Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুচলেকার পরও স্কুল ছাত্রী মেয়েকে বাল্য বিয়ে দিলেন আলোচিত সেই পৌর কাউন্সিলর মহিদুল

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৭, ১:৪৬ এএম


স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া : ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে মুচলেকা দেওয়ার পরও ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়–য়া স্কুল ছাত্রী মেয়েকে বাল্য বিবাহ দিলেন কুষ্টিয়া পৌরসভার আলোচিত সেই কাউন্সিলর মহিদুল ইসলাম। মুচলেকা নিয়ে ম্যাজিষ্ট্রেট বিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর পরই স্থানীয় কাজীকে ডেকে গোপনে মেয়ের বিয়ের কাজ সেরে ফেলেন কাউন্সিলর মহিদুল। পরে রাতে মেয়েকে সাজিয়ে-গুছিয়ে শ্বশুড় বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টায় এ রিপোর্ট যখন লেখা হচ্ছিল বিয়ের কনে মোহনা আক্তার কোহেলী (১২) তখন শ্বশুড় বাড়িতে বাসর ঘরে। জানা গেছে, ছেলের বাড়িতে শনিবার বৌভাত অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। শুক্রবার দুপুরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পন্ড হয়ে যায় কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ডের (জুগিয়া-দর্গাপাড়া) আলোচিত কাউন্সিলর মহিদুল ইসলামের কনিষ্ঠ কন্যা ষষ্ঠ শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী মোহনা আক্তার কোহেলী’র বিয়ে। এ সময় ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে সাদা কাগজে মুচলেকা দিয়ে রক্ষা পান মেয়ের বাবা পৌর কাউন্সিলর মহিদুল ইসলাম। মুচলেকায় মহিদুল উল্লেখ করেন, “আমি মহিদুল ইসলাম এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে, আমার কনিষ্ঠ কন্যা মোছা: মোহনা আক্তারকে পাশ্ববর্তী এলাকার ছেলে পারভেজ উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী হওয়ার কারণে নিজের দীর্ঘ দিনের মান-সম্মান রক্ষার্থে ইসলামী সরা-শরিয়ত মোতাবেক বিবাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। কিন্তু আইনগত বাধ্য বাধকতা থাকায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিবাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম। পরবর্তীতে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।” এলাকাবাসী জানায়, প্রশাসনের লোকজন চলে যাওয়ার পর পরই আপ্যায়ন শেষ করে মহিদুল বরযাত্রীসহ একে একে অতিথিদের বিদায় দিয়ে দেন। এর পর পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দুই পরিবারের কয়েকজনের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়। পাত্রের ছোট চাচা মনিরুল ইসলাম আলোচিত এই বিয়ের বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন।
জানা যায়, কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া দর্গাপাড়া এলাকার বাসিন্দা কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মহিদুল ইসলামের মেয়ে মোহনা আক্তার কোহেলী স্থানীয় আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। তার রোল নং ১০।
শুক্রবার বিয়ের নির্ধারিত দিন ধার্য ছিল। কদিন আগেই বিয়ের কার্ড ছেপে অতিথিদের দাওয়াত দেওয়া হয়। আয়োজনেরও কোন ঘাটতি ছিলনা। বাড়ির উঠানেই সামিয়ানা টাঙিয়ে বিশাল প্যান্ডেল তৈরী করা হয়। অতিথির তালিকায় ছিলেন পৌর মেয়র, চেম্বারের সভাপতি, পৌরসভার কাউন্সিলরসহ শহরের সব গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। বরযাত্রী-অতিথি সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার লোকের আয়োজন। অতিথি আপ্যায়নে ১০টি ছাগল আর তিনটি গরু জবাই করা হয়। পৌরসভার কাউন্সিলরের ছোট মেয়ের বিয়ে বলে কথা! বেশ ধুমধামের সাথে গত কয়েকদিন ধরেই চলছিল বিয়ের নানা আয়োজন। বৃহস্পতিবার ছিল গায়ে হলুদ। শুক্রবার দুপুর ১২ টা থেকেই শুরু হয়ে যায় অতিথি আপ্যায়ন। বরযাত্রীও এসে হাজির হয়। বিয়ে পড়ানোর জন্য স্থানীয় মওলানা সবুর উদ্দিনও এসে পড়েন। নিমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে কাউন্সিলদের সাথে নিয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া চেম্বারের সভাপতি হাজী রবিউল ইসলামসহ ভিআইপি সব অতিথিরাও বিয়ে বাড়িতে এসে হাজির হন। ঠিক সেই মুহূর্তে পুলিশ ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নিয়ে বিয়ে বাড়িতে হাজির হন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাইফুল ইমলাম। শুক্রবার দুপুর তিনটায় ম্যাজিষ্ট্রেট সাইফুল ইমলাম কুষ্টিয়া পৌরসভার সম্প্রসারিত এলাকার ১৫নং ওয়ার্ডের (জুগিয়া) কাউন্সিলর মহিদুল ইসলামের বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে দেখেন অতিথি আপ্যায়ন প্রায় শেষের দিকে। ম্যাজিষ্ট্রেট সাইফুল ইসলাম পৌর কাউন্সিলর মহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চান আপনার মেয়ের বয়স কত? কোন ক্লাসে পড়ে? এ সময় কাউন্সিলর মহিদুল ম্যাজিষ্ট্রেটকে জানান, তার মেয়ে ইন্টার মিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। কিন্তু আগেই খোঁজ নিয়ে ম্যাজিষ্ট্রেট জানতে পেরেছেন কাউন্সিলর মহিদুল ইসলাম তথ্য গোপন করে তার ছোট মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী কোহেলীকে বিয়ে দিচ্ছেন। মোহনা আক্তার কোহেলী স্থানীয় আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর খ শাখার ছাত্রী। তার রোল নং ১০। বর পাশ্ববর্তী জুগিয়া স্কুল পাড়ার নাসির উদ্দিনের ছেলে বালু ব্যবসায়ী পারভেজ আহমেদ। ম্যাজিষ্ট্রেট সাইফুল ইমলাম ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মর্জিনা খাতুন বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে বুঝালে কাউন্সিলর মহিদুল ইসলাম শেষ পর্যন্ত তার ভুল স্বীকার করেন এবং মুচলেকা দেন। মহিদুল মুচলেকায় উল্লেখ করেন, “আমি মহিদুল ইসলাম এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে, আমার কনিষ্ঠ কন্যা মোছা: মোহনা আক্তারকে পাশ্ববর্তী এলাকার ছেলে পারভেজ উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী হওয়ার কারণে নিজের দীর্ঘ দিনের মান-সম্মান রক্ষার্থে ইসলামী সরা-শরিয়ত মোতাবেক বিবাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। কিন্তু আইনগত বাধ্য বাধকতা থাকায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিবাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম। পরবর্তীতে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ