Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবিরাম বর্ষণ ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে ডুবল ভবদহের অর্ধশত গ্রাম

| প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : যশোর ও খুলনার দুঃখ হিসেবে অতিপরিচিত সেই ভবদহের অবস্থা এবারও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দৈনিক ইনকিলাবে গত ১৫জুলাই প্রকাশ হয়েছিল ‘এখনই বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু না হলে বিরাট এলাকা ডুববে’। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা ইকবাল কবীর জাহিদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় দেয়া তথ্যে প্রকাশিত রিপোর্ট সত্য হলো। ডুবে গেলে যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগরের প্রায় অর্ধশত গ্রাম জনপদ।
গত ৫দিনের অবিরাম বর্ষণে ভবদহ এলাকা ছাড়াও যশোরের নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। ভবদহের মতো আরেক দুর্ভোগ কপোতাক্ষ নদ। ভরাট হয়ে প্রতিবারই দুইকুল ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি ঢোকে। ঠিকমতো ড্রেজিং না হওয়ায় পানি সমুদ্রে গড়িয়ে যেতে পারে না। গতকাল কপোতাক্ষ নদের পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে। যে কোন মুহূর্তে নদের দুইপাড়ের লোকালয়ে পানি ঢুকে যেতে পারে। ভবদহ ও কপোতাক্ষ মানবসৃষ্ট দুর্যোগ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
কারণ সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয় অথচ সমস্যার স্থায়ী সামাধান হয় না। টাকা লুটপাট হয়। প্রভাবশালী ঠিকাদাররা কাজ না করে বিল তুলে ভাগবাটোয়ারা করেন এরকম অভিযোগ বিস্তর। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা স্থানীয় জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেয় না কখনো। ভবদহ সংগ্রাম কমিটি ও কপোতাক্ষ নদ বাচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের পরামর্শ না নেয়ায় এবং মাস্টারপ্লান না করায় যুগ যুগ ধরে যশোর, খুলনার ৭টি উপজেলার বিরাট এলাকার বর্ষা মৌসুমে কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ও জীব বৈচিত্রের অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে আসছে। দেখা দেয় মানবিক বিপর্যয়।
সংগ্রাম কমিটি ও স্থানীয় সুত্রগুলো জানায়, ভবদহের শ্রীনদী, ভদ্রা ও টেকা নদীতে অবিরাম ভারি বর্ষণে পানি বেড়ে আশেপাশের গ্রামের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ¯্রােতের মতো পানি ঢুকছে কেশবপুর শহরে। অভয়নগর ও মণিরামপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষি জমি বাড়িঘর তলিয়ে মারাত্মক দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। পানিবন্দি মানুষের কষ্ট এতটাই বেড়েছে যে খবর নিতে গেলে তারা আর দুঃখ কষ্টের কথা বলেন না। বলেন আমাদের অভিশাপের অবসান হলো না। প্রতিটি বর্ষ্য়া আমরা ডুবে যাই আর সরকারের টাকা নিয়ে পেট মোটা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদাররা। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, ভবদহে ঈদের আগে থেকেই কাজ বন্ধ। দুটি উভোচর স্ক্যাভেটর নষ্ট। আমরা বলেছিলাম ভরা বর্ষার আগেই বিল কপালিয়ায় টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালু না হলে ক্ষতি হবে। কর্ণপাত করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। কোন কোন কর্মকর্তার আন্তরিকতার বড়ই অভাব। কেশবপুর ইপজেলা চেয়ারম্যান এইচএস আমির হোসেন জানান, সময়মতো ব্যবস্থা না নেয়ায় কেশবপুর পৌরসভার সিংহভাগ এলাকায় বুড়ি ভদ্রা ও হরিহর নদীর পানি ঢুকেছে। তিনি পানিবদ্ধ এলাকার ছবি তুলে সেখানকার পরিস্থিতি বর্ণনা করেন। বলেন পানিবন্দি মানুষ খুবই কষ্টে দিনযাপন করছেন।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, স্ক্যাভেটর মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে। আগে কেন করা হয়নি এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে মোট ৭টি উভচর স্ক্যাভেটর আছে। সেগুলো অন্য এলাকায় কাজে রয়েছে। টিঅরএম চালুর ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রকল্প পাস হতে দেরী হওয়ায় বর্ষার আগে কাজ করা সম্ভ হয়নি। এর মধ্যে আমবস্যায় সমুদ্র উত্তাল ও লঘুচাপ হওয়ায় পানি বেড়ে সমস্যা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ