Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সিটি নির্বাচন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গুরুত্ব পাবে

কাল ডিসি সম্মেলন শুরু

| প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এবার ৩৫০ প্রস্তাব মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের
পঞ্চায়েত হাবিব : আগামী মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্মেলন। আওয়ামী লীগের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে এই সম্মেলন। এই সরকারের মেয়াদে আর মাত্র একটি ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছরই ঘটা করে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের সুপারিশ করা হয়। এসব সমস্যার আলোকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এবারের ডিসি সম্মেলনে সা¤প্রতিক সময়ে সারাদেশে ঘূর্ণিঝড় মোরা, বন্যা, বাঁধ ভাঙন এবং পাহাড়ধস এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বেশ কিছু আলোচিত বিষয় থাকছে। সরকারি নথিতে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৯১ শতাংশের বেশি হলেও বাস্তবের চিত্র উল্টো। সিদ্ধান্তগুলোর বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয় না বলে জানিয়েছেন একাধিক জেলা প্রশাসক। এমনকি বছরের পর বছর উপস্থাপনের পরও কোনো কোনো সমস্যার সমাধান হয় না।
গত বছর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছিল দীর্ঘদিন যাবৎ অব্যবহৃত ও অরক্ষিত রেলের জমি জাতীয় স্বার্থে ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। গ্রামপুলিশের থানায় হাজিরার জন্য যাতায়াত ও দৈনিক ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ করতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর হার অর্ধেকে কমিয়ে আনতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান সংরক্ষণ, সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন সঙ্কট দূরীকরণ, যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপন না করা, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা উত্থাপন করা হয়। এসব সমস্যা নিরসনে নেয়া হয় নানা সিদ্ধান্ত। কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি বলে এবারের সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে স্থান পেয়েছে পুরনো এই সমস্যাগুলো। ডিসি সম্মেলন সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অগ্রগতি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসকদের অনেকেই জেলার অবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে মন্ত্রণালয়কে জানাচ্ছেন না। বিভিন্ন জেলায় বন্যার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক দেরিতে জানিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ধসের ঘটনার ক্ষেত্রেও একই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ মহল সার্বিক অবস্থার চিত্র পেয়েছে অনেক দেরিতে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় সফলভাবে মোকাবেলা হয়েছে তা সরকারকে আগে থেকে বিভিন্ন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকরা জানিয়েছেন। কিন্তু কিশোরগঞ্জ ও সিলেটে আগাম বন্যায় বাঁধ ভাঙার ঘটনায় সরকারের ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। সেখানে ডিসিরা তেমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেননি। এসব ঘটনায় সার্বক্ষণিক যে মনিটরিং ব্যবস্থা থাকার কথা তাতেও দুর্বলতা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সা¤প্রতিক সময়ের এসব ঘটনা এই সম্মেলনে গুরুত্ব পাবে। এবারের জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব পাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিস্তারিত জানাবেন ডিসিরা। আওয়ামী লীগের শেষ সময়ে এসে কয়েকটি সিটি নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও থাকছে বিশেষ নির্দেশনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় তার কার্যালয়ের ‘শাপলা’ হলে এ সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। তিন দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা ১৮টি কার্য অধিবেশনে ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব, বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। জেলা প্রশাসকদের বক্তব্যও শুনবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশাসনের গতিশীলতা আনতে এবং তৎপরতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেবেন। একটি সুপারিশমালাও থাকছে এবারের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে।
এবারের জেলা প্রশাসক সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামী মঙ্গলবার, শেষ হবে শুক্রবার। চার দিনের এই জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২২টি অধিবেশনে সাজানো হয়েছে। এবারের সম্মেলনে ৩৫০টি প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। সম্মেলনে এসব বিষয়ের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এসব বিষয়ে আগামী সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মন্ত্রিপরিষদ অতিরিক্ত সচিব মো: মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে আগামী মঙ্গলবার সকাল ১০টায় এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। অতিরিক্ত সচিব জানান, জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মোট অধিবেশন থাকছে ২২টি। এর মধ্যে কার্য-অধিবেশন হবে ১৮টি। এই ১৮টি কার্য-অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ মোট অংশ নেবে ৫২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।
তিনি বলেন, এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বরগুনা জেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে গ্রেফতারের ঘটনা এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা গুরুত্ব পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ডিসিদের চিঠি পাঠিয়ে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব বলেন, মাঠ প্রশাসনের একটি বড় সম্মেলন হচ্ছে জেলা প্রশাসক সম্মেলন। প্রতি বছরের এই সম্মেলন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এ সম্মেলনে ডিসিরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন এবং প্রতিটি জেলার বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে পারেন। জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব বলেন, প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করার পর সংক্ষিপ্ত বিচারসহ ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) অন্তত পাঁচটি ধারার ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। সে বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগ সেশনে আলোচনা হতে পারে।
প্রথম দিন ২৫ জুলাই
মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করবী হলে বিভিন্ন বিষয়ে মুক্ত আলোচনা করবেন জেলা প্রশাসকেরা। ১২টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টাইগারসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডিসিদের ফটোসেশন।
প্রথম অধিবেশনের পর প্রথম আলোচনায় এবার স্থান পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সবার জন্য গৃহ কর্মসূচিসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগগুলো। দ্বিতীয় আলোচনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তৃতীয় আলোচনায় অর্থ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ এবং বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ। চতুর্থ আলোচনায় থাকছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পঞ্চম আলোচনায় থাকছে তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
দ্বিতীয় দিন ২৬ জুলাই
দ্বিতীয় দিন ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে ৮টি অধিবেশন। প্রথম আলোচনায় স্থান পেয়েছে বেসাময়িক বিমান পরিবহন ও পযর্টন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণলায় এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় আলোচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তৃতীয় আলোচনায় স্থান পেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। চতুর্থ আলোচনায় রয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পঞ্চম আলোচনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ষষ্ঠ আলোচনায় রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সপ্তম আলোচনায় রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সেতু বিভাগ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়। অষ্টম আলোচনায় স্থান পেয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের সাঙ্গে বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করবেন ডিসিরা।
তৃতীয় দিন ২৭ জুলাই
২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে ছয়টি অধিবেশন। প্রথম আলোচনায় স্থান পেয়েছে ভুমি মন্ত্রণালয়, দ্বিতীয় আলোচনায় স্থান পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। তৃতীয় অধিবেশনে স্থান পেয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ সংসদ বিষয়ক বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। চতুর্থ আলোচনায় স্থান পেয়েছে জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ। পঞ্চম আলোচনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি নির্বাচন

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ