পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সৃজনশীল ও ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় ও জেলাপর্যায়ে জনপ্রশাসন পদক-২০১৭ প্রদান করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে উৎসাহ প্রদানের জন্য দেশে দ্বিতীয়বারের মতো প্রবর্তিত জনপ্রশাসন পদক ২০১৭’ বিতরণ অনুষ্ঠান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করা এবং আমলাতান্ত্রিক মনোভাব ত্যাগ করে জনগণের খাদেম হিসেবে কাজ করার জন্য সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি আহŸান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় আসার পর তার সরকারে বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল এবং এটা যেন অব্যাহত থাকে। আজকে বাংলাদেশকে আর কেউ করুণার চোখে দেখে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমিত সম্পদ দিয়ে ছোট ভূখÐে এত বিশাল জনগোষ্ঠীর ভাগ্য যে পরিবর্তন করতে পারি সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।
এসময় তিনি ভিক্ষুকমুক্ত করতে খুলনা জেলা প্রশাসক সেখানকার সরকারি চাকরিজীবীদের একদিনের বেতন দিয়ে যে তহবিল গঠন করেছেন তার প্রশংসা করেন। এ ধরনের উদ্ভাবনী উদ্যোগে তার ত্রাণ তহবিল থেকে সহায়তা দেয়া হবে। উদ্ভাবনী চিন্তা ও জনকল্যাণের জন্য জনপ্রশাসন পদক পাওয়া সরকারি কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সচেষ্ট এবং সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পদোন্নতি থেকে শুরু করে সবরকম পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। তার সরকারের আমলে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করা এবং আমলাতান্ত্রিক মনোভাব ত্যাগ করে জনগণের খাদেম হিসেবে কাজ করতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমিও প্রথম সরকার গঠন করেই ঘোষণা দিয়েছিলাম জনগণের সেবক অর্থাৎ খাদেম। রাষ্ট্রপরিচালনার মূল লক্ষ্য ও ক্ষমতার অর্জনের একমাত্র লক্ষ্য যে, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, মানুষের জীবন-মান উন্নত করা এবং যে লক্ষ্য নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন, সেটা সমুন্নত রেখে দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দান করা।
জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সৃজনশীল ও ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় ও জেলাপর্যায়ে জনপ্রশাসন পদক-২০১৭ প্রদান করা হয়। জেলাপর্যায়ে পদকপ্রাপ্তরা হলেন : সাধারণ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত শ্রেণিতে জনপ্রশাসন পদক পয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব নাজমুল আহসান। নারী উন্নয়নে অবদানের জন্য তিনি জনপ্রশাসন পদক-২০১৭ পেয়েছে। এর আগে তিনি খুলনা জেলা প্রশাসক ছিলেন। কমিউনিটি বেজড কালচারাল ইকো ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে অবদান রাখায় খুলনা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম। এর আগে তিনি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ইউএনও ছিলেন। সাঁতার শিখুন, জীবনের জন্য সাঁতার প্রকল্পের জন্য পদক পেয়েছেন যশোর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কেএম মামুন উজ্জামান।
সাধারণ শ্রেণীর দলগত পদক পান চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মন্ডল। তার সঙ্গে পান ৬ জন এরা হলেন, মোহাম্মদ আব্দুল হাই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ড. এ এস এম দেলওয়ার হোসেন অধ্যক্ষ চাঁদপুর সরকারি কলেজ, মো; মাসুদ হোসেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, মো: শফিকুর রহমান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এবয় কানিজ ফাতেমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সদর চাঁদপুর।
প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বৃদ্ধি ও খাবার বড়ি ড্রপ আউটের হার কমানোর ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য পদক পেয়েছেন কুষ্টিয়া জেলার সদর উপজেলার পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাসিমা ইয়াসমিন। সবুজ তারাগঞ্জ গুঁড়ি প্রকল্পের জন্য জনপ্রশাসন পদক পান রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মোছা. জিলুফা সুলতানা। মরিপুর চা বাগানে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে শিক্ষা কার্যক্রম চালুকরণের জন্য পদক পান সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ইউএনও হরে জান্নাত। জেলাপর্যায়ের সাধারণ ক্ষেত্রে দলগত শ্রেণিতে জনপ্রশাসন পদক-২০১৭ পেয়েছে টাঙ্গাইল জেলার একটি গ্রæপকে। টাঙ্গাইল জেলার লৌহজং নদী পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এবং ডিসি লেক ও ডিসি লেক শিশুপার্কের কাজে অবদান রাখার জন্য দলগতভাবে পদক প্রদান করা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বের এই গ্রæপকে। টাঙ্গাইল জেলার জেলা প্রশাসক ছিলেন। এই গ্রæপের সদস্যরা হলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুরিনা সুলতানা। এর আগে তিনি টাঙ্গাইল জেলার সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ছিলেন। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের সিনিয়র সহকারী কমিশনার সানোয়ারুল হক। এর আগে তিনি টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছিলেন। টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আবদুর রহিম সুজনও এই গ্রæপের সদস্য।
অবহেলিত হিজড়া জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ প্রদান ও স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য দলগতভাবে জনপ্রশাসন পদক-২০১৭ পেয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি প্রতিনিধি দল। এই দলের দলনেতা হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ইউএনও জান্নাতুল ফেরদৌসকে। দলের সদস্যরা হলেন- যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নাজমা বেগম, সদর উপজেলার মহিলা-বিষয়ক কর্মকর্তা শরিফা বেগম ও সদর উপজেলার সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ।
এ ছাড়া অপরাজিত যশোরের (যশোর জেলার নির্যাতিত নারী শিশুদের জন্য আইনী সহায়তা প্রকল্পের) জন্য পদক পেয়েছেন যশোর জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক ড. মো. হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম। বিকল্প কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে ভিক্ষুকমুক্ত নড়াইল জেলা গঠনের অবদানের জন্য এবার জনপ্রশাসন পদক পান রাজশাহী জেলার জেলা প্রশাসক ও নড়াইল জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি গ্রæপ। তবে জেলাপর্যায়ে এবার সাধারণ (প্রাতিষ্ঠানিক) কারিগরি (ব্যক্তিগত) ও কারিগরি (প্রাতিষ্ঠানিক) ক্যাটাগরিতে কোনো মনোনয়ন প্রদান করা হয়নি। এ ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে ১১ কর্মকর্তা ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রশাসন পদক ২০১৭ প্রদান হয়। জাতীয় পর্যায়ে পদকপ্রাপ্তরা নিজের নামের সঙ্গে পিএএ (পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যাওয়ার্ডি) লিখতে পারবেন। জাতীয় পর্যায়ে তিন ক্যাটাগরির পুরস্কারপ্রাপ্তরা ১৮ ক্যারেট মানের এক ভরি ওজনের স্বর্ণপদক এবং সনদ দেয়া হবে। এর বাইরে জাতীয় পর্যায়ে ব্যক্তি শ্রেণিতে জনপ্রতি এক লাখ টাকা এবং দলগত অবদানের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা দেয়া হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণিতে শুধু পদক ও সম্মাননাপত্র প্রদান করা হবে। জেলাপর্যায়ে ব্যক্তি শ্রেণিতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা সনদ ও ৫০ হাজার টাকা এবং দলগত শ্রেণিতে বিজয়ীদের সনদের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দেয়া হবে।
জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান আরও বক্তব্য দেন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম, জনপ্রশাসন সচিব মোজাম্মেল হক খান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।