Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সুরক্ষা চান জেলা প্রশাসকরা

ডিসি সম্মেলনের প্রথম দিন

| প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ডিসি, এডিসি. ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রকৌশলীরা প্রায়ই মামলা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা না করে আইনি সুরক্ষা দেয়ার দাবি করেছেন জেলা প্রশাসকেরা (ডিসি)। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় জেলা পরিষদ, এলজিইডি, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা ও কাজের গুণগত মান আরো বৃদ্ধিকল্পে ডিডিএলজিকে এ সকল প্রকল্পের পরির্দশনের ক্ষমতারও চান।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, গ্রামের মুরুব্বি, নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী, নারী সংগঠক, আনসার-ভিডিপি, গ্রামপুলিশ, এনজিওকর্মীসহ সমাজের সবাইকে সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব তুলে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারি দলের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জেলা প্রশাসকেরা (ডিসি)। স্থানীয় পত্রিকার ডিক্লারেশন প্রদানের ক্ষেত্রে দৈনিক পাক্ষিক, মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিধান রাখার দাবি জানিয়েছেন ডিসিরা।
বিভাগীয় কমিশনার পদটিকে প্রথম গ্রেডে উন্নীত করা এবং জেলা প্রশাসক (উপ-সচিব) পদটিকে যুগ্মসচিব পদে উন্নীত করারও প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। শিক্ষার্থীরা কোচিংনির্ভর হয়ে পড়েছে। কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এর জন্য নীতিমালা সংশোধনের দাবি করেছেন। রংপুর, নাটোর ও বরিশাল জেলায় প্রতিনিয়ত শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। ফলে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য এসব জেলায় গ্যাস সংযোগ দেয়ার প্রস্তাব করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার প্রথম দিনের কার্য অধিবেশন বিকেল সাড়ে ৪টার পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অধিবেশন শুরু হয়। প্রতিটি অধিবেশেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সভাপতিত্ব করেন। প্রথম অধিবেশনে এক ঘণ্টা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রলায়, বিদ্যুৎ ও জালানি মন্ত্রণালয় এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের নির্দিষ্ট প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে ডিসিদের গুরুত্বপুর্ণ নির্দেশনা দেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা। প্রথম অধিবেশনে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডিসিদের আলোচনায় অংশ নেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সচিব শাহ কামাল প্রমুখ। সম্মেলনে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের শেষে ডিসিদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও প্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। এর পরে তৃতীয় অধিবেশনে অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অর্থপ্রতিমন্ত্রী ও সচিব। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মন্ত্রী ও সচিব। এর পরে পরিসংখ্যান তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং পরিকল্পনা বিভাগের মন্ত্রী ও সচিব। চতুর্থ আলোচনায় অংশ নেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রসা শিক্ষা বিভাগের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবরা এবং অধিবেশনে অংশ নেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ও সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। পঞ্চম অধিবেশনে তথ্য মন্ত্রলায়ের বিষয়ে অংশগ্রহণ করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সচিব। একই সঙ্গে সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব এবং শেষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। তারা প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতি জানতে চান এবং মন্ত্রণালয়ের বাধাগুলো নিরসনের দাবি জানান।
নাম প্রকশে অনিচ্ছুক এক জেলা প্রশাসক ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তাবায়নে ডিসি, এডিসি. ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রকৌশলীরা প্রায় মামলা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা না করে নিরাপত্তার চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় জেলা পরিষদ, এলজিইডি, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তাবায়নে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা ও কাজের গুণগত মান আরো বৃদ্ধিকল্পে ডিডিএলজিকে এ সকল প্রকল্পের পরির্দশনের ক্ষমতারও চাওয়া হয়েছে সেখানে প্রধানমন্ত্রী আশস্ত করেছেন। অপর এক ডিসি জানান টিআর কাবিখা প্র্রকল্পে বাস্তবায়নে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। তখন ত্রাণমন্ত্রী জানিয়েছেন, এটি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সবাব জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বড়গুনার ইউএনও বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। সেখানে ডিসিরা অনেক দাবি তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
এর আগে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নাগরিক সেবার মানোন্নয়নসহ মাঠ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবারের জেলা প্রশাসক সম্মেলনের আলোচনায় প্রাধান্য পায়। এর মধ্যে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিসহ সার্বিক বিষয়। জেলা প্রশাসকদের আইনগত, প্রশাসনিক, আর্থিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় কর্মপন্থা এবং সরকারের নীতি ও কর্মসূচি কীভাবে দ্রæত বাস্তবায়ন করা হবে তার কৌশল ঠিক করাও এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য। তিন দিনের এই সম্মেলনে মোট ২২টি অধিবেশন হবে। তার মধ্যে কার্য অধিবেশন ১৮টি। এতে ৩৪৯টি প্রস্তাবনা থাকবে ৫২টি মন্ত্রণালয়, কার্যালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত। সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের দিকনির্দেশনা দেবেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিবরা। আজ বুধবার ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে জেলা প্রশাসকরা প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনে দরবার হলে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে। প্রেসিডেন্ট তাদের দিকনির্দেশনা দেবেন।
ডিসি সম্মেলন ২৩ দফা নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর
গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। মানুষ যেন শহরমুখী না হয়। শহরের ওপর জনসংখ্যার চাপ যাতে না বাড়ে, সে ব্যবস্থা করাসহ ২৩ ডিসি সম্মেলন ২৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৩ দফার মধ্যে আরো বলা হয়েছে, তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। মানুষ যেন শহরমুখী না হয়। শহরের ওপর জনসংখ্যার চাপ যাতে না বাড়ে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে জেলা প্রশাসকদের ব্রতী হতে হবে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমাতে উন্নয়ন কর্মসূচি এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে যাতে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ