পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : চলতি বছরের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় কমেছে পাসের হার, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। সার্বিকভাবে ১০টি বোর্ডের গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। বরিশাল ছাড়া সব শিক্ষা বোর্ডেই পাসের হার আগের বছরের তুলনায় কমে গেছে। তবে সবচেয়ে বিপর্যয় ঘটেছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে। বিগত ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল হয়ে এই বোর্ডে। গড় পাসের হার মাত্র ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে এই বোর্ডের মানবিক বিভাগের ফলাফল। কুমিল্লার মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের গড় পাসের হার ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর সার্বিক ফলাফলে অন্য দুটি বিভাগ বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার চেয়ে মানবিক বিভাগের ফলে বেশ বিপর্যয় লক্ষ্য করা গেছে। আটটি সাধারণ বোর্ডের বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৮৩ দশমিক ১৪ শতাংশ, ব্যবসায় শিক্ষার ৬৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৫৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। একইভাবে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাসের গড় ৮৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং সাধারণ (মানবিক) বিভাগের ৭৬ দশমিক ২৩ শতাংশ।
ফল প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ফল বিপর্যয়ের পেছনে উত্তরপত্র মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, গুণগত মানের শিক্ষা অর্জনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় উত্তরপত্র মূল্যায়নের নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। আগে একজন পরীক্ষক ইচ্ছেমতো নম্বর দিত। এরফলে একজন ভাল ছাত্র কম নম্বর এবং খারাপ ছাত্র বেশি নম্বর পেতো। কিন্তু এই নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষকদের মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রধান পরীক্ষক খাতা মূল্যায়ন করতে বাধ্য। এছাড়া বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে সব প্রশ্নের একটি আদর্শ উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়। যেটিকে ধরেই নম্বর দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে সব শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়নে একটি নায্যতা আসে। এই নতুন পদ্ধতিতে এবার শিক্ষার্থীদের ফল বিপর্যয় হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। তবে মানবিক বিভাগের ফল বিপর্যয়ের পেছনে আবার ইংরেজিতে খারাপ করাকেই মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। কুমিল্লা বোর্ডের ফল বিপর্যয়ের পেছনে ইংরেজিতে খারাপ করাকেই মনে করছেন এই বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা। একইভাবে বিপর্যয় না হলেও যশোর বোর্ডের ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। রাজশাহী বোর্ডে ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ একই বিষয়ে। কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল খালেক বলেন, প্রাথমিকভাবে তাঁরা মনে করছেন, ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা খারাপ করায় ফল খারাপ হয়ে থাকতে পারে। তাঁরা এটি মূল্যায়ন করে দেখবেন।
ফলাফলে দেখা যায়, পাসের হারে সবার শীর্ষে আছে সিলেট বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৭২ শতাংশ। অন্যান্য বোর্ডের মধ্যে পাসের হার ঢাকা বোর্ডে ৬৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৭১ দশমিক ৩০ শতাংশ, যশোরে ৭০ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৬১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, বরিশালে ৭০ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৬৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ইংরেজির কারণেই যশোর বোর্ডের পাসের হার কমেছে। এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে পাস করতে পারেননি। যে কারণে গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয় কমে গেছে। যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধবচন্দ্র রুদ্র বলেন, ‘এ বছর ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বেশি খারাপ করেছে। অন্যান্য বছর যেখানে ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার থাকে ৯০ শতাংশের ওপরে। এবার সেখানে মাত্র ৭২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। যে কারণে সামগ্রিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে। একই সঙ্গে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীরা পদার্থ ও উচ্চতর গণিত বিষয়ে ভালো করতে পারেনি। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বিষয়ে ভালো করলেও এ দুটি বিষয়ে ধরা খেয়েছে। এ কারণে জিপিএ-৫-এর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে।’ যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, জিপিএ-৪ থেকে জিপিএ-৫-এর মাঝখানে অবস্থান করছে ৩১৯ জন শিক্ষার্থী। এরা সবাই জিপিএ-৫ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা উচ্চতর গণিত ও পদার্থবিদ্যা এবং মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে খারাপ করেছে। যে কারণে সবদিক দিয়ে জিপিএ-৫-এর সংখ্যা কমে গেছে। তিনি বলেন, এ বছর থেকে কোচিং-প্রাইভেট নয়; পাঠদান কার্যকর করার বিষয়ে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া যে বিষয়ে শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছে, সে বিষয়ের সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে ডেকে জবাব চাওয়া হবে। যশোর শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা প্রতিবছরই ইংরেজিতে খারাপ করছে। সমস্যাটা কোথায় শিক্ষা কারিকুলামে নাকি কার্যকর পাঠদানে বিষয়টি এনসিটিবি কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখা দরকার।’ রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এবার এইচএসসিতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমার পেছনে খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনের পাশাপাশি ইংরেজিতে বাজে ফলের প্রভাব দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তরুণ কুমার সরকার বলেন, এবার রাজশাহী বোর্ডে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে ইংরেজি বিষয়ে। সব বোর্ড মিলিয়ে যেখানে ইংরেজিতে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ, সেখানে রাজশাহী বোর্ডে ইংরেজিতে পাস করেছে ৭৪ দশমিক ৭১ শতাংশ পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, গতবার এ বোর্ডে এক বিষয়ে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ১১৩ জন। কিন্তু এবারে তা বেড়ে ২৭ হাজার ৪৬১ জন হয়েছে। একটি বিষয়ে অকৃতকার্যের হার ২০১৬ সালে ১৪ দশমিক ৭৮ ভাগ ছিল; এবার তা বেড়ে ২২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হয়েছে।
ইংরেজিতে ফেলের কারণে কুমিল্লা বোর্ডে ফল বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করছেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা। ফল বিপর্যয় প্রসঙ্গে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মমিনুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ইংরেজিতে শিক্ষকের অভাব। যাঁরা আসেন, তাঁদের মান অত্যন্ত নিম্ন। শিক্ষকতাকে এখন পেশা হিসেবে দেখা হয় না। কোচিং, প্রাইভেট-বাণিজ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। যে কারণে ফল তলানিতে ঠেকেছে। এ ছাড়া বোর্ডের বর্তমান ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত দুর্বল। তারা উদ্যোগ নিলে কলেজগুলোতে পড়াশোনার পাশাপাশি ফলাফল ভালো হতো। সব মিলিয়ে জিপিএর কারণে উচ্চশিক্ষায় কুমিল্লার সন্তানেরা পিছিয়ে পড়বে।’ বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই বোর্ডে ইংরেজিতে ফেল প্রায় ৩৮ শতাংশ। এ বছর ইংরেজিতে ১ লাখ ৩৮১ জন পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে ৩৮ হাজার ৮৩ জন। পাস করেছেন ৬২ হাজার ২৯৮ জন। পাসের হার ৬২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ফেল করেছেন ৩৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ বলেন, ‘ইংরেজিতে ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ আরও ৪০টি বিষয়ে কমবেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এতে করে সার্বিক পাসের হারের ওপর প্রভাব পড়েছে। যে কারণে অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার কম। কুমিল্লা বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, বোর্ডের আওতায় শহরের কলেজ ছাড়া মফস্বল পর্যায়ে অধিকাংশ কলেজে দক্ষ ও ভালো মানের শিক্ষক সংকট রয়েছে। এ কারণে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় ৩০ শতাংশের মতো ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মানবিক ও বিজ্ঞান বিভাগের ফলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।