Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে পদক্ষেপ নেই : স্থায়ী হচ্ছে ভবদহ ও কপোতাক্ষের দুঃখ

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : সরকারি অর্থ লোপাটের কারখানা হিসেবে পরিচিত যশোরের দুঃখ ভবদহ এলাকায় পানিবন্দিদের আহাজারি বাড়ছে। ভবদহের কারণে ৩টি উপজেলা কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগরের ১শ’৩০টি গ্রাম সরকারী হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে ভেসে গেছে ৯শ’ হেক্টরের মাছের ঘের। ৭শ’ হেক্টরে সম্পুর্ণ ও ১হাজার ৯শ’হেক্টর জমির ফসল আংশিক নষ্ট হয়েছে। গত একসপ্তাহে ত্রাণ সাহায্য দেওয়া হয়েছে ২৫ মেট্রিক টন চাল। আবহাওয়া দপ্তর সুত্র জানায় গত ১৯ থেকে ২৭জুলাই পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। মোট ৩শ’৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। একদিকে ভারী বর্ষণ অন্যদিকে সময়মতো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না নেয়ায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বশেষ ভবদহের বরাদ্দকৃত ৯৯লাখ টাকার খনন এবং বিল কপালিয়ায় টিআরএম(টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালু করা হলে এবারের বর্ষায় ভবদহের অবস্থা এতটা ভয়াবহ হতো না বলে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ জানিয়েছেন। ভবদহের পাশাপাশি কপোতাক্ষের নদের উপচেপড়া পানি ঢুকেছে ঝিকরগাছার প্রায় ২০টি গ্রামে। কপোতাক্ষ নদ খননেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ভবদহের বুড়িভদ্রা, টেকা, শ্রীনদী এবং কপোতাক্ষের পানি সমুদ্রে গড়িয়ে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হওয়ায় গোটা এলাকা পানিবদ্ধ হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি দুর্ভোগ ও আহাজারি ক্রমেই বাড়ছে। স্থায়ী হচ্ছে ভবদহ ও কপোতাক্ষের দুঃখ। ত্রাণ সাহায্য অপ্রতুল তো আছেই। তাছাড়া পানিবন্দিদের মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে জোরদার পদক্ষেপ নেই। এ অভিযোগ পানিবন্দীদের।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়,ভবদহের লিংক নদী এবং কপোতাক্ষ নদ খনন, ড্রেজিং, টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) এবং ভেড়িবাঁধ নির্মাণসহ পানি নিষ্কাশনের নামে বছরের পর বছর জনদাবির মুখে নেয়া হয় নানামুখী সরকারী প্রকল্প। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুনীতিবাজ কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা শত শত কোটি টাকা লুটপাট করে আসছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, বর্ষা সৌসুমে পানিবদ্ধতার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়ী। প্রায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানিবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় আবাদী ফসল, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদ্র্সাাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। শুধুমাত্র ২০০৬ সালে সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে ভবদহে সুষ্ঠুভাবে ড্রেজিং ও খনন হয়। কিছুদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়। এলাকার কৃষকের মুখে হাসি ফোটে। পানিবন্দিরা পান নিস্কৃতি। সে সময় যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর এবং কেশবপুর উপজেলার ১শ’ ৯২টি গ্রামের মানুষ ছিলেন পানিবন্দী। তার ধারাবাহিকতা রক্ষা না হওয়ায় পানিবদ্ধ হচ্ছে। ভবদহ ও কপোতাক্ষ নদ সমস্যার সমাধান না হওয়ায় বিরাট এলাকার কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ও জীব-বৈচিত্রের পরিবর্তন ঘটছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা জানিয়েছে।
এদিকে, কেশবপুরের ভয়াবহতার কথা জানিয়ে কেশবপুর পসংবাদদাতা জানান, কোথাও দাফনের জায়গাটুকু পাওয়া যাচ্ছে না। মধ্যকুলে দুজনের লাশ দাফন করতে হয়েছে অন্য এলাকায়। ত্রাণ নেই। মাুষের কি যে কষ্ট তা ভাষায় বর্ণনার নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ