Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দু’দফা বন্যায় কক্সবাজারের গ্রামীণ অবকাঠামো বিপর্যস্ত

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে : দু’দফা বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা কক্সবাজারের গ্রামীণ জনপদ। প্রবল বর্ষণ,পাহাড়ী ঢল ও জোয়ারের পানির সাথে একাকার হয়ে ডুবে গিয়েছিল কক্সবাজার জেলার নিম্নাঞ্চল। বন্যায় ১০ লাখ মত মানুষ পানি বন্দি হয়ে দুর্ভোগের শিকার হয়। বন্যার সময় বানের পানিতে ভেসে গিয়ে, দেয়াল চাপা পড়ে ও পাহাড় ধসে নারী-শিশুসহ প্রাণ হারায় ১৫ জন। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরার’ ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই উপর্যপোরি এই বন্যা যেন কক্সবাজারবাসীর জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখাদেয়।
বিশেষ করে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে চকরিয়া-পেকুয়া এবং বাকঁখালী নদী ও ইদগাঁও নদীর পানিতে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও এবং রামুতে বন্যা সৃষ্টি করে। বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ী ঢলে উখিয়াতে নজিরবিহীন ক্ষতের সৃষ্টি হয়। জোয়ারের পানিতে তলীয়ে যায় কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর মাতারবাড়ি-ধলঘাট এলাকার বেড়িবাঁধ।
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজার জেলাব্যাপী প্রবল বন্যার পর বেড়েছে নদীভাঙন ও পাহাড় ধসের ঝুঁকি। বন্যায় তলীয়ে যায় জেলা সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও রামু উপজেলাসহ নি¤œাঞ্চলের শত শত গ্রাম। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির অভাব ও চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছিল এসব এলাকার পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। এখন বন্যার পানি নেমে গেলেও রেখেগেছে জনপদের অধিবাসীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতচিহ্ন।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টিপাত ও ঢলের পানিতে চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভার বেশির ভাগ নীচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে লোকালয় প্লাবিত করে। এতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার নি¤œাঞ্চলে মানুষের জনদুর্ভোগ বেড়েছে। এসময় বাঙনের কবলে পড়ে মাতামুহুরীতে বিলীন হয়েছে দু’তলা পাকা বাড়িসহ ১৫/২০টি বাড়ি। চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে গোটা উপজেলার রাস্তা-ঘাট।
উজানটিয়া ইউনিয়নের পূর্ব উজানটিয়া গোদারপাড়া ষ্টেশনের অদূরবর্তী স্থানে দুটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। গোদারপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক সংলগ্ন স্থানে মাতামুহুরী নদীর পৃথক বেড়িবাঁধের দু’টি পয়েন্টে ভেঙে যায়। বেড়িবাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে মাতামুহুরী নদীর পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের ঘরবাড়িসহ রাস্তাঘাট, শিক্ষপ্রতিষ্ঠান ,চিংড়ি ঘের ও মৎস্যখামার ও রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় এমপি মৌলবী ইলিয়াছ এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কারে সরকারের প্রয়োজনীয় সহায়তা কামনা করেছেন।
সাগরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের পানি ঢুকে কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী বার বার তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, উত্তর-পূর্ব-পশ্চিম গোমাতলীর বিভিন্ন এলাকার চিংড়ি ঘের, ফসলের ক্ষেত, বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও চলাচলের রাস্তা।
প্রবল বর্ষণে রামু উপজেলায়ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে পানি বাঁকখালী নদীর বিপদ সীমা অতিক্রম করে গত বন্যায় ভেঙে যাওয়া বাঁধের অংশ দিয়ে ঢুকে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে রাজারকুল, ফতেখাঁরকুল, কাওয়ারখোপ ও দক্ষিণমিঠাছড়ি ইউনিয়নের সব নিচু এলাকা পানিতে ডুবে গিয়েছিল বন্যায়। বন্যার সময় এসব এলাকায় জনচলাচলের রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এমপি কমল, সাবেক এমপি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফুর রহমান কাজল ও সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ সহিদুজ্জামান ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন ও ত্রান বিতরণ করে ক্ষতিগ্রহস্থ রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কারের দাবীতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
প্রবল বর্ষণে মহেশখালীতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কাঁচা বাড়ীঘর ও ফসলি জমি। এতে উপজেলার পৌরসভাসহ ৮ ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে গিয়ে খন্ড খন্ড ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। পাহাড়ী ঢলের তোড়ে ছরার বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে ফসলি জমি ও বীজতলার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
একইভাবে বন্যায় ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উখিয়ার গ্রামীন জনপদে। উখিয়া-পাতাবাড়ি-মরিচ্যা সড়কের রেজু খালের ব্রীজের সংযোগে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রত্মা-চাকবৈঠা সড়ক, দিগলিয়া, ডেইলপাড়া সগকসহ গোটা উপজেলার অভ্যন্তরিণ সড়ক যোগাযোগ তচনছ হয়েগেছে।
এইভাবে কুতুবদিয়াতেও জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ তলয়ে গিয়ে ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বীজতলা ও অভ্যন্তরিণ সংযোগ সড়ক নষ্ট হয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে জনগণের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ