু বাদে দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে এলজিইডি। সেতুর পশ্চিম পাড়ের ১ হাজার ৬৭৩ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থ সড়কের জন্য ৫০ জন ব্যক্তির ২০১ দশমিক ৬৩৭ শতাংশ এবং পূর্ব পাড়ের সড়কের জন্য ১ হাজার ২৭৯ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থ সংযোগ সড়কের জন্য ১৫ জন ব্যক্তির ২৫২ দশমিক ৫৭৫ শতাংশ জমি অধিগ্রহন করা হয়
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর পশ্চিম পাড়ে অধিগ্রহনকৃত জমির উপর শতাধিক বসত ঘর রয়েছে। এখানে ঝুপড়িঘর থেকে শুরু করে একতলা,দ্বিতল দালান বাড়ি ও মসজিদ রয়েছে।
পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দা সিরু শেখ ও ফুল মিয়াসহ পাঁচজন জানান, উপজেলা পরিষদ থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে হলেও দলিলে উল্লিখিত জমির শ্রেণির কারণে তারা ক্ষতিপূরণ হিসেবে নামমাত্র মূল্য পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেণ। ব্যক্তি মালিকানায় ৭০ থেকে এক লাখ টাকায় বিক্রি হওয়া জমি শতাংশ প্রতি দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। অথচ পূর্ব পাড়ে চরের কৃষি জমি শতাংশ প্রতি দেওয়া হচ্ছে ৫৭ হাজার টাকা বলেও তারা জানান।
অন্যদিকে পশ্চিমপাড়ের বসতি অপসারনের কাজ এখনো শুরু করতে পারেনি এলজিইডি। জমির কাগজপত্রে ত্রæটি থাকায় ক্ষতিপূরনের টাকা পরিশোধ করতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে পরিবারকে সরানোর কাজ শুরু করতে সমস্যা হচ্ছে। এতে পশ্চিম পাড়ের সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে বলে এলজিইিড’র সূত্র জানিয়েছে।
পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দা শেখ ওয়াজেদ আলী, রাশেদ জোয়াদ্দার ও মোসলেম উদ্দিন জানান, ‘পঞ্চাশ জন মালিক হলেও অধিগ্রহণকৃত এসব জমিতে শতাধিক পরিবার পৈত্রিক ভিটায় বাস করছেন। তাদের কারো জমি কারো বসতভিটা ছাড়তে হচ্ছে। ক্ষতিপূরণের অল্প টাকায় উপজেলা শহরে জমি কেনা সম্ভব নয়। এতে অনেক পরিবার বিপদে পড়েছেন। এছাড়া তারা দুই বছরেও ক্ষতিপূরনের টাকা হাতে পাননি।’
পূর্বপাড়ের বাসিন্দা আরিফুজ্জামান আরব বলেন, তাদের পাঁচ ভাইয়ের ১৯ শতক পৈত্রিক ও নিজের ৭ শতক জমি সরকার অধিগ্রহন করলেও কোন টাকা পাননি। মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুই-তিন বার গেলেও বলা হচ্ছে টাকা দেওয়া হবে।’
নদীর পূর্বপাড়ের বাসিন্দা মজিদ শেখ ও শুকুর শেখ জানান, ‘তারাসহ আরও কয়েকজন জমির অধিগ্রহনের ক্ষতিপূরণের টাকার চেক হাতে পেয়েছেন।
মহম্মদপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন,‘গত বছরের জুন মাসে জমি অধিগ্রহনের ক্ষতিপূরণের সমুদয় টাকা জেলা প্রশাসনকে পরিশোধ করা হয়েছে। এই টাকা জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্থদের প্রদান করবে।
এ ব্যাপারে মাগুরার জেলা প্রশাসক মোঃ আতিকুর রহমান জানান, ‘জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের পক্রিয়াটি জটিল। আইন মেনে বেশ কয়েকটি ধাপে কাজ শেষ করতে হয়। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন জমির মালিকদের মধ্যে ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর শুরু করেছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে সবাই টাকা পেয়ে যাবেন।’
উল্লেখ্য, এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন মধুমতি নদীর উপর সেতু চালু হলে মাগুরা-নড়াইলের সাথে প্রতিবেশি ফরিদপুর জেলার মেলবন্ধন তৈরি হবে। তাদের উৎপাদিত পণ্য স্বল্পসময়ে কম খরচে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে পারবে। এছাড়া উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এলাকার লাখ লাখ মানুষের যোগাযগ ও কর্মসংস্থানসহ জীবনমান বৃদ্ধির আশার সঞ্চার হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।