Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদুল আযহায়ও মহাসড়কে ভোগান্তির শঙ্কা

মেরামতের নামে সওজের জোড়াতালি মার্কা কাজ : বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে ৪৮ কি.মি. যানজট

| প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : দেশের সড়ক মহাসড়কের বেহাল অবস্থা। এ কারণে গেল ঈদুল ফিতরে ঘরমুখি মানুষদেরকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সামনে ঈদুল আযহা। এবারও ভোগান্তি যে সীমা ছাড়িয়ে যাবে তার আলামত ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। গত দুদিন ধরে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় সিরাজগঞ্জ অংশের খানাখন্দে ভরা মহাসড়কে দীর্ঘ ৪৮ কিলোমিটার জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কজুড়ে এ অবস্থার কারণে আটকে পড়া যানবাহনের যাত্রী ও চালকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা থেকে বগুড়া যেতে এখন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় লাগছে। 

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) সর্বশেষ সমীক্ষাতেও দেশের সড়ক মহাসড়কের বেহাল চিত্র ফুটে উঠেছে। চলতি বছরের শুরুতে করা ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান রয়েছে খানাখন্দ। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-রাজশাহী ও অন্যান্য মহাসড়কের অবস্থাও ভালো নয়। খারাপ অবস্থায় রয়েছে আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়কগুলো। সব মিলিয়ে দেশের ৩৭ শতাংশ সড়ক-মহাসড়ক ভাঙাচোরা। বাকি সড়কের মধ্যে ২৪ শতাংশ মোটামুটি চলনসই। সমীক্ষায় বলা হয়, সড়ক-মহাসড়কগুলোর উন্নয়নে কিছু অংশে হালকা বা ভারী মেরামত প্রয়োজন। বাকি সড়ক পুন:নির্মাণ করতে হবে। এসব সড়ক দ্রæত মেরামত করা না গেলে বর্ষায় জনদুর্ভোগ বাড়বে। সূত্র জানায়, এখন সেই বর্ষা চলছে। বর্ষার আগে মহাসড়কগুলো পুরোপুরি মেরামত করা হয়নি। ঈদুল ফিতরের আগে মেরামতের তোড়জোড়ের আড়াল যা হয়েছে তা অনেকটাই জোড়াতালিমার্কা কাজ। বৃষ্টিতে সেই সব জোড়াতালি আবার ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারদেশে সওজের অধীনে ১৯ হাজার ৩৮৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক-মহাসড়ক রয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ১৬ হাজার ৬২১ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ভালো অবস্থায় আছে ৬ হাজার ৫০৯ কিলোমিটার বা ৩৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। ৩ হাজার ৯০৫ কিলোমিটার বা ২৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ সড়ক-মহাসড়ক মোটামুটি চলনসই। আর ৬ হাজার ২০৭ কিলোমিটার বা ৩৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ সড়কের অবস্থা খারাপ বা খুবই খারাপ। এর মধ্যে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোয় তুলনামূলক ভাঙাচোরা কম। জেলা সড়কগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সমীক্ষায় ভাঙাচোরা সড়ক বর্ষার আগেই মেরামতের সুপারিশ করা হয়েছিল। জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের আগে মহাসড়কের কিছু অংশে মেরামতের নামে জোড়াতালি ছাড়া বর্ষার আগে তেমন কিছুই হয়নি। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে। সেখানে সিরাজগঞ্জ অংশের মহাসড়কে দীর্ঘ ৪৮ কিলোমিটার জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দ ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় রেশনিং করে গাড়ি চলার কারণে গত বুধবার সকাল থেকে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কজুড়ে এ অবস্থার কারণে আটকে পড়া যানবাহনের যাত্রী ও চালকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। গতকাল বৃহস্পতিবারেও এ যানজট অব্যাহত ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ অংশের হাটিকুমরুল থেকে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া সড়কের চান্দাইকোনা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার এবং হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের সলঙ্গার দবিরগঞ্জ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটিার এবং হাটিকুমরুল-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কের নলকা সেতু পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দের কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ জানান, সেতু অতিক্রম করার পর যানবাহনগুলো নলকা সেতুর পূর্বপাড়ে গিয়ে আটকে যাচ্ছে। এই রেশনিং পদ্ধতির কারণে সেতুর দুপাশে প্রচুর যানবাহন আটকা পড়ছে। এতে যানবাহনগুলো দীর্ঘ লাইন ও ধীরগতিতে চলছে। গতকাল বগুড়া থেকে ঢাকাগামী বাসের যাত্রী আবুল হোসেন বলের, বগুড়া থেকে ঢাকায় আসতে ৫ ঘণ্টা সময় লাগার কথা। সেখানে ১২ ঘণ্টায় তিনি সাভার পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। ওই যাত্রী বলেন, এখন স্বাভাবিক অবস্থায় ১৪ ঘণ্টা লাগলে আসছে ঈদুল আযহায় কি হবে তা সহজেই বোঝা যায়। আরেক যাত্রী আফরোজা আক্তার বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকার কারণে অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। ছেলে- মেয়েরা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল। আগে জানলে ট্রেনে আসতাম। মহাখালী থেকে বগুড়াগামী এক বাসের চালক ফরিদ মোল্লা বলেন, এখন বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে চান্দাইকোনা পৌঁছতে ৭ ঘণ্টা সময় লাগছে। পুরো রাস্তাই খানাখন্দে ভরা। এ কারণে যাত্রীদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, ঈদের আগে পুরো মহাসড়ক মেরামত করা সম্ভব হবে না বলেই মনে হচ্ছে। এতে সামনের ঈদুল আযহায় ঘরমুখি মানুষ সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
শুধু মহাসড়ক নয়, দেশের আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোরও একই দশা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন এই সড়কে চলাচল করা হাজারো গাড়ির যাত্রীরা। ভাঙা সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে সময় নষ্ট, যানজট আর গাড়ি বিকল হওয়ায় ক্ষুব্ধ পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকরা। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের ৭২ কিলোমিটারের অধিকাংশই ভাঙা। অন্যদিকে, মংলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শরীয়তপুর অংশের ৩৭ কিলোমিটার যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খানা-খন্দে ভরা সড়কটির বেহাল দশা ও যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। নিয়মিত দুর্ঘটনার শিকাড় হচ্ছে পণ্যবাহী পরিবহন। একই অবস্থা লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের। খানাখন্দে ভরা মহাসড়কটি বহুদিন ধরেই চলাচলের অযোগ্য হলেও সওজের নজর নেই। সওজ সূত্র জানায়, বর্ষায় ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ সড়ক মহাসড়ক ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। এগুলো মেরামত করতে কতো দিন লাগবে তা কেউ জানে না। আসন্ন ঈদ নিয়ে তাই স্বাভাবিকভাবেই শঙ্কা দেখা দিয়েছে ভুক্তভোগিদের মনে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানজট

১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৯ ডিসেম্বর, ২০২২
২৭ নভেম্বর, ২০২২
২৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ