Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিইসি আওয়ামী লীগের কাছে নিজের আত্মা বিক্রি করেছেন -রিজভী

| প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আওয়ামী লীগের কাছে নিজের আত্মা বিক্রি করে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। গতকাল (সোমবার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন কয়েকদিন আগে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। এসময় সিইসি বলেছেন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সিইসি’র এমন বক্তব্য আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তেরই প্রকাশ ঘটিয়েছে। সিইসি’র এহেন বার্তায় ভয় পাচ্ছে জনগণ। জনগণের মনে আশঙ্কা-তাহলে আবারো কী ৫ জানুয়ারি স্টাইলে তিনি দেশে ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে যাচ্ছেন? সর্বজনমান্য নির্বাচনের জন্য যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকা দরকার বর্তমানে সে অবস্থা বাংলাদেশে নেই।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগে এ ব্যাপারে তিনি কিছুই করতে পারবেন না। তাহলে তিনি নির্বাচনের দেড় বছর আগেই রোডম্যাপ ঘোষণা করলেন কেন? প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা সরকারি টাকা খরচ করে ভোট চাচ্ছে আর বিএনপিকে ঘরোয়া সভা সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেয়া হচ্ছে না। পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এখন আর আইনের বাহিনী নয়, এদেরকে সরকারি দলের নীলনকশা বাস্তবায়নে লাঠিয়াল হিসেবে তৈরী করা হয়েছে। তাই এরা কোন মনুষ্যত্ব, আইন-কানুন ও জনমতের ধার ধারে না। এরা আশকারা পেয়ে আওয়ামী দু:শাসনকে বিভৎস রূপ দিয়েছে। যার জলন্ত উদাহরণ হচ্ছে তিতুমির কলেজের নিরীহ ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান, যার দুটি চোখ পুলিশের গুলিতে অন্ধ। সুতরাং দলীয় সরকারের অধীনে সরকারের এই বাহিনীগুলো নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে বেপরোয়া হয়ে ওঠবে। এগুলিও নির্বাচনী অসমান মাঠের নমূনা। এই অসমতল মাঠ সমতল করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এই কাজটি তিন মাসে করতে পারা নির্বাচনের কমিশনের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। এই কাজটি এখন থেকেই শুরু হওয়ার কথা। অথচ সিইসি তফশিল ঘোষণার পর সেটি দেখবেন বলেছেন।
সিইসিকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, আপনি (সিইসি) বলেছেন সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপনার কিছুই করার নাই। তারা সরকারি খরচে ভোট চাচ্ছে, নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করছে, কিন্তু আপনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। এমনকি আপনার অধীনে যে নির্বাচনগুলি অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেগুলিও রক্তমাখা। সরকারি প্রার্থীদের প্রতিদ্ব›দ্বী বিরোধী দলের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছে না, জোর করে তাদের মনোনয়ন পত্র কেড়ে নেয়া হয়েছে, তাদের বাড়ীতে গিয়ে হামলা করা হয়েছে এবং সর্বশেষে ভোট ডাকাতির সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে নিজেদেরকে বিজয়ী করছে। জালিমশাহীর হিং¯্র আঁচড়ে জর্জর এদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা। অথচ এমন নির্বাচনকেও আপনি পূর্বের সিইসি’র মতো বলেছেন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয় বিশ্ববাসী বিশ্বাস করে যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। কিন্তু আপনি সেটিরই সাফাই গাইছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আপনার ভূমিকা ইতোমধ্যেই সর্বমহলে সমালোচিত হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কখনোই এমন দল-অনুগত কাজ করতে পারে না। কিন্তু পূর্ব থেকেই আপনি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নিকট আত্মা বিক্রি করে দিয়েছেন। আপনি বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের হাতিয়ার হিসেবেই কাজ করছেন। সুতরাং আপনার অধীনে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদৌ হবে কি না তা নিয়ে জনমনে যথেষ্ট শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিএনপি’র এই সিনিয়র নেতা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ প্রমত্তা পদ্মার মাঝির মতো ঝড়-বাদলের নিত্য সহচর। দুর্বিনীত স্বৈরাচারী হাতের হিং¯্রতা ধেয়ে এলেও তারা অবিচলিত। দু:শাসনের কালোরাত পোহাতে আর বেশী সময় নেই। পরিবর্তনের ঝোড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে। তাইতো ক্ষুব্ধ জনগণের উদ্বেল অভিযাত্রায় প্রবল বন্যার স্রোতে ভেসে যাওয়ার ভয়েই নিজেদের হাতে ক্ষমতা রেখে নির্বাচন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, রাজনীতি করতে সাহস লাগে, মামলা মোকাবেলা করতে হয়। কিন্তু বিএনপি নেতাদের সেই সাহস নেই। তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, কাদের সাহেব আপনাদের যখন এত সাহস, তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। আপনারাইতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন, ঘাতকের বিভৎস তান্ডব চালিয়ে হরতাল অবরোধ করে গাড়ী পুড়িয়েছিলেন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। এখন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে নিজেদের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করেছেন। নিজেদের মর্জ্জি ও প্রয়োজন মাফিক সংবিধান বদল বা সংশোধন করেন, কিন্তু এখন বিএনপিকে সংবিধানের দোহাই দেন। সংবিধানে তো সকল দলের সভা-সমাবেশ করার অধিকার আছে, কিন্তু সাংবিধানিক সেই বিধান তো আপনারা মানছেন না। সভা-সমাবেশের সেই অধিকার তো আপনারা বাকশালী খাঁচায় বন্দী করে রেখেছেন। মূলত: ভয়াবহ দূর্নীতি, দুঃশাসন আর নির্যাতন নিপীড়নের কারণে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আপনারা শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। মাইনাস টু তত্ত¡ মেনে নিয়ে আপনার নেত্রী বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন, এটি কোন ধরণের সাহসের নমুনা? মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন এর সরকার বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বন্দী করে কিভাবে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে তা নিশ্চয়ই কারো অজানা নেই। অন্যায়ভাবে একজনকে নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করা কী সাহসের দৃষ্টান্ত না কাপুরুষের নমুনা? সেই মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারকে বলেছেন আপনাদের আন্দোলনের ফসল। তাদের সকল অন্যায়কে আপনারা বৈধ করে দেবেন বলেছিলেন। আপনারা আপনাদের আন্দোলনের ফসলের রক্তাক্ত জুলুম-নির্যাতনের ধারাবাহিকতা এখনও বজায় রেখেছেন। ১/১১ এর সময় সরকারী নির্যাতনের ভয়ে কে কি বলেছেন তা এখনও জনগণ ভুলে যায়নি। সেই সময় আপনারা আপনাদের নেত্রীকে সকল অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত করে নিজেরা বাঁচার চেষ্টা করেছেন।
রিজভী বলেন, সীমান্তে যখন প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে, তখন তো আপনাদের কোন সাহসী প্রতিবাদ জনগণ দেখেনি। বরং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে নিজেদের দেশের মানুষকে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও খুনের মাধ্যমে শঙ্কা আর শিহরণের ক্ষণে ক্ষণে নৈরাজ্যের ছায়া বিস্তার করে দেশকে বিরোধীদল শুণ্য করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
তিনি সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের হামলা ও গ্রেফতারের নিন্দা জানান। অবিলম্বে ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ